আর তা তুলতে গিয়ে নিজের দলের নেতা ও বাস মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঁঙ্গাকেও খোঁচা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব।
চুন্নু রোববার সংসদে বলেন, “আমার পাশে বসেছেন বাংলাদেশ বাস ওনার্স মালিক সমিতির সভাপতি। ওনাদেরকে বলব- আপনারা মানুষের প্রতি দরদি হন। যে সমস্ত গাড়ি, ব্রেক নেই, পুরনো ইঞ্জিন, রং নেই- এগুলো কেউ দেখে না। আপনারা সরকারের সাথে যোগসাজশে জনগণকে কষ্ট দিচ্ছেন?”
রাজধানীর কুড়িলে দুর্ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিহতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “একজন ছাত্রী স্কুটি নিয়ে যখন ফ্লাইওভারে ওঠে, তখন একটি গাড়ির ধাক্কায় মারা যায়। গত বুধবার কামরুন্নেসা স্কুলের শিক্ষার্থীকে আনতে গিয়ে তার মা পুরনো লক্করঝক্কর ব্রেকহীন বাসের ধাক্কায় মেয়েটার সামনে গাড়ির চাকার নিচে পড়ে মারা যায়। এর আগে মঙ্গলবার মিরপুরে বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারায় সাবিনা ইয়াসমিন।
“বর্তমান সরকার অনেক উন্নয়নের দাবিদার। হ্যাঁ, উন্নয়ন অনেক করেছে। কিন্তু রাজধানী শহর ঢাকায় ট্রান্সপোর্টের একটি নীতিমালা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা চোখে দেখিনি। ঢাকা শহরে ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। ঢাকা শহরে যেসব বাস চলে, তার বেশিরভাগই পুরনো ও লক্করঝক্কর। লাইসেন্স নেই। কোনো আইন মানে না। রাস্তায় যেখানে-সেখানে পার্ক করে রাখে।”
চার লেইনের মহাসড়ক, পদ্মাসেতুর মতো মেগাপ্রকল্পের কাজ চললেও সড়কের শৃঙ্খলায় কোনো কাজই হয়নি বলে দাবি করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী চুন্নু।
“সড়ক মন্ত্রীকে বলব- আপনি পদ্মাব্রিজসহ অনেক উন্নয়ন করেন, কিন্তু আপনি টোটালি ফেইল ট্রান্সপোর্টেশনের বিষয়ে। ২৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স আজকে আটকা। ঢাকা শহরে আজকে গাড়ি চলে না। ভালো বাস নেই। সরকারের কি ঢাকায় নতুন ৫০০/১০০০ বাস নামানোর সক্ষমতা নেই? মানুষ নিজের টাকা দিয়ে টিকেট কিনে গাড়িতে যাবে। কিন্তু লাইনের পর লাইন। টিকেট কিনে ওঠার কোনো বাস নেই। এত অপ্রতুল পরিবহন। এ বিষয়টি দৃষ্টি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করব।”
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গ টেনে চুন্নু বলেন, “তথ্যমন্ত্রী আমাকে বললেন, আমি নাকি অসত্য কথা বলেছি। আমার অসত্য কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি ব্যবসা করি না। মার্কেটে যাই। এক সপ্তাহ আগে যে বেগুনের দাম ছিলো ৪০ টাকা, পরশুদিন বাজারে গিয়ে দেখি ৭০ টাকা।
“৩০ টাকার শসা ১০০ টাকা কেজি। ৩০ টাকা পেঁয়াজের কেজি ৩৫ টাকা। চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। ৬৩০ টাকার গরুর গোশত ৬৫০ টাকা। শুধু সয়াবিন তেলের দাম কমেছে, বৃদ্ধি পায়নি।”

মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ। ফাইল ছবি
অনির্ধারিত আলোচনায় দাঁড়িয়ে চুন্নু যে বক্তব্য দেন, তার জবাব দেন বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ রাঙ্গাঁ।
তিনি বলেন, “আমার কলিগ, আমি উনার আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছিলাম দুই বছর। ক্ষোভে কি না বা আমি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি, সে ক্ষোভে কি না বা জনগণের দুর্দশা দেখে কি না, কীভাবে উনি বলেছেন আমি বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ করে পরিবহনের কথাটা আমাকে বললেনও না।”
বাস মালিকদের নেতা রাঙ্গাঁ বলেন, “ঢাকায় যানজটের কারণে এখন একটি বাস তিনটির বেশি ট্রিপ দিতে পারে না। আয় আগের তুলনায় কমে গেছে। বাসের ফিটনেস আছে কি না, সেটা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ও বিআরটিএ দেখে। ফিটনেস না থাকলে জরিমানা করা হয়, বাস ডাম্প করা হয়।”
তিনি বলেন, কোনো গাড়ির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা তাকে বললে তিনি সংসদে বসেই ‘জরুরি ব্যবস্থা’ নিতে পারতেন।