ক্যাটাগরি

‘ সুপার লিগ মৃত নয়, চার ক্লাব সমাধান খুঁজছে’

গত রোববার ইউরোপের ১২ দল সুপার লিগের ঘোষণা দেওয়ার পর নাটকীয় সব ঘটনাপ্রবাহের
মধ্য দিয়ে একে একে সরে দাঁড়ায় ৮ ক্লাব। ইংলিশ ক্লাবগুলি দিয়েই এটির সূচনা হয়, মঙ্গলবার
রাতে নিজেদের সরিয়ে নেয় ইংল্যান্ডের ৬ ক্লাব।

স্পেনের রেডিও অনুষ্ঠান ‘এল লারগোরো’-তে বুধবার রাতে পেরেস তুলে ধরলেন ইংলিশ
প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলির চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপট।

“ গত রাতটি (মঙ্গলবার) ছিল দীর্ঘ এক রাত। রাত ১টা পর্যন্ত আমরা একসঙ্গেই
ছিলাম। আমি দুঃখিত ও হতাশ। প্রিমিয়ার লিগের ৬ ক্লাবের একটি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছিল
না এই প্রকল্প নিয়ে। এটিই বাকিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।”

“ ম্যানচেষ্টারের মালিকপক্ষ একটি প্রচারণা শুরু করে যে সুপার লিগ হলে ঘরোয়া
লিগগুলো শেষ হয়ে যাবে। আমি বলব না, কোন ক্লাব। তবে ঘরোয়া লিগগুলোর কোনো ঝুঁকি ছিল না
এখানে। আমরা স্রেফ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বদলে সুপার লিগ চালু করতে চেয়েছি। এখনকার
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ পুরনো ও অকার্যকর।”

ফিফা ও উয়েফা কিছু না বুঝেই ও বোঝানোর সুযোগ না দিয়েই তোলপাড় তুলেছে বলে
মনে করেন সুপার লিগের চেয়ারম্যান।

“প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলি চলে যাওয়ার আরেকটি কারণ, ফিফা ও উয়েফা নানা
কাণ্ড শুরু করেছিল। এখানে তাদের সমর্থক বা বরিস জনসনের (ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী) কোনো
ব্যাপারই নেই। ফিফা ও উয়েফা আমাদেরকে কিছু বোঝানোর সুযোগই দেয়নি। সঠিক লোকদের দিয়ে
সংগঠনগুলো পরিচালিত হচ্ছে না। এমন ভাব করা হচ্ছে যেন আমরা অ্যাটম বোম ফেলেছি।”

“ অনেক মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে। যেমন, আমরা ঘরোয়া লিগ ধ্বংস করে দিচ্ছি,
ফুটবলের চেতনা শেষ হয়ে যাচ্ছে, আমরা ফুটবলকে খুন করছি। কিছুই সত্যি নয়। যারা এসব ছড়াচ্ছে,
তাদের বিশেষ কিছু আধিপত্য আছে, যা তারা হারাতে চায় না।”

আগের মতোই পেরেস আবার দাবি করলেন, ফুটবল বাঁচাতে এবং ক্লাবগুলিতে আর্থিক
সঙ্কট থেকে রক্ষা করতেই সুপার লিগের ভাবনা।

“ হুমকি দেওয়া হচ্ছে, অপমান করা হচ্ছে, এমন ভাব যেন আমরা ফুটবলকে মেরে ফেলেছি।
কিন্তু আমরা ফুটবলকে রক্ষা করতে চাই। গত মৌসুমে এই ১২ ক্লাব মিলে মোট ৬৫ কোটি ইউরো
লোকসান দিয়েছে।”

“ যে আর্থিক অবস্থার ভেতর দিয়ে আমরা যাচ্ছি, সেটি মোকাবেলা করার জন্যই তিন
বছর ধরে সুপার লিগ নিয়ে কাজ চলছে। অগাস্ট থেকে মৌসুমের শেষ পর্যন্ত এই লিগ চলবে এবং
বড়-ছোট সব ক্লাবের জন্যই অনেক অর্থের জোগান আসবে। এখনকার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আর চলে না।
কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকেই কেবল আগ্রহ জন্মায় এখানে।”

