ইংল্যান্ড, স্পেন ও ইতালির ১২ ক্লাব মিলে রোববার রাতে সুপার লিগের আনুষ্ঠানিক
ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই তোলপাড় চলছে ফুটবল জগতে। এসবের মধ্যেই সোমবার রাতে স্প্যানিশ
টিভি শো ‘এল চিরিনগিতো দে হুগোনেস’-এ এই লিগ ও সামগ্রিক আরও অনেক কিছু নিয়ে দীর্ঘ প্রায়
দুই ঘণ্টার সাক্ষাৎকারে পেরেস তুলে ধরলেন তাদের অবস্থান।
প্রতিবাদ-সমালোচনায় তারা ভাবিত নন জানিয়ে পেরেস তুলে ধরলেন এই লিগের প্রয়োজনীয়তা।
“ যখনই কোনো পরিবর্তন হয়, কিছু লোক সেটার বিরুদ্ধে অবস্থা নেয়। আমরা এটা
করছি এই সঙ্কটপূর্ণ সময়ে ফুটবলকে বাঁচানোর জন্য। দর্শক কমে যাচ্ছে, টিভিসত্ত্ব (আয়)
কমে যাচ্ছে এবং কিছু একটা করা প্রয়োজন ছিল। আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে যচ্ছে।”
“ তরুণরা আর ফুটবলে আগ্রহী নয়। কেন? কারণ নিম্নমানের ম্যাচ অনেক বেশি এবং
তারা সেখানে মজা খুঁজে পায় না। তাদের অন্য অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে যেখানে ব্যস্ত থাকতে
পারে।”
মহামারীকালে মাঠে দর্শক প্রবেশের অনুমতি নেই। সীমিত হয়ে এসেছে আরও অনেক
কিছুই। কঠিন পরিস্থিতিতে ক্লাবগুলিতে আর্থিক ক্ষতি থেকে এমন কিছুর বিকল্প আছে বলে মনে
করেন না পেরেস।
“ আমরা এই ক্লাবগুলি মিলে ৫০০ কোটি ইউরো হারিয়েছি এর মধ্যেই। কেবল রিয়াল
মাদ্রিদেরই দুই মৌসুমে ক্ষতি হয়েছে ৪০ কোটি।”
“ টিভি সম্প্রচার ছাড়া যখন আর কোনো আয়ের উৎস নেই, তখন এটিই সমাধান যে বড়
ক্লাবগুলিকে নিয়ে আকর্ষণীয় সব ম্যাচ হবে, যা বিশ্বজুড়ে সমর্থকেরা উপভোগ করবেন। এজন্যই
আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বদলে সুপার লিগ হলে এই ক্ষতি আমরা
পুষিয়ে নিতে পারব। যত বেশি বড় ম্যাচ, তত বেশি আয়। এভাবেই অবস্থার উন্নতি হবে। সুপার
লিগই একমাত্র সমাধান।”
সুপার লিগ হলে ছোট ক্লাবগুলি ধ্বংস হয়ে যাবে আর বড় ক্লাবগুলি আরও ধনী হবে
বলে যে আলোচনা, সেটিও উড়িয়ে দিলেন চেয়ারম্যান।
“ আমরা যদি বেশি আয় করি, এটা সবার জন্যই ভালো হবে। কারণ ছোট ক্লাবগুলি থেকে
আমরা আরও বেশি ফুটবলারকে কিনতে পারব এবং তাদেরকে নানাভাবে সাহায্য করতে পারব। এই লিগ
ধনীদের লিগ নয়, বরং ফুটবল বাঁচানোর লিগ।”
“এই লিগের দুয়ার মোটেও অন্যদের জন্য বন্ধ নয়। মূল ১৫ ক্লাবের বাইরে আরও
৫ ক্লাব কোয়ালিফাই করবে। এটা উন্মুক্ত লিগ, যে কোনো দলই ভালো করলে এখানে সুযোগ পাবে।”
২০২৪-২৫ মৌসুম থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফরম্যাটে অনেক পরিবর্তন আনার ঘোষণা
সোমবার রাতে দিয়েছে উয়েফা। তবে এতে কোনো সমাধান দেখছেন না পেরেস।
“ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন ফরম্যাট ফুটবলকে বাঁচাতে পারবে না। আমি এটা বুঝতেই
পারছি না, এটা কাউকে সহায়তা করবে না। এখানে জিতলে ১২-১৩ কোটি ইউরো পাওয়া যায়, সুপার
লিগ আরও অনেক বেশি দেবে।
“ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন ফরম্যাট চালু হবে ২০২৪ সালে। সেই সময় আসতে আসতে
আমরা নিঃশেষ হয়ে যাব।”
সুপার লিগ শুরু হলে ঘরোয়া লিগগুলোর গুরুত্ব ও আবেদন কমে যাওয়ার কোনো শঙ্কা
দেখছেন না পেরেস।
“ লা লিগার মূল্য কিভাবে কমবে? রিয়াল মাদ্রিদ যখন ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে
খেলবে, তখন কি সেরাটা দেবে না! বাস্কেটবলেও আমরা দেখি যে লিগের পাশাপাশি অন্য প্রতিযোগিতা
চলে। সুপার লিগও এভাবেই চলবে। খুব ভালোভাবেই সব একসঙ্গে চলতে পারে।”
রিয়াল মাদ্রিদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা এখানে তাদের সঙ্গ দেওয়ার
প্রেক্ষাপট তুলে ধরলেন টানা পঞ্চমবারের মতো রিয়ালের সভাপতির দায়িত্বে থাকা পেরেস।
“চলমান সঙ্কটে বার্সেলোনারও ক্ষতি হয়েছে ২০-৩০ কোটি ইউরো। হুয়ান লাপোর্তা
বার্সার দায়িত্ব নেওয়ার পরই এটা অনুভব করেছেন এবং বাস্তবতা বুঝতে পেরেছেন। লাপোর্তাও
মঙ্গলবার মিডিয়ার সামনে লিগ নিয়ে কথা বলবেন।”
“ আমাকে প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে অভিজ্ঞতার কারণে। বার্সার যদি আপত্তি থাকে,
আমি কালকেই দায়িত্ব ছাড়তে পারি লাপোর্তার কাছে। কোনো সমস্যা নেই। আরও বৃহত্তর স্বার্থের
ব্যাপার এখানে।”
সুপার লিগ নিয়ে উয়েফা যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, সেটিরও কড়া জবাব দিলেন স্পেনের
এই ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ফুটবল ব্যক্তিত্ব।
“ লেব্রন জেমসের (বাস্কেটবল তারকা) আয় আমরা সবাই জানি, কারণ এটা প্রকাশ
করা হয়। উয়েফা প্রেসিডেন্টের আয় কেন জানি না?”
“উয়েফা মনে করে, আমরা তাদের সম্পত্তি এবং তারা আমাদের নিয়ে যা ইচ্ছা করতে
পারে। কিন্তু তারা ভুল ভাবছে। তাদের আধিপত্যের দিন শেষ, সময় এখন নতুন যুগের।”
উয়েফার সঙ্গে সংঘাতে অবশ্য তারা যেতে চান না বলেই জানালেন পেরেস। সামনের
অগাস্টে লিগ শুরুর ইচ্ছা থাকলেও প্রয়োজনে আরেক বছর অপেক্ষা করতেও তাদের আপত্তি নেই।
এর মধ্যেই যোগ দেওয়া ১২ ক্লাবের সঙ্গে প্রতিষ্ঠাকালীন আরও তিন ক্লাব যোগ
দেবে। পেরেস ইঙ্গিত দিলেন, একটি ক্লাব হতে পারে সেভিয়া।
ফ্রান্স ও জার্মানির বিভিন্ন ক্লাব তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি বলে খবর প্রকাশিত
হলেও পেরেসের দাবি, পিএসজি ও জার্মানির কোনো ক্লাবকে তারা এখনও আমন্ত্রণই জানাননি।