দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে শনিবার বিকালে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ঢাকায় সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী সংহতি সম্মিলনীর উদ্যোগে দলের নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে এই আলোচনা সভা হয়।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানী থেকে গাড়ি চালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। বিএনপির অভিযোগ সরকার তাকে ‘গুম’ করেছে।
আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব বর্তমান সরকারকে করোনাভাইরাসের সঙ্গেও তুলনা করেন। তার মতে, উভয়ই ‘দানবে’ রূপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘‘আজকে দুইটা দানবের হাতে আমরা পড়েছি। একটা দানব হচ্ছে- আমাদের এই সরকার, যারা আজকে অন্যদেশের স্বার্থ হাসিল করছে। আরেকটা দানব হচ্ছে- করোনাভাইরাস, সেটা আমাদেরকে …, শুধু আমাদেরকে কেন, গোটা বিশ্বকে আক্রান্ত করছে।”
এত কঠিন সময় এদেশের মানুষ কখনো অতিক্রম করেনি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “আজকে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে একটা ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছে। বাংলাদেশকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিভাবে তার স্বাধীনতা-সারভৌমত্বকে হরণ করে নিয়ে, গণতন্ত্রবিহীন করে দিয়ে এখানে জনগণের অধিকারগুলোকে কেড়ে নেয়া হচ্ছে।”
এর মধ্যে দলকে ও সংগঠনকে টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি শক্তিশালী করার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন,”এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়ের নেতৃত্ব পাচ্ছি। সব নেতাকে ঐক্যবদ্ধ রেখে কাজ করতে পারছি এবং বাংলাদেশের জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। এত অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়নের পরেও এখন পর্যন্ত বিএনপি থেকে কেউ চলে যায়নি।“
দেশের এমন সংকটময় মুহূর্তে ইলিয়াস আলীর মতো সাহসী নেতার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “ইলিয়াস আলী আমাদের জন্য প্রেরণা”। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই নিখোঁজ হওয়া, গুম করে দেয়ার ঘটনা ইলিয়াস আলীকে দিয়ে শুরু হয়েছে এবং এটা করেই প্রথমে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী যে শক্তি সেই শক্তিকে দুর্বল করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা সত্য কথা যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে পক্ষে যারা কথা বলে, বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব নিয়ে যারা কখা বলেন তাদেরকে আজকে অত্যন্ত সচেতনভাবে, পরিকল্পিতভাবে শূণ্য করে দেয়া হচ্ছে, নিখোঁজ করে দেয়া হচ্ছে অথবা আটকিয়ে রাখা হচ্ছে।”
“আমি একটুকু বলতে চাই, আমরা কখনো নিরাশ হব না। আমরা জানি, ইলিয়াস আলী আমাদের মাঝে ফিরে আসবে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের অন্যান্য ছেলে যারা হারিয়ে গেছে, নিখোঁজ হয়েছে তারাও ফিরে আসবে। যদি তারা ফিরে না আসে কিন্তু তাদের এই চলে যাওয়া বা নিখোঁজ হওয়ার মধ্য দিয়ে যে শক্তি সঞ্চয় করবে বাংলাদেশের মানুষ- আমাদের তরুণ প্রজন্ম, ভবিষ্যতের প্রজন্ম তারা নিসন্দেহে বাংলাদেশকে একটা মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে পরিণত করতে সক্ষম হবে এবং এটা অবশ্যই আমরা পারব।”
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় নির্বাসিত করে রাখাসহ ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সরকার ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ভার্চুয়াল সভায় ইলিয়াস আলীসহ বিভিন্ন নেতা ও কর্মীর নিখোঁজ ও ‘গুম’ এর সঙ্গে জড়িতরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব চায় না বলে অভিযোগ করেন।
জাতীয়তাবাদী যুব দলের সাবেক সহ-সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, জহিরউদ্দিন স্বপন, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল এবং নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা বক্তব্য দেন।