সুপার লিগের ফরম্যাট অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠাকালীন ১৫ ক্লাব এই টুর্নামেন্টে
স্থায়ী থাকবে, কোয়ালিফাই করে আসবে ৫ ক্লাব। এটিকে অনেকে অন্যায্য মনে করলেও পেরেস তা
মনে করছেন না।

“ কেন ১৫ ক্লাব সবসময় খেলবে, সেটা বলছি। স্পেন থেকে কি রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা,
আতলেতিকোই সবসময় চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলছে না? সিরি আ থেকেও একই ক্লাবগুলি খেলে না?”

“ লোকে মনে করে, এটা ফুটবলের চেতনার সঙ্গে যায় না। তারা ভুল। মাঠের পারফরম্যান্সেই
এই ১৫ ক্লাব তা অর্জন করে নিয়েছে। গত ২০ বছর ধরে তো তারাই ট্রফি জিতে আসছে। কিভাবে
বলতে পারেন যে এটা তাদের অধিকার নয়?”

বেরিয়ে যাওয়া ক্লাবগুলির বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে নিশ্চিত
করলেন চেয়ারম্যান। তবে মনে করিয়ে দিলেন চুক্তির কথা।

“ ১২ ক্লাবের সবাই একটি বাধ্যবাধকতার চুক্তিতে সই করেছে। প্রিমিয়ার লিগের
ক্লাবগুলি স্রেফ এভাবে চলে যেতে পারে না। আমরা আইনী পথে হাঁটব না। তবে সবাই কথা বলে
সমাধান বের করব।”

“ কেউ আমাকে একা করে ফেলে যায়নি। সব ক্লাবের সঙ্গে  আমরা কথা বলছি, কিভাবে এগোনো যায়। আমাদের কাছে অর্থ
আছে।”

স্পেনের প্রভাবশালী এই ফুটবল ব্যক্তিত্বের মতে, সুপার লিগ না হলে ট্রান্সফারের
বাজারে কোনো দলই নামতে পারবে না। এই লিগ শেষ পর্যন্ত না হলে অন্য বিকল্প আসতে বাধ্য।

“ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন ফরম্যাট আমার মাথায় ঢুকে না। ২০২৪ সালের অপেক্ষায়
বসে থাকলে চলবে না, এখনই কিছু করতে হবে। সুপার লিগ না হলে এমবাপে বা হল্যান্ডের মতো
কাউকে দলে আনা যাবে না। আমরা শুধু নই, কোনো ক্লাবই সুপার লিগ ছাড়া বড় কোনো ফুটবলারকে
আনতে পারবে না।”

“ সুপার লিগের মূল উদ্দেশ্য অর্থ আয়। এই প্রকল্প কাজ না করলে আরেকটি করবে।
এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোনো কাজের নয়। বাস্তবতা হলো বাস্তবতা। টিভি রেকর্ড দেখুন, কত
লোক বড় ম্যাচ দেখে, কত জনে ছোট ম্যাচ। অর্থ বাড়াতে হলে নতুন কিছু লাগবেই। বাস্তবতা
বুঝতে হবে।”

তাই বলে সুপার লিগ যে এখানেই শেষ নয়, সেটিও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন পেরেস।

“ কেউ যদি মনে করে সুপার লিগ মৃত, তাহলে তারা পুরোপুরি ভুল। এখন এটি অপেক্ষমান
অবস্থায় আছে।”

“ হুয়ান লাপোর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে আমার, বার্সা এখনও আমাদের সঙ্গে আছে।
রিয়াল, বার্সা, ইউভেন্তুস ও এসি মিলান এখনও আলোচনা করে যাচ্ছে সমাধান খুঁজতে। তারা
সরে যায়নি। আমি ফিফা বা উয়েফাকে ভয় পাই না।”