কবরীর ছেলে শাকের চিশতী
শনিবার সকাল ১১টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শনিবার জোহরের পর বনানী
কবরস্থানে জানাজা এবং ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার পর আম্মাকে সমাহিত করা হবে।”
কবরীর
মরদেহ সকালে হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দাফন প্রক্রিয়ার আগ পর্যন্ত মরদেহ
সেখানেই রাখা হবে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত
হয়ে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়
শুক্রবার রাতে মৃত্যু হয়েছে কবরীর।
কবরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি
মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক জানিয়েছেন।
এছাড়া শোক জানিয়েছেন ডেপুটি স্পিকার
মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী
এবং বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের।
উত্তাল একাত্তরে বাঙালির
মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে ভারতের বড় বড় শহরে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এ অভিনেত্রীর
মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত শতকের ষাটের দশকে
সেলুলয়েডের পর্দায় আবির্ভূত হয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে হিসেবে দর্শক হৃদয়ে
স্থায়ী আসন করে নেওয়া কবরী পরের অর্ধশতকে দুই শতাধিক সিনেমায় আলো ছড়িয়েছেন। শীর্ষ পাঁচ
ঢাকাই নায়কের অভিষেক ঘটেছে তার হাত ধরেই।
১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্ম নেওয়া মিনা পালের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি
বাজারে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রে অভিষেকের মধ্য
দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন কবরী।
‘নীল আকাশের নিচে’,
‘ময়নামতি’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’, ‘পরিচয়’, ‘অধিকার’, ‘বেঈমান’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘সোনালী
আকাশ’, ‘অনির্বাণ’, ‘দীপ নেভে নাই’সহ অর্ধশতাধিক সিনেমার এই জুটিকে পরে ‘আমাদের সন্তান’
চলচ্চিত্রে বয়স্ক বাবা-মায়ের ভূমিকাতেও দর্শকরা দেখেছেন।
১৯৭৩ সালে ‘রংবাজ’
সিনেমায় দর্শক এক লাস্যময়ী কবরীকে আবিষ্কার করে। সেই চলচ্চিত্রের ‘সে যে কেন এল না,
কিছু ভালো লাগে না’ গানটি এখনও বহু দর্শকের বুকে বাজে।
‘সাত ভাই চম্পা’,
‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, কিংবা পরে ‘সুজন সখী’, ‘স্মৃতিটুকু
থাক’, ‘সারেং বউ’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সিনেমায় পর্দা মাতানো কবরীর ভাষায়, “জীবন
হচ্ছে একটি চলচ্চিত্র। জীবন কিন্তু স্থিরচিত্র নয়।”
তারুণ্যের সেই দিনগুলোতেই
এল বাঙালির ইতিহাস বদলে দেওয়া একাত্তর। অভিনেত্রী কবরী কলকাতায় গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে
জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সেখানে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতার
পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। পরে দেশে ফিরে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন
সিনেমায়।
২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে গণসংযোগ করেন তখনকার
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী।
সেলুলয়েডের সেই রঙিন
জীবন শেষে কবরীর পরের জীবন-চলচ্চিত্রও কম বর্ণময় ছিল না। রাজনীতিতে নেমে জীবনের আরেক
চলচ্চিত্রের মুখোমুখি তাকে হতে হয়েছিল বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে।
এক সময় নারায়ণগঞ্জের
প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের বধূ কবরীকে ভোটের মাঠে সেই নারায়ণগঞ্জেই নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার
মুখোমুখি হতে হয়েছিল। সব জয় করেই নবম সংসদে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ হয়েছিলেন
তিনি।
২০০৬ সালে মুক্তি পায়
কবরীর পরিচালার প্রথম চলচ্চিত্র ‘আয়না’। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবেও
যোগ দিয়েছিলেন।
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে
সরকারি অনুদানে ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন
তিনি। সে কাজ আর তার শেষ হল না।