এমনিতে শ্রীলঙ্কা সফর মানেই স্পিন সামলানোর
চ্যালেঞ্জ। তবে তাদের স্পিন আক্রমণ এখন খুবই অনভিজ্ঞ। বাংলাদেশের আবার মূল শক্তির জায়গাই
স্পিন। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে এবার নাকি চিরায়ত ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে শ্রীলঙ্কা।
স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর, পেস দিয়ে বাংলাদেশকে ঘায়েল করার পরিকল্পনা করছে
লঙ্কান টিম ম্যানেজমেন্ট।
আদৌ তা কতটা সত্যি, প্রমাণ মিলবে বুধবার
সকাল থেকেই। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে
মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায়।
শ্রীলঙ্কা দেশের মাটিতে সবশেষ টেস্ট
সিরিজ খেলেছে গলে। সেখানে উইকেট বরাবরই মন্থর ও স্পিন সহায়ক। ক্যান্ডির অদূরে পাহাড়ের
কোলঘেঁষে পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে বাউন্স মেলে ভালো, অনেক সময়ই এখানে তুলনামূলক একটু
বেশি সহায়তা পান পেসাররা। লঙ্কান গণমাধ্যম বলছে, পেসকে কাজে লাগানোর ভাবনা থেকেই বাংলাদেশের
বিপক্ষে সিরিজের ভেন্যু ঠিক করা হয়েছে পাল্লেকেলে।

দুই দিন আগে লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নের উইকেট পরিদর্শন। ছবি: শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।
স্পিনারদের দেশ শ্রীলঙ্কা আপাতত ভুগছে
ভালো স্পিনার সঙ্কটে। রঙ্গনা হেরাথের অবসর ও দিলরুয়ান পেরেরার ছন্দ হারানোর পর টেস্টে
তাদের মূল স্পিনার লাসিথ এম্বুলদেনিয়া। কিন্তু চোটের কারণে এই সিরিজে নেই বাঁহাতি এই
স্পিনার। ঘরোয়া ক্রিকেট পারফর্ম করা দুই স্পিনার দুভিন্দু তিলকরত্নে ও প্রভাত জয়াসুরিয়া
নেই চোট ও ফিটনেস সমস্যায়। তাই দলে নিয়েছে তারা আনকোরা বাঁহাতি স্পিনার প্রাভিন জয়বিক্রমাকে।
নবীন জয়াবিক্রমার সঙ্গে তিন টেস্ট খেলা
লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার ভানিন্দু হাসারাঙ্গা ও এক টেস্ট খেলা অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার
রমেশ মেন্ডিস, এই নিয়েই লঙ্কান স্পিন আক্রমণ। তারা যে পেসে জোর দিচ্ছেন, সেটির প্রমাণ
তাদের স্কোয়াডেও। ১৫ সদস্যের দলে পেসার পাঁচ জন।
বাংলাদেশের জন্য অবশ্য প্রতিপক্ষের
দুর্বলতা নিয়ে ভাবার সুযোগ আছে কিনা, সেটিই বড় প্রশ্ন। নিজেদেরই যে বেহাল অবস্থা! টেস্টে
কখনোই খুব ধারাবাহিক ছিল না বাংলাদেশ। কিন্তু সবশেষ সিরিজে দেশের মাটিতে খর্বশক্তির
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশড হওয়া যেন দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গেছে তলানিতে।
সেখান থেকে এবার ওপরে ওঠার কঠিন লড়াই।
সেই অভিযানে বড় এক হাতিয়ারকে না পাওয়া নিশ্চিত হয়েছে অনেক আগেই। আইপিএল খেলার জন্য
ছুটি নিয়ে এই সফরে নেই অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তাকে না পাওয়া মানে সবসময়ই একাদশের
কম্বিনেশন ঠিক করতে বাংলাদেশের ভোগান্তি।
সিরিজের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতিও
খুব ভালো হয়নি। নিউ জিল্যান্ড থেকে ফেরার পর দেশে ক্যাম্পের সময় ছিল না। শ্রীলঙ্কায়
গিয়ে সত্যিকারের কোনো প্রস্তুতি ম্যাচের সুযোগ পাওয়া যায়নি, কেবল নিজেদের মধ্যে দুই
দিনের ম্যাচ হয়েছে। টেস্ট ভেন্যুতে অনুশীলনের সুযোগ মিলেছে কেবল টেস্ট শুরুর আগের দিন।
মঙ্গলবার অনুশীলনের আগে ভার্চুয়াল সংবাদ
সম্মেলনে অধিনায়ক মুমিনুল হক তবু আশার ছবি দেখাতে চাইলেন।

পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে ফিল্ডিং অনুশীলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। ছবি: শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।
“বাংলাদেশে থাকতেও বলে এসেছি, বলব না খুব ভালো প্রস্তুতি। তবে এখনকার
যে পরিস্থিতি, সেই অনুযায়ী ভালো প্রস্তুতিই হয়েছে। প্রস্ততি ম্যাচ খেলেছি, দুই-তিন
দিন অনুশীলন করেছি, আজকেও করব। দেশের জন্য আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে গেলে কিছু পরিস্থিতি
আসবে, যেগুলোতে মানসিক ও শারীরিকভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে।”
“আশার তো কোনো শেষ নেই। আশা সবসময়
থাকতে হবে। আপনি এই জায়গায় এসেছেন শুধু অংশ নিতে, তাহলে তো হবে না। তাহলে ক্রিকেট
না খেলাই ভালো। যেখানেই যান, যত খারাপ পরিস্থিতি থাকুক, পরের ম্যাচটা অবশ্যই জেতার
আশা থাকতে হবে, স্পৃহা থাকতে হবে। এটা নিয়েই আমরা মাঠে নামব।”
জয়ের স্পৃহার সঙ্গে স্কিলও জরুরি। সাম্প্রতিক
সময়ে সবকিছুর সমন্বয় খুব কমই করতে পেরেছে বাংলাদেশ।
গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা
সফরে ও পরে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশড হয়ে শ্রীলঙ্কার অবস্থাও ছিল
শোচনীয়। তবে গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে উন্নতির ছাপ রেখে তারা দুটি টেস্ট ম্যাচই ড্র
করে ফেরে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে ছাড়াই। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ফিরেছেন এই সিরিজে। সঙ্গে
করুনারত্নে, দিনেশ চান্দিমাল, লাহিরু থিরিমান্নে, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, নিরোশান ডিকভেলাদের
নিয়ে দলের ব্যাটিং লাইনআপ বেশ শক্তিশালী।
জয়ে ফেরার জন্য বাংলাদেশের চেয়ে আদর্শ
প্রতিপক্ষ এই মুহূর্তে হয়তো পাবে না লঙ্কানরা। নিশ্চিতভাবেই তারা থাকবে মরিয়া। সব মিলিয়ে
বাংলাদেশের অপেক্ষায় আরেকটি কঠিন সিরিজ।