গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউনের বিধি নিষেধ রোববার একাদশ দিনে এসে শিথিল করা হয়েছে মানুষের ‘জীবন-জীবিকার’ বিবেচনায়।
এখন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার।
রোববার সকালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শপিং মল খোলার পাশাপাশি ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ পোশাকের দোকানও চালু হয়ে গেছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় গুটিকয় বিপণি বিতান এখনও বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
বিক্রেতারা বলছেন, মার্কেটের নিয়ম শিথিল হলেও গণপরিবহন বন্ধ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ রাস্তাঘাটে বের হচ্ছে না। ফলে বিপণি বিতান খুললেও ক্রেতা সেভাবে নেই। ঈদের আগে ভালো বেচাকেনার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।
বিপণি বিতান খোলার অনুমতি দেওয়া হলেও বাইরে বের হতে আগের মতই ‘মুভমেন্ট পাস’ লাগবে বলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে রোববার ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা কাউকেই মুভমেন্ট পাসের জন্য আটকাতে দেখা যায়নি।
সকালে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, এলিফেন্ট রোড, নিউ মার্কেট এলাকার বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা একেবারেই কম। অধিকাংশ মার্কেটে বিক্রেতারা দোকান পরিষ্কার আর পণ্য গোছগাছ করে সময় কাটাচ্ছেন।
মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির পাশে টোকিও স্কয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরে প্রসাধনী, শাড়ি, কাপড়ের দোকানগুলোতে দেখা গেল কর্মচারীরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত। স্বাস্থ্য বিধি মানতে হাত পরিষ্কার করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
তবে মার্কেটে ক্রেতা নেই; শ্যামলী থেকে মোহাম্মদপুরে যাওয়ার সড়কটিতেও মানুষের আনাগোনা খুব কম।
এ মার্কেটের একজন লিফটম্যান জানালেন, ‘কঠোর’ লকডাউন আসছে শুনে গত ১১ এপ্রিল তিনি দিনাজপুরে গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। এখন নতুন করে আবার মার্কেট খুলছে শুনে একটি পণ্যবাহী ট্রাকে চড়ে শনিবার ঢাকায় ফিরেছেন।
এ মার্কেটের একটি প্রসাধনীর দোকানের মালিক সালাম বললেন, “এখন আর কী বেচাকেনা হবে বলেন, লকডাউনের ভয় তো সবার মধ্যেই আছে। চারদিকে রোগ বাড়ছে। কিন্তু আমরা তো মাসের পর মাস বসে থাকতে পারি না। যতটুকু সম্ভব নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে।”
টোকিও মার্কেটের বাইরেই সড়কের ওপরে ভ্যানগাড়িতে শার্টপ্যান্টের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মোহাম্মদ হোসেন। এমনিতে তার বেচাবিক্রি দিয়ে দিনের খরচ চলে। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে ভালোই চাপে পড়েছেন তিনি।
“লকডাউনের মধ্যে বেকার ছিলাম। এখন দোকান খুলে বসছি। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই উঠে যেতে হবে। আমার বেচাকেনাটা হয় মূলত সন্ধ্যার পরে। গরীব মানুষজন পোশাক কেনে।”
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের মধ্যে রোববার খুলেছে দোকানপাট ও শপিংমল। মিরপুর ১ নম্বরের চিত্র। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
ধানমণ্ডি, নিউ মার্কেট, এলিফেন্ট রোডের বিপণি বিতানগুলোর চিত্রও মোটামুটি একই রকম। রাস্তায় রিক্সা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারসহ ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ অন্যদিনের তুলনায় বেশি দেখা গেলেও দোকানপাট অনেকটাই ফাঁকা।
ধানমণ্ডিতে এডিসি এম্পেয়ার প্লাজা নামের একটি মার্কেটে সায়মা ফ্যাশনস নামের একটি দোকানের বিক্রেতা জামাল হোসেন জানালেন, সকালে দোকান খুললেও দুপুর পর্যন্ত কোনো বেচাকেনা হয়নি। সামনে ঈদ, সরকার সুযোগ দেওয়ায় দোকান খুলেছেন। কিন্তু কতটা কী হবে বুঝতে পারছেন না।
“মানুষের মাঝে খুব ভয় কাজ করছে। বাইরে যানবাহনও কম। বেচাকেনার অবস্থা ভালো হবে বলে মনে হচ্ছেনা।“
ঢাকা নিউ মার্কেটের দুই নম্বর ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই সামনে পড়বে ফ্যাশন হাউজ লিলি স্টোর। দোকানের ব্যবস্থাপক মঈনুদ্দিন বললেন, মহামারীতে প্রতিবেশী দেশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির খবর আসছে, তাতে বাংলাদেশের মানুষের মনেও ভয় কাজ করছে।
“ভয় আমারও আছে। তবু সরকারি অনুমতি পেয়ে সাহস করে দোকানে এলাম। কিন্তু বেচাবিক্রি নেই।”
রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা হিসাবে পরিচিত নিউ মার্কেট রোববার ছিল অনেকটাই শন্তি। রাস্তায় সেই চিরচেনা যানজট নেই, ফুটপাত, অলিগলিতে মানুষের আনাগোনাও সেভাবে নেই।
এর মধ্যেও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পরিবারসহ কেনাকাটা করতে এসেছিলেন শাহাবুদ্দিন নামের একজন। তিনি জানালেন, সরকার লকডাউন তুলে দিলেই সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে যাবেন। সে কারণে ভিড় বাড়ার আগেই কিছু কেনাকাটা সেরে নিতে এসেছেন।
সকালে মিরপুর-২ নম্বরে মিরপুর শপিং সেন্টারে গিয়ে দেখা গেল, স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের অংশ হিসাবে সেখানে জীবাণু প্রতিরোধী ‘টানেল’ তৈরি করছে কর্তৃপক্ষ। তবে মার্কেটের ভেতরে ব্যস্ততা নেই।
শপিং সেন্টারের বাইরে ফুটপাতে ভ্যানগাড়িতে কাঠের তৈজসপত্র সাজিয়ে বসেছেন জাফর আহমেদ নামের এক ফেরিওয়ালা।
তিনি বললেন, “গত ১০ দিন ধরে একেবারে বেকার বসে আছি। এক টাকাও উপার্জন নাই। আজ সকালেই এখানে আসলাম। কিন্তু রাস্তায় তো মানুষজন নাই। বেচাকেনাও নাই।