ক্যাটাগরি

ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কায় সর্বদলীয় সরকারের আলোচনা

সিলোন টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির ১১টি বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা রোববার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের সঙ্গে দেখা করে একটি সর্বদলীয় বা বহুদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। 

দেশটির সাবেক শিল্পমন্ত্রী বিমল বীরাবানসা রোববার বিকালে কলম্বোতে সাংবাদিকদের বলেন, “মানুষ বর্তমান মন্ত্রিসভার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। আমাদের দেশকে নানা বিভেদের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। এর সমাধানে আরেকটি নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করার সময় আমাদের নেই। সুতরাং সবচেয়ে ভালো সমাধান হতে পারে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা।  

“আর এই নতুন সরকার গঠন করতে হবে সব দলের সাথে আলোচনা করে। এ সরকার গঠনের মূল লক্ষ্য হবে বর্তমান সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করা এবং পরবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।”     

বীরাবানসা দাবি করেন, তাদের ওই প্রস্তাব প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী দুজনের তরফ থেকেই ‘ইতিবাচক’ সাড়া পেয়েছে।

শ্রীলঙ্কার আরেক ইংরেজি দৈনিক ডেইলি মিরর লঙ্কা সূত্রের বরাত দিয়ে খবর দিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান দুজনই সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে একমত হয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন।

সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দীনেশ গুনাবাবার্দেনার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে এবং প্রধান বিরোধী দল এসজেবি অর্থমন্ত্রীর পদেও নতুন একজন এমপির নাম দিয়েছে বলে খবর দেয় পত্রিকাটি। 

শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলীয় জোটের নেতা সজিত প্রেমাদাসার নেতৃত্বে বিরোধী দলের সদস্যরা গত বৃহস্পতিবার রাজধানী কলম্বোতে মিছিল করে।

শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলীয় জোটের নেতা সজিত প্রেমাদাসার নেতৃত্বে বিরোধী দলের সদস্যরা গত বৃহস্পতিবার রাজধানী কলম্বোতে মিছিল করে।

তবে ওই খবরের সত্যতা অস্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেনননি। অবশ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাব নিয়ে ওই বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি। 

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এখনই সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবেলা করতে হচ্ছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দেশ শ্রীলঙ্কাকে।

এ বছর কলম্বোকে প্রায় ৬৯০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে, অথচ জ্বালানি তেল আমদানির মত যথেষ্ট বিদেশি মুদ্রাও দেশটির সরকারের হাতে নেই।

তেলের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় লোডশেডিং হচ্ছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও ওষুধের সঙ্কট। দ্রবমূলের উর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে নাগরিকদের।  

শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যান বিভাগ জানিয়েছে, মার্চে মূল্যস্ফীতি হয়েছে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১৮.৭ শতাংশ। খাদপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৩০.২ শতাংশে পৌঁছেছে।

এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভ শুরু হলে কারফিউ জারি করে সরকার। শুক্রবার সকালে ওই কারফিউ তুলে নিলেও শনিবার আবারও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।

বিক্ষোভ দমনে কারফিউ জারির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রবশের পথও বন্ধ করেছে শ্রীলঙ্কা সরকার।

দেশটির টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জয়ন্ত ডি সিলভা রয়টার্সকে বলেছেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিশেষ নির্দেশের কারণে অস্থায়ীভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে শান্তি বজায় রাখার জন্য এটা করতে হয়েছে।”

প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের বড় ভাই মাহিন্দা সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের সবার ছোট ভাই বাসিল রাজাপাকসে আছেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে। আর পরিবারের সবার বড় ভাই চমল রাজাপাকসে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং ভাইপো নামাল ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন।   

চলমান সঙ্কটে পরিবারের মধ্যেও মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বয়সে তরুণ নামাল প্রকাশ্যেই সোশালি মিডিয়ায় কড়াকড়ি আরোপের সমালোচনা করেছেন।

 

পুরনো খবর

ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব বন্ধ শ্রীলঙ্কায়
 

শ্রীলঙ্কা এমন বেহাল কেমন করে হল?
 

আর্থিক দুর্দশায় শ্রীলঙ্কা, কাগজ সংকটে স্কুলের পরীক্ষাও বন্ধ
 

শ্রীলঙ্কায় প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার ঘোষণা
 

প্রেসিডেন্টের বাসভবনে বাইরে বিক্ষোভের পর কলম্বোতে কারফিউ
 

অর্থনৈতিক সঙ্কট: শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি