ক্যাটাগরি

কোভিড-১৯: লকডাউনের ‘কড়াকড়িতে’ এক মাসের সর্বনিম্ন পরীক্ষা

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বাত্মক লকডাউনে বিধিনিষেধের মধ্যে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় উপসর্গ থাকলেও অনেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারছেন না। এছাড়া বিদেশগামীদের সংখ্যা কমে যাওয়াতেও পরীক্ষা কমেছে কিছুটা।

শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এদিন দেশজুড়ে ১৮ হাজার ৯০৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যা ১৫ মার্চের পর সব চেয়ে কম।

ওই দিন ১৮ হাজার ৬৯৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এরপর থেকে দৈনিক পরীক্ষা বেড়ে ১২ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৩৪ হাজার ৯৬৮ হয়।

১৪ এপ্রিল সর্বাত্মক লকডাউন শুরুর পর বৃহস্পতিবার থেকে নমুনা পরীক্ষা আবার কমে ১৯ হাজারে নেমে আসে।

শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২৫৫টি ল্যাবে ১৮ হাজার ৯০৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “আমার এখানে যারা নমুনা পরীক্ষা করায় তাদের বড় অংশ বিদেশগামী। লকডাউনের আগে দৈনিক দুই থেকে আড়াইহাজার পরীক্ষা হতো। এখন হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২শর মত।“

 “লকডাউনের কারণে অনেকেই কেন্দ্রে আসছে না, নমুনা পরীক্ষা কমার এটাও একটা কারণ।”

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, “মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না, নমুনা পরীক্ষা করবে কীভাবে? এছাড়া সব ফ্লাইটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও এনসিডিসির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আরটিপিসিআর, জিন এক্সপার্ট ও অ্যান্টিজেন টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোয় মোট নমুনা পরীক্ষা সংখ্যা বেড়েছিল। তবে লকডাউনের কারণে অনেকেই বাসা থেকে বের না হওয়ায় পরীক্ষা কমে যাচ্ছে।

“আগে লক্ষণ উপসর্গ দেখা দিলে ফিভার ক্লিনিকে বা অন্য জায়গায় গেলে টেস্ট দিত। এখন অনেকেই বাসায় থাকছেন। টেলিফোনের মাধ্যসে সেবা নিচ্ছেন-এসব মিলিয়ে টেস্টের সংখ্যা কমেছে।”

তিনি বলেন, নমুনা পরীক্ষা কমায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে। কিন্তু সংক্রমণের হার এখনও বেশি।

“আজও সংক্রমণের হার বেশি। এ কারণে ধরে নিতে হবে আগের যে ইম্প্যাক্ট ছিল তা এখনও রয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, নমুনা যত বেশি পরীক্ষা করবে, মহামারী মোকাবেলায় তা ততটা কাজে আসবে।

“বেশি সংক্রমণ চিহ্নিত হলে তাকে আইসোলেশন করা যাবে। তার কন্টাক্টে যারা আছে তাদের কোয়ারেন্টিন করা যাবে। এটা করলে সংক্রমণের চেইন এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে।”

গত ১ মার্চ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রায় দেড়মাস ধরে নমুনা পরীক্ষা ক্রমাগত বেড়েছে। এক পর্যায়ে ৪ এপ্রিলের পর থেকে দৈনিক নমুনা পরীক্ষা ৩০ হাজারের বেশি হয়। ১২ এপ্রিল একদিনেই সর্বোচ্চ ৩৪ হাজার ৯৬৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।

এরপর লকডাউনের কড়াকড়ি শুরু হলে নমুনা পরীক্ষা কমতে থাকে। গত দুদিন আগের কয়েকদিনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক পরীক্ষা হয়েছে। শুক্রবার ১৮ হাজার ৯০৬টি এবং বৃহস্পতিবার ১৯ হাজার ৯৫৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়।

দেশে কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় ২১ জানুয়ারি। ৮ মার্চ প্রথমবারের মত তিনজনের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানায় সরকার।

এরপর গত বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়তে থাকে। নভেম্বরের পর সংক্রমণ কমতে থাকলে পরীক্ষাও কমে।

শুক্রবার পর্যন্ত সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি ১২১টি আরটিপিসিআর, ৩৪টি জিন এক্সপার্ট এবং ১০২টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষাগার মিলিয়ে ২৫৭টি গবেষণাগারে পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৮টি নমুনা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে দেখা গেছে, মার্চের প্রথম সপ্তাহে ১ থেকে ৭ মার্চ ১ লাখ ২ হাজার ১৭৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ সময় দৈনিক গড়ে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৯৭টি।

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৮ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৪৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এ সময় দৈনিক গড়ে ১৬ হাজার ৯০৭টি পরীক্ষা হয়েছে।

মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে ২০ হাজার ৬৫৩ দৈনিক হিসাবে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬৮টি, চতুর্থ সপ্তাহে ২২ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭১১টি, যা দৈনিক ২৫ হাজার ৬৭৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।

২৯ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাতদিনে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫৫৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, দৈনিক গড়ে যা ২৭ হাজার ৭৯৪টি নমুনা।

সবচেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। এই এক সপ্তাহে ২ লাখ ১৯ হাজার ৪৮০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, যা গড়ে দৈনিক ৩১ হাজার ৩৫৪টি।

আর ১২ এপ্রিল থেকে গত ৫ দিনে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬১৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, যা দৈনিক গড়ে ২৬ হাজার ৩২৩টি।