ক্যাটাগরি

‘অর্থ সহযোগিতা’ চায় হাটহাজারী মাদ্রাসা

আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদ, শিক্ষা পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের পক্ষ
থেকে বুধবার এক ভিডিও বার্তায় এই ‘বিশেষ আবেদন’ জানানো হয়।

স্বাধীনতার
সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, মহেশখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা।

ওই ঘটনার
পর গত এক সপ্তাহে হেফাজতের কমপক্ষে ১০ জন কেন্দ্রীয়
নেতাকে বিভিন্ন সংহিসতার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে কওমি
মাদ্রাসার আয় ও ব্যয়
নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতা। বিপরীতে
হেফাজতের আমির
জুনাইদ বাবুনগরী অভিযোগ তুলেছেন, মাদ্রাসার
হিসাব চেয়ে তাদের ‘হয়রানি করা হচ্ছে’।

এর মধ্যেই
শতাব্দী প্রাচীন
হাটহাজারী মাদ্রাসার ‘অর্থ সঙ্কটের’ কথা সামনে আনলেন মাদ্রাসা পরিচালনায় সম্পৃক্তরা।

বুধবার
সন্ধ্যায় মাদ্রসার ফেইসবুক পেইজ থেকে তাদের ওই ভিডিও বার্তা প্রচার
করা হয়। হেফাজতে ইসলামের
আমীর জুনাইদ বাবুনগরীও সেখানে ছিলেন।

পরে এ বিষয়ে
পরিচালনা পরিষদের প্রধান মুফতি আব্দুচ্ছালাম চাটগামী স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিও গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

দেওবন্দের
পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত বাংলাদেশের অন্যতম বড় এবং পুরনো
কওমি মাদ্রাসা আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী।

মাদ্রাসা
কর্তৃপক্ষের দাবি, বর্তমানে এখানে ৮ হাজার শিক্ষার্থী
এবং ১০০ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী
আছেন। শিক্ষার্থীদের ৪ হাজার ৭০০
জনের বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

‘সর্বসাধারণের
আর্থিক অনুদান ও সাহায্য-সহযোগিতার’
ওপর ভর করেই মাদ্রাসা
পরিচালিত হয় জানিয়ে বিবৃতিতে
বলা হয়, “মাহে রমজান কওমি মাদ্রাসাসমূহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। কারণ, সাধারণত এ মাসেই মুসলমানগণ
যাকাত, ফিতরাহ আদায় এবং অধিক সাওয়াব অর্জনের আশায় দান-সদকা বেশি করে থাকেন।

“আর
মাদ্রাসাসমূহের লাখ লাখ গরিব, এতিম ও আর্থিকভাবে অসহায়
ছাত্রের ভরণ-পোষণ ও শিক্ষা ব্যয়ের
ফান্ডের সিংহভাগ অর্থ এই রমজান মাসেই
সংগ্রহ হয়ে থাকে। আর কিছু অংশ
সংগ্রহ হয়ে থাকে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রয়ের অর্থ থেকে। যা দিয়ে গরীব-এতিম ছাত্রদের সারা বছরের খোরাকি ও অন্যান্য খরচ
নির্বাহ করা হয়।”

কিন্তু করোনাভাইরাস
মহামারীর কারণে
গতবছর রোজা ও কোরবানিতে কওমি
মাদ্রাসাগুলো অর্থ সংগ্রহ ‘বড় ধরনের সঙ্কেটে’
পড়ে বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়।

সেখানে বলা
হয়, এবারও রোজার মধ্যে লকডাউনের কারণে
‘জনচলাচল সীমিত হয়ে’ পড়ায় মাদ্রাসার ওস্তাদ ও প্রতিনিধিরা যাকাত,
ফিতরা ও অন্যান্য দানের
অর্থ সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন।

“এবারের
রমজানেও যদি জামিয়ার (হাটহাজারী মাদ্রাসা) ফান্ডের অর্থ সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম এবং হাজার হাজার গরিব ও এতিম ছাত্রের
ভরণ-পোষণ চালু রাখা সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে।”


বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য ‘সামর্থ্য অনুযায়ী অধিক পরিমানে দান-সদকা’ চেয়ে বিবৃতিতে দেশবাসীর উদ্দেশে বলা হয়, “আপনাদের প্রিয় এই প্রতিষ্ঠানের বিশাল
ব্যয় নির্বাহে সহযোগিতার অংশ হিসেবে নিজ নিজ সদকা-ফিতরা, নযর, কাফফারা ও দানের অর্থ
ব্যক্তিগতভাবে বা এলাকাভিত্তিক সম্মিলিতভাবে
মাদ্রাসার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা বিকাশ নম্বরে
জমা করে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা
কার্যক্রম এবং বহুমুখী দ্বীনি খিদমতের ধারা অব্যাহত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অফুরন্ত সাওয়াব লাভ করবেন।”

‘ষড়যন্ত্রে
লিপ্ত
আদর্শচ্যুতরা’

একই
বিবৃতিতে হাটহাজারী মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ‘কিছু আদর্শচ্যুত ও স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতকারীর’
দেশের ভিতরে এবং দেশের বাইরে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার ‘খবর পাওয়া যাচ্ছে’ বলে দাবি করা হয়।

‘সর্বস্তরের
তৌহিদি জনতার’ কাছে আহ্বান জানানো হয়, “যখনই আপনারা শুনবেন আপনাদের প্রিয় এই উম্মুল মাদারিস
দুষ্কৃতকারীদের কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে, তখনই আপনারা স্ব স্ব অবস্থান থেকে উম্মুল মাদারিসের সহযোগিতায় তাৎক্ষণিকভাবে এগিয়ে আসবেন।”

কথিত সেই
‘দুষ্কৃতকারীদের’ উদ্দেশে বিবৃতিতে বলা হয়,
“ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন। অন্যথায় আল্লাহর ইচ্ছায় ঘৃণিত ও লাঞ্ছিত হয়ে
ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।”

তবে
কারা ক
নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে- সে বিষয়ে বিবৃতিতে
কিছু বলা হয়নি।

সাম্প্রতিক
সহিংসতা নিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের মধ্যে
হাটহাজারী মাদ্রাসা নিয়ে ‘ষড়যন্ত্রের’ এই অভিযোগ এল।

১৯৮৬
সাল থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের (মুহতামিম) দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফী। নেতৃত্বের বিরোধে গত বছরের ১৭
জুন মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের পদ হারান জুনাইদ
বাবুনগরী।

১৮
সেপ্টেম্বর মারা যান শফী। নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের জেরে মৃত্যুর একদিন আগে মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে
যেতে হয় শফীকে।
তার ছেলে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানিকে বহিষ্কার করা হয়।

শফীর
মৃত্যুর একদিন পরই মাদ্রাসা পরিচালনায় তিন সদস্যের কমিটি করা হয়; প্রধান শায়খুল হাদিসের পদে ফেরেন বাবুনগরী। এরপর হেফাজতের একপক্ষের বিরোধিতার মধ্যেই বাবুনগরী সংগঠনের আমির হন।

শফীর
মৃত্যুর ঘটনায় তার শ্যালকের করা মামলায় পিবিআই গত ১২ এপ্রিল যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে বাবুনগরীসহ
৪৩ জনের ‘দায়’ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

পিবিআই এর
ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেছেন, আসামিরা ‘বেপরোয়া আচরণের মাধ্যমে’ আহমদ শফীর মৃত্যু ত্বরান্বিত করেছেন।

অন্যদিকে
জুনাইদ বাবুনগরী ওই তদন্ত প্রতিবেদনকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, আহমদ
শফীর ‘স্বাভাবিক’ মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুন:


শফীর মৃত্যু নিয়ে পিবিআই’র প্রতিবেদন ‘ডাহা মিথ্যা’: বাবুনগরী
 

শফীর মৃত্যু: তদন্তে বাবুনগরীসহ ৪৩ জনের দায় পেল পিবিআই
 

নিরপরাধ আলেম-ওলামাদের উপর ‘জুলুম’ হচ্ছে: বাবুনগরী
 

‘সজ্জন’ আহমদ শফীকে যারা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন, তাদের বিচার চাই: তথ্যমন্ত্রী
 

নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে হেফাজতের পদ ছাড়লেন আব্দুল্লাহ হাসান
 

বায়তুল মোকাররমে তাণ্ডব: মামুনুলের বিরুদ্ধে মামলা
 

হেফাজতের কর্তৃত্ব বাবুনগরীর হাতে
 

তোফায়েল এখন বলছেন, হেফাজত প্রশ্নে তখনই শক্ত হওয়া দরকার ছিল