উল্টো দিকে যাওয়ার শুরুটা ম্যানচেস্টার সিটির হাত ধরে। তাদের দেখানো পথ ধরে
একে একে বিতর্কিত লিগ থেকে সরে যায় ইংল্যান্ডের আরও পাঁচটি দল-টটেনহ্যাম হটস্পার, ম্যানচেস্টার
ইউনাইটেড, আর্সেনাল, লিভারপুল ও চেলসি। তাতেই বেজে যায় টুর্নামেন্টের মৃত্যু ঘণ্টা।
এরপরও বুধবার দিনের শুরুতে টুর্নামেন্ট এগিয়ে নেওয়ার আশাবাদ জানিয়েছিল আয়োজকরা।
কিন্তু পরে সুপার লিগের প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-সভাপতি ও ইউভেন্তুস প্রধান আন্দ্রেয়া আগনেল্লি
জানান, প্রস্তাবিত টুর্নামেন্টটির মাঠে গড়ানোর তেমন সম্ভাবনা এখন আর দেখছেন না তিনি।
এরপর সরে যায় স্প্যানিশ লা লিগার দল আতলেতিকো মাদ্রিদ ও সেরি আর দল ইন্টার
মিলান। তাদের সঙ্গী হয় এসি মিলানও। ইতালিয়ান গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী টুর্নামেন্টের
সঙ্গে নেই ইউভেন্তুসও।
টুর্নামেন্টে টিকে আছে কেবল স্পেনের দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ
ও বার্সেলোনা। বার্সেলোনার বিষয়টাও আসলে নিশ্চিত নয়। চুক্তির একটি ধারায় বলা হয়েছে,
ক্লাবের সদস্যরা অনুমতি না দিলে সুপার লিগে অংশ নিতে পারবে না তারা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
না এলেও কার্যত শেষ হয়ে গেছে সুপার লিগ। তবে উদ্যোগের প্রভাব থাকতে পারে আরও বহু বছর।
ক্লাবের প্রতি সমর্থকদের বিশ্বাসে বড় ধরনের চোট লেগেছে এই ঘটনায়। এই ক্ষত সারিয়ে
তুলতে লাগতে পারে বহু বছর। এক ক্লাব বিশ্বাস হারিয়েছে আরেক ক্লাবের উপর। হুট করে নিজেদের
সরিয়ে নেওয়ায় প্রতিষ্ঠাতা ১২ ক্লাবের মধ্যেও ঝামেলা বেধে যাওয়া অসম্ভব নয়। এরই মধ্যে
আগনেল্লি এনেছেন চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ।
এরই মধ্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও সেরি আয় উঠেছে বিদ্রোহী ক্লাবগুলোকে শাস্তি
দেওয়ার দাবি। এই বিষয়ে এখনও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার করেনি কিছু। ভবিষ্যতের অনেক
কিছুই নির্ভর করছে উয়েফা ও বিভিন্ন ফেডারেশন কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয় তার উপর।
এখন পর্যন্ত তারা নিজেদের কাজে সফল। রোববার হুট করে সুপার লিগের ঘোষণায় টালমাটাল
হয়ে পড়েনি উয়েফা। দিশেহারা হয়ে এলোমেলো কিছু করে বসেনি। স্রেফ জানিয়ে দেয়, এই টুর্নামেন্টে
অংশ নিলে দলগুলোকে সবরকম প্রতিযোগিতা্ থেকে নিষিদ্ধ করা হবে।
“ক্রীড়াগত ও আইনিভাবে যত কিছু করা সম্ভব, এই প্রকল্প প্রতিহত করতে তার সবকিছুই
করব আমরা। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলার মানের ওপর ফুটবল গড়ে উঠেছে; অন্য কোনোভাবেই
তা হতে পারে না।”
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো দেন পরিণতি ভোগের জন্য তৈরি থাকার হুমকি।
উয়েফা একা ছিল না এই লড়াইয়ে। বরং বলা যায় কে ছিল না তাদের সঙ্গে। সাবেক তারকা
ফুটবলার, কোচ, বিশেষজ্ঞ, ফুটবল কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, সবাই নিজের জায়গা থেকে প্রতিবাদ
করেছেন। পরে যোগ দিয়েছেন বর্তমান সময়ের ফুটবলাররাও। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটা
রাখেন ফুটবল সমর্থকরা। সুপার লিগে যোগ দেওয়ায় নিজ দলের বিপক্ষে চলে যান তারা। এমনকি
ইংল্যান্ডের ছয়টি দলের সব ভক্তরা এক হয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
সেই লড়াইয়ে জয় হয়েছে তাদেরই। স্রেফ ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই আলোচিত-সমালোচিত সুপার
লিগ আজ মরতে বসেছে। এই পরিণতিতে অবাক নন আর্সেনালের কিংবদন্তি কোচ ও ফিফার বৈশ্বিক
ফুটবল উন্নয়ন বিভাগের প্রধান আর্সেন ভেঙ্গার।
“এটি দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় আমি একটুও অবাক হইনি। শুরু থেকে আমার কখনোই মনে
হয়নি এটি সম্ভব। খেলাধুলার মূলনীতির ভিতকেই অস্বীকার করেছে এটি। ঘরোয়া লিগকে ধ্বংস
করে ফেললে সমর্থকরা তা কখনও মেনে নিবে না। ঠিক তাই হয়েছে।”