তাদের একজন ষাটোর্ধ্ব মর্জিনা বেওয়া। এ
বিধবা তিস্তা নদীর বাঁধের রাস্তায় কোনো মতে বাস করছেন।
মর্জিনা বলেন, “ঝড়োত ঘরদুয়ার ভাংগি
পরি গেইছে। ভাংগা ঘরটা ভালো করিম তারও টাকা নাই। ভাংগা ঘরকোনা কোন রকমে ঠিক কচছি,
তাও ঘরোত থাকা যায় না। রাস্তায় ঝুপরি করে পড়ে থাকতেছি। রাস্তায় থাকায় যায় না।
“মোর কাহো নাই বাহে, খাওয়ার কষ্ট, রোজা
মাস খুব কষ্ঠ করে আচুং। স্বামী মরির ১০ বছর পার হইল কিন্তু আইজো বিধবা ভাতা পানুং
না।
“মোর জমি নাই। মোকে একনা খাস জমির
ব্যবস্থা করে দেও তোমরা।”
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাশীরাম
মুন্সীর বাজার এলাকার শামসুল হকের স্ত্রী তিনি, দশ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। দুই
সন্তান থাকলেও তারা মায়ের খোঁজ রাখেন না। বিয়ে করে অন্য এলাকায় সংসার পেতেছেন
তারা।
গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে কালীগঞ্জ
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী বয়ে যায়। কয়েক মিনিটের ঝড়ে তিস্তা নদী
পারের কয়েকটি গ্রামের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে বেশিরভাগ অসহায় পরিবারের ঘরবাড়ি
ভেঙে পড়ে। ইরি-বোরো ধান, ভুট্টা, গাছপালা ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কালবৈশাখী ঝড়ে
পড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি টাকার অভাবে মেরামত করতে পারেনি পরিবারগুলো। অনেকে দাদন
ব্যবসায়ীর কাছে টাকা নিয়ে ঘর মেরামত করছেন বলে জানান। ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে তিস্তা নদীর বাঁধে রাস্তায় বসবাসরত পরিবারগুলো।
উপজেলার চর কাশীরাম গ্রামের ঝড়ে
ক্ষতিগ্রস্ত দিনমজুর ফরিদ মিয়া (৫৫) বলেন, “মানসের বাড়িত কাম করি দিন আনি দিন খাই।
কামের টাকা দিয়ে ঘর ঠিক করমো নাকি ভাত খামো?”
ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত নাছিমা বেগম (৩৫)
বলেন,“ মানুষের কাছে লাভের ওপর টাকা নিয়া ঘর ঠিক করতাছি। হামরা এই বাঁধের রাস্তায়
বাড়ি করি আছি।”
তুষভাণ্ডার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান
নুর ইসলাম আহমেদ জানান, ঝড়ে তার ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডে বেশকিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে। এসব পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। পরিবারগুলো দ্রুত সহায়তা পাবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার
রবিউল হাসান বলেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য ত্রাণ শাখায় তালিকা পাঠানো
হয়েছে। সহায়তা এলে দ্রুত এসব পরিবারে পৌঁছে দেওয়া হবে।