রোববার বিকালে শাহজাহানপুরে নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই অভিযোগ করেন।
সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী সংহতি সম্মেলনীর উদ্যোগে শনিবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি ইলিয়াস আলী ‘গুমের’ সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা সরকার জড়িত নয় বলে মন্তব্য করেন এবং এর পেছনে দলের কারো সংশ্লিষ্টতার
ইঙ্গিত দেন।
কারো নাম উল্লেখ না করে মির্জা
আব্বাস বলেছিলেন, “ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে দলীয় অফিসে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বাকবিতন্ডা হয় মারাত্মক রকমের। ইলিয়াস তাদের খুব গালিগালাজ করেছিল। সেই যে পেছন থেকে দংশন করা সাপগুলো আমাদের দলে এখনো রয়ে গেছে।”
ভার্চুয়াল ওই আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বক্তব্য
দেন।
বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ্যে করে মির্জা আব্বাস আরও বলেন, “যদি এদেরকে দল থেকে বিতাড়িত না করেন, তাহলে কোনো পরিস্থিতিতেই দল সামনে এগুতে পারবে না।”
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন বক্তব্যের বিষয়ে নিজের অবস্থান
জানাতে রোববার মির্জা আব্বাস সংবাদ সম্মেলনে আসেন।
তিনি বলেন, “আমার সহজ-সরল পরিষ্কার মনের সরল উক্তিগুলোকে বিকৃত করে আমাদের যে সকল সাংবাদিক ভাইয়েরা যার যেখানে প্রয়োজন, আমার সম্পূর্ণ বক্তব্য যদি বলি তার একটা লাইন কোট করে, যার যেখানে প্রয়োজন কেটে-ছিঁড়ে, পোস্ট মর্টেম করে, কাটপিছ করে ইচ্ছামতো লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। কী কারণে করা হয়েছে, তা আমি জানি না।”
“একটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, ইলিয়াস আলী গুমের জন্য বিএনপির কিছু নেতা দায়ী। এই কথা কী আমি বলেছি- কেউ কী প্রমাণ করতে পারবে। অসম্ভব, সম্ভব নয়। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই- আমার কথা বিকৃত করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “পত্রিকায় এসেছে- সরকার বা আওয়ামী লীগ ইলিয়াসকে গুম করে নাই- এই কথাও আমি বলি নাই। আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে প্যাচিয়ে
লেখা হয়েছে, টুয়িস্ট করা হয়েছে। বিএনপির নেতারাই ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে-এই কথাটা কী আমি বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য হয়ে আমার বক্তব্য দেয়া সম্ভব? অর্থাৎ নিজের মাথায় নিজেই বোমা
ফোটানো-এটা সম্ভব না। এখানেও টুয়িস্ট করা হয়েছে।”
“আজকে সকালে ইলিয়াস আলীর বাসা গেছে একদল সাংবাদিক। তার স্ত্রীকে গিয়ে রীতিমতো চার্জ করেছে, বিভিন্ন প্রশ্ন করে হেনস্তা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এটাই বা কেন,” প্রশ্ন রাখেন তিনি।
মির্জা আব্বাস যথাযথ বক্তব্য তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমি এমন কোনো কথা বলি নাই, যার জন্য জাতির কাছে, দেশের কাছে, বিএনপির কাছে কিংবা আমার নেতা-কর্মীর কাছে আমাকে বিব্রত হতে হবে। আমার বক্তব্য গতকাল যারা শুনেছেন তারা হয়ত বুঝে উঠতে পারেন নাই। আমি দুঃখিত যে, আমি বুঝাতে পারি নাই।“
সংগঠনের ভালোর জন্য কিছু কথা বলেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য বলি নাই। আমি যা বলেছি, ইলিয়াসকে স্মরণ করে বলেছি, ইলিয়াস আমাদের মধ্যে ছিলেন, আমাদের মাঝে আসবেন –সেই কথা স্মরণ করে আমি বলেছি। দয়া করে আর টুয়িস্ট করে নিউজ করবেন না।“
সরকার ইলিয়াসকে গুম করেনি এই বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা আব্বাস বলেন, “আমি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়ে কেন বলব যে, আমি জানি সরকার জড়িত নয়। আমি কটাক্ষ করে বলেছি। ইট মিনস সরকারই বলুক ইলিয়াস আলী কোথায় আছে? সরকারকেই জবাব দিতে হবে।“
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এসময় তিনি বেশ কিছু প্রশ্ন রাখেন।
তিনি বলেন, “আপনারা কী বের করতে পেরেছেন সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড কারা করল? পারেন নাই। ইলিয়াস গুম হয়েছে, সালা্হউদ্দিন আহমেদকে পাচার করা হয়েছে, আমাদের চৌধুরী আলমকে গুম করা হয়েছে, এরকম আরো হাজার হাজার নেতা-কর্মী গুম হয়েছে। কে করল? তারা হাওয়া হয়ে গেল?”
সংবাদ সম্মেলন বিএনপির আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান
রতন, আবদুস সালাম আজাদ ও কাইয়ুম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।