সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় শতাধিক মামলার অনেকগুলোর তদন্তে নেমে পুলিশ এসব আলামতকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও তাণ্ডবে কারা জড়িত এবং ঘটনার পেছনের ‘মদদদাতাদের’ চিহ্নিত করতে ঘটনাস্থলের ভিডিও এবং ওয়াজ মাহফিলে দেওয়া বক্তৃতা বিশ্লেষণ করছেন তারা।
তবে এরইমধ্যে সামাজিক মাধ্যমগুলো থেকে কিছু ভিডিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সে কারণে ‘ভিন্ন পথে’ এগোনোর কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পোশাল ক্রাইম ডিভিশনের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কিছু কিছু কনটেন্ট ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে, কিন্তু কোনো লাভ নেই। ডাউনলোড করে আর্কাইভ করে রাখা হচ্ছে। ফরেনসিক পরীক্ষা করে রাখার পর সেটা শক্ত আলামত হয়ে যাচ্ছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে শুক্রবার সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস, রাবার বুলেট ও জল কামান ব্যবহার করে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
“কেউ ইউটিউব বা অন্য কোনো মাধ্যমে ছড়ালে কেউ না কেউ ডাউনলোড করে থাকে। ফলে অপরাধীর ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।“
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও কক্সবাজারে হেফাজতের নাশকতার ১৬টি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন –পিবিআই।
এ তদন্ত সংস্থার প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে মাঠে নেমেছেন তাদের তদন্তকারীরা।
“তদন্তের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। ভিডিও, অডিও ক্লিপ সংগ্রহ করা হচ্ছে।“
মামলার অজ্ঞাতনামা আসামিদের চিহ্নিত করতে ‘বিশেষ পদ্ধতিতে’ অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে জানিয়ে ঊর্ধ্বতন এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “মামলার আলামত হতে পারত এরকম কিছু ভিডিও ক্লিপ এরই মধ্যে বিভিন্ন সাইট থেকে সরিয়ে ফেলেছে। সেগুলো বিভিন্নভাবে জোগাড় করার পাশপাশি বর্তমানে যেগুলো সাইটে আছে, সেগুলো আর্কাইভ করে রাখা হচ্ছে।“
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে মার্চে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা ও তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানিও ঘটে।
এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকেও গত কয়েকদিনে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এ দলটির নেতার বছরজুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব ওয়াজ মাহফিল করেন, তাতে অনেকেই উসকানিমূলক বক্তব্য দেন বলে অভিযোগ এসেছে বিভিন্ন সময়ে। তাদের সমর্থকরা ইন্টারনেটেও সেসব ওয়াজ ও বক্তৃতা শেয়ার করেন।
পুলিশের ডিআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) মো. হায়দার আলী বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সম্প্রতি হেফাজতের সহিংসতার ঘটনায় সারাদেশে ১৩০টির মত মামলা হয়েছে। নাম উল্লেখ করা আসামির সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় ৮০০ জন।
এসব মামলার মধ্যে ২৩টির তদন্ত করবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ – সিআইডি। এ সংস্থার প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন।
এদিকে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর দেখা গেছে, সংগঠনটির কর্মীরা ‘নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে’ পুরনো ভিডিও ‘লাইভ’ আকারে প্রচার করছে।
“সেজন্য তারা এক ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করছে। এসব যারা করছে, তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামবে র্যাব।”
এ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের ১২ জন নেতাকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে জানিয়ে মঈন বলেন, “তারা অধিকাংশই দেশের বিভিন্ন জেলায় নাশকতার সঙ্গে জড়িত। আবার কেউ কেউ ছিলেন নাশকতা সৃষ্টির জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।”
পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এক ব্যাক্তি এক জায়গায় বসে একই সময় বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে কর্মকাণ্ড চালাতে পারে- এমন তথ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
“আমরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রকৃত অপরাধীদের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে কাজ করছি, যেন কোনো নিরাপদ ব্যক্তি শাস্তি না পায়।”
আরও পড়ুন
তালিকাটা দিন, তাদের নিয়ে জেলে চলে যাই: বাবুনগরী
গ্রেপ্তার বন্ধের দাবি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হেফাজত নেতারা
ছাত্রদের উসকে দিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় ছিলেন মামুনুল: পুলিশ