শ্রীলঙ্কার
পত্রিকা আদাদেরনা জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি (এসএলএফপি), শ্রীলঙ্কা পদুজানা
পেরামুনা (এসএলপিপি), সিলোন ওয়ার্কার্স কংগ্রেসের (সিডব্লিউসি) ৪২ জন আইনপ্রণেতা মঙ্গলবার
অধিবেশনে জোট থেকে বেরিয়ে গিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের ঘোষণা দেন।
বিক্ষোভের
মধ্যে মন্ত্রীসভার সদস্যদের পদত্যাগের পর প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে সর্বদলীয়
সরকার গঠনের যে আহ্বান জানিয়েছে, তাও প্রত্যাখ্যান করেছে বিরোধী দলগুলো। তারা খোদ প্রেসিডেন্টের
পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে এখন।
প্রেসিডেন্ট
গোটাবায়ার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের নেতৃত্বাধীন এসএলপিপির সঙ্গে
শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টিও এতদিন সরকারে ছিল। দলটির নেতা সাবেক প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা
সিরিসেনা মঙ্গলবার রাজাপাকসের জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, “আমাদের দখল জনগণের পক্ষেই
থাকবে।”
জোট
থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে রাজপাকসের দল ‘সংখ্যালঘু’ সরকারে পরিণত হয়েছে। ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে
সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য কোনো অন্তত ১১৩টি আসন থাকতে হয়। সমর্থন হারানোয় সেই ম্যাজিক নম্বর
থেকে পিছিয়ে পেড়েছেন রাজপাকসে।
এর
ফলে পার্লামেন্টে তার সিদ্ধান্ত নেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে, যদিও স্বতন্ত্র সদসরা এখনও
সরকারের প্রস্তাবগুলোকে সমর্থন করে যাচ্ছেন।
রয়টার্স
লিখেছে, বিরোধী দল এবং এমনকি রাজাপাকসের ক্ষমতাসীন জোটের এমপিরাও অনেকে সর্বদলীয় সরকারের
আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে পার্লামেন্টে শক্তি পরীক্ষার মঞ্চ তৈরি করেছেন।
পার্লামেন্টে
যে পরিবর্তন হচ্ছে, সে বিষয়টিকে ইংগিত করে সাংবিধানিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আইনজীবী লুই
নিরঞ্জন গণেনাথন বলেছেন, “আজ দেখুন, সংসদের পুরো কাঠামো বদলে গেছে।”
অর্থনৈতিক
সংকটে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ২০ লাখ মানুষকে খাদ্য ও জ্বালানির চরম সঙ্কটে
ভুগতে হচ্ছে। মূল্যাস্ফীতি পৌঁছেছে রেকর্ড পর্যায়ে।
জ্বালানি
সঙ্কটে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ
প্রকল্পগুলোর জলাধারের পানি বিপজ্জনক মাত্রায় নেমে যাওয়ায় সেখানেও উৎপাদন সঙ্কট দেখা
দিয়েছে। দেশেজুড়ে দৈনিক ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
বৈদেশিক
মুদ্রার রিজার্ভ সঙ্কটে খাদ্য ও ওষুধের দামও হু হু করে বাড়ছে, ফুরিয়ে আসছে এসব পণ্যের
মজুদ। চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি, দুধ কিনতে মানুষকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
গত মাসে জ্বালানি তেল সংগ্রহের লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করার সময় অন্তত দুজনের মৃত্যুর
খবরও এসেছে।
এই
পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কলম্বোতে প্রেসিডেন্ট গোটাবে রাজাপাকসের বাড়ির সামনে শত শত
বিক্ষোভকারী পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালে কারফিউ জারি করা
হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে শুক্রবার জারি করা হয় জরুরি অবস্থা।
দেশটিতে
যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে তা এখন রূপ নিয়েছে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের
দাবিতে।
কলম্বোর
৫৪ বছর বয়সী স্কুলভ্যান ড্রাইভার উপলি করুণাতিলক বলেন, “অনেকের জন্য খাবার যোগানো কঠিন
হয়ে পড়েছে। গ্যাস ও দুধের গুঁড়া পেতে আপনাকে লাইনে দাঁড়াতে হবে। সবকিছুর জন্য লাইনে
দাঁড়াতে হচ্ছে।”
তিনি
বলেন, “এ পরিস্থিতিতে এমনকি ছোট শিশুরাও বলছে, যে প্রেসিডেন্টকে অপসারণ করতে হবে।”
শপথ নেওয়ার পরদিনই নতুন অর্থমন্ত্রীর
পদত্যাগ
চলমান
অস্থিরতার মধ্যে মন্ত্রিসভায় ভাঙন ও গোটাবায়ার রাজপাকসের ভাই অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসের
পদত্যাগের পর সোমবার আলি সাবরিকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু
শপথ নেওয়ার পরদিনই মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন সাবরি।
রয়টার্স
লিখেছে, প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠিতে সাবরি বলেছেন, “আমি অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে অবিলম্বে
পদত্যাগ করছি।”
শ্রীলঙ্কার
মন্ত্রিসভার ২৬ সদস্য রোববার একযোগে পদত্যাগ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে
এবং তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া পদত্যাগ করেননি।