ক্যাটাগরি

করুনারত্নে-ধনাঞ্জয়ার রেকর্ড জুটি, সারাদিনে উইকেট নেই বাংলাদেশের

পাল্লেকেলে টেস্টের
রানপ্রসবা আর উইকেট খরার চতুর্থ দিন শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৫১২। বাংলাদেশের
প্রথম ইনিংসের চেয়ে তারা পিছিয়ে কেবল ২৯ রানে।

আলোকস্বল্পতায় দিনের
খেলা ২২ ওভার আগেই শেষ লঙ্কানদের লিড হয়ে যেত এ দিনই।

শেষ দিনে অতিনাটকীয়
কিছু না হলে এই টেস্টের ভাগ্যে ড্র ছাড়া আর কিছু নেই। চার দিন মিলিয়ে উইকেট পড়েছে মোটে
১০টি!

নিষ্প্রাণ উইকেটে ৪১৯
বলের ম্যারাথন ইনিংসে ২৫ চারে ২৩৪ রানে অপরাজিত করুনারত্নে। ২০ চারে ২৭৮ বলে ১৫৪ রানে
খেলছেন ধনাঞ্জয়া।

৫২৪ বলে এই দুই জনে
গড়েছেন ৩২২ রানের জুটি। চতুর্থ উইকেটে যা বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল
২০০৬ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার জেসন গিলেস্পি ও মাইক হাসির ৩২০।

শ্রীলঙ্কার জন্য এটি
যে কোনো বাংলাদেশের বিপক্ষে রেকর্ড। আগের সেরা ছিল তৃতীয় উইকেটে মাহেলা জয়াবর্ধনে ও
কুমার সাঙ্গাকারার ৩১১, ক্যান্ডিরই আরেক মাঠ অ্যাসগিরিয়ায় ২০০৭ সালে।

শনিবার দিনের প্রথম
ঘণ্টায় বোলিংয়ে তবু কিছুটা ধার ছিল বাংলাদেশের। এরপর আর সেভাবে নিয়ন্ত্রণই দেখা যায়নি।
আক্রমণাত্মক কিংবা রক্ষণাত্মক, কোনো পরিকল্পনাই ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনি তারা। বরাবরই
সচল থেকেছে লঙ্কানদের রানের চাকা।

দারুণ সব অফ ড্রাইভ,
অন ড্রাইভ খেলেন করুনারাত্নে। স্পিনের বিপক্ষে পায়ের ব্যবহার ছিল চমৎকার। পেসারদের
শর্ট বলে পুল করে পাল্টা আক্রমণ করেছেন ধনাঞ্জয়া। স্পিনও ভাবাতে পারেনি তাকে।

সতীর্থদের সঙ্গে মাঠে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুলের আলোচনা। তাদের কোনো পরিকল্পনাই এ দিন কাজে লাগেনি। ছবি : শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।

সতীর্থদের সঙ্গে মাঠে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুলের আলোচনা। তাদের কোনো পরিকল্পনাই এ দিন কাজে লাগেনি। ছবি : শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।

দুজনের হার না মানা
ব্যাটিংয়ে সারাদিনে ৭৬ ওভারে আসে ২৮৩ রান।

বাংলাদেশকে ভুলতে বসা
এক তেতো স্বাদ মনে করিয়ে দিয়েছেন করুনারত্নে ও ধনাঞ্জয়া, টেস্টে নিষ্ফলা দিন। টেস্টে
এ নিয়ে চতুর্থবার সারাদিনেও একটি উইকেট নিতে ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সবশেষ এমন দিন দেখেছিল তারা।

৩ উইকেটে ২২৯ রান নিয়ে
শনিবার দিন শুরু করা শ্রীলঙ্কা শুরুতে ছিল সাবধানী। দ্বিতীয় নতুন বলে তাসকিন আহমেদ
ও আবু জায়েদ চৌধুরির স্পেল কাটিয়ে দেওয়ার পর বাড়ায় রানের গতি। এর পর আর পেছনে তাকাতে
হয়নি।

খুব বেশি সুযোগ তৈরি
করতে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় নতুন বলের প্রথম ওভারে তাসকিনের বলে ব্যাটের কানায় লেগে
বোল্ড হতে হতে বেঁচে যান ধনাঞ্জয়া। আবু জায়েদ পরের ওভারে করুনারত্নের এলবিডব্লিউর রিভিউ
নিয়ে সফল হয়নি বাংলাদেশ।

পরে তাইজুল ইসলামের
বলে করুনারত্নের কঠিন একটি ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন দাস। সে সময় লঙ্কান অধিনায়ক ছিলেন
১৬৬ রানে।

৮৫ রান নিয়ে দিন শুরু
করা করুনারত্নে পানি পানের বিরতির আগেই পৌঁছে যান সেঞ্চুরিতে, ২৪৭ বলে। বাংলাদেশের
বিপক্ষে যেটি তার দ্বিতীয় শতক, টেস্টে একাদশ।

ডানহাতি ধনাঞ্জয়া ১০২
বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। পরে বলে-বলে রান করে ১৫৩ বলে পৌঁছান সেঞ্চুরিতে। ৩৫ টেস্টেই
করে ফেললেন সাত সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়। 

তৃতীয় সেশনে আলোকস্বল্পতায়
এক পর্যায়ে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় ১৯২ রানে ছিলেন করুনারত্নে। আবার খেলা শুরু হলে
তাসকিনের ওভারে দুটি বাউন্ডারিতে পৌঁছান ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিতে।

তার আগের সেরা ছিল ১৯৬,
পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৭ সালে দুবাইয়ে।

বোলারদের খাটুনির আরেকটি
দিনে রান দেওয়ার সেঞ্চুরি হয়ে গেছে মিরাজ ও তাইজুলের। কাছেই আছেন তাসকিন। বেশি দূরে
নেই ইবাদত হোসেন। দেড়শ ওভারের মধ্যে কেবল ১৩ ওভার বোলিং করেছেন বাংলাদেশের মূল পেসার
আবু জায়েদ।

ব্যাটসমানদের একপেশে
দাপটে ম্যাচ এখন ড্রয়ের পথে। ২০১৪ সালের জুলাইয়ের পর শ্রীলঙ্কায় ড্র হয়নি কোনো টেস্ট।
টানা ২৮ ম্যাচে ফল হওয়ার পর এবার হয়তো এখানে পড়তে যাচ্ছে যতি চিহ্ন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস:
১৭৩ ওভারে ৫৪১/৭ (ডি.)

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস:
১৪৯ ওভারে ৫১২/৩ (আগের দিন ২২৯/৩) (করুনারত্নে ২৩৪*, ধনাঞ্জয়া ১৫৪*; আবু জায়েদ ১৩-১-৫৮-০,
তাসকিন ২৫-৬-৯১-১, ইবাদত ১৭-১-৮২-০, মিরাজ ৫২-৬-১২৩-১, তাইজুল ৩৯-৯-১৩৬-১, মুমিনুল
১-০-৮-০, সাইফ ২-০-৫-০)।