ক্যাটাগরি

ইউরোপিয়ান সুপার লিগ ‘কৌতুকপূর্ণ এবং অনৈতিক’

প্রতিষ্ঠাকালীন ১৫ দল এবং প্রতিবছর কোয়ালিফাই করে আসা আরও পাঁচটি মিলিয়ে ২০ দল নিয়ে এই ইউরোপিয়ান সুপার লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ নিয়ে তারা ফিফা, উয়েফার সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাবও দিয়েছে। তবে দুটি সংস্থাই অবস্থান নিয়েছে প্রস্তাবিত এই টুর্নামেন্টের বিরুদ্ধে।

ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (এফআইজিসি) তাদের বিবৃতিতে এই প্রকল্পকে বলেছে ‘কৌতুকপূর্ণ এবং অনৈতিক।’

ফিফার সাবেক বর্ষসেরা ফুটবলার ও পর্তুগিজ কিংবদন্তি লুইস ফিগোর এই টুর্নামেন্টকে ভালো কিছু মনে হচ্ছে না।

“তথাকথিত এই সুপার লিগ আর যাই হোক, ‘সুপার’ নয়। এই লোভী এবং অসংবেদী পদক্ষেপ তৃণমূল ফুটবল, নারী ফুটবল এবং সার্বিকভাবে ফুটবল সম্প্রদায়ের ধংস বয়ে আনবে। এটা শুধু সেই সব স্বার্থপর মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করবে যারা অনেক আগেই সমর্থকদের নিয়ে চিন্তা করা বাদ দিয়েছে এবং খেলার চেতনাকেও পুরোপুরি উপেক্ষা করছে। দুঃখজনক।”

সুপার লিগের ১২ দলের একটি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক কোচ ও কিংবদন্তি ফুটবল ব্যক্তিত্ব স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের অবস্থানও সুপার লিগের বিরুদ্ধে।

“সুপার লিগ নিয়ে কথা বলা মানে ৭০ বছরের ইউরোপিয়ান ফুটবল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। ৬০ এর দশকে স্কটল্যান্ডের প্রাদেশিক দল ডানফারমলাইন এবং কোচ হিসেবে আবেরডিনের হয়ে কাপ উইনার্স কাপ জেতা ছিল যেন সর্বোচ্চ চূড়ায় পা রাখার মতো।”

বায়ার্ন মিউনিখ কোচ হান্স ফ্লিকের মতে, “এই টুর্নামেন্টে ফুটবলের জন্য ভালো হবে না।”

ইংলিশ ফুটবল লিগ ম্যানেজারদের অ্যাসোসিয়েশন তাদের বিবৃতিতে এই টুর্নামেন্টকে ‘নিজেদের মধ্যে নির্বাচিত একদল ধনী ক্লাবের উদ্যোগ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। জাতীয় দল এবং টুর্নামেন্টের মধ্যে সম্পর্কের যে ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে, ইউরোপিয়ান সুপার লিগ তার বিরোধী বলে মনে করে তারা।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল আর্সেনাল নাম লিখিয়েছে প্রস্তাবিত ইউরোপিয়ান সুপার লিগে। দলটির দীর্ঘসময় মাঠ মাতানো মেসুত ওজিলও এই প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে।

“বাচ্চারা বেড়ে উঠে বিশ্বকাপ বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখে, কোনো সুপার লিগ নয়। বড় ম্যাচগুলো উপভোগ্য কারণ, সেগুলো প্রতি সপ্তাহে নয়, বছরে এক-দুইবার হয় বলে।” 

ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন ও বর্তমানে ফুটবল বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত গ্যারি লিনেকার এই লিগের সার্বিক প্রভাব নিয়ে ভেবে কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছেন না।

“সম্ভবত আমার প্রতিক্রিয়া দেশের অধিকাংশ মানুষ এবং ইউরোপের অধিকাংশ ফুটবল সমর্থকের মতো। এটা একটা উদ্বেগের বিষয়, চিন্তার বিষয়…এটা ইউরোপের ফুটবলের, বিশেষ করে এখানকার ফুটবলকে কোন দিকে নিয়ে যাবে।”

“প্রিমিয়ার লিগকে এটা কোথায় রেখে যাবে? তারা কি এই দলগুলোকে বাদ দেবে? যদি না হয়, কে জানে? এটা খুবই চিন্তার বিষয়।”

ইংলিশ ক্লাবগুলোর সমর্থকদের বিভিন্ন অংশ এরই মধ্যে জানিয়েছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। চেলসি সমর্থক ট্রাস্টের মতে, এটা তাদের বিশ্বাসে চোট।

“বিশ্ব জুড়ে আমাদের সমর্থকদের চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতি হচ্ছে। এটা ক্ষমার অযোগ্য।”

বেশ কয়েকটি ক্লাবের সামনে সমর্থকরা ব্যানার টাঙিয়ে জানিয়েছে নিজেদের ক্ষোভের কথা। আর্সেনাল সমর্থকদের ট্রাস্ট জানিয়েছে, সুপার লিগে থাকা ইংল্যান্ডের ছয় ক্লাবের সমর্থকরা সুপার লিগের বিরোধিতায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং এই পরিকল্পনা থামাতে সাধ্যের সবটুকু দিয়ে তারা চেষ্টা করবে।