ক্যাটাগরি

আক্রান্ত হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে উত্তর কোরিয়া

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইয়ো জং আরও বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার ওপর হামলা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্য ‘খুব বড় ভুল’ছিল।

শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সুহ ওক বলেছিলেন, তার দেশের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আছে, সেগুলোর পাল্লা, নির্ভুলতা ও শক্তি এত অসাধারণ যে তা ‘দ্রুততম সময়ে ও নির্ভুলভাবে উত্তর কোরিয়ার যে কোনো লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম’।

তবে ইয়ো জং সম্ভবত আগামী মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়া রক্ষণশীল ইয়ুন সক ইয়লকে লক্ষ্য করে হুঁশিয়ারিটি দিয়েছেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ইয়ো জং তার বিবৃতিতে বলেছেন, “পিয়ংইয়ং যুদ্ধের বিরোধী। যুদ্ধ কোরীয় উপদ্বীপকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে।”

পিয়ংইয়ং দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘প্রধান শত্রু’ হিসেবে বিবেচনা করে না বলেও মন্তব্য করেছেন কিম জং উনের বোন।

“কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া যদি কোনো কারণে, আগ বাড়িয়ে হামলার মতো কোনো সামরিক পদক্ষেপের পথ বেছে নেয়, যেমনটা (সুহ ওক) বলেছেন, সেটা ভুল বিবেচনা থেকে হোক বা না হোক, পরিস্থিতি বদলে যাবে।

“তেমন ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়াই উত্তরের হামলার লক্ষ্যস্থলে পরিণত হবে,” বলেছেন ইয়ো জং।

তিনি সিউলকে সতর্ক করে বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী যদি উত্তরের সীমানা লংঘন করে তাহলে তাদেরকে ‘অকল্পনীয় ভয়াবহ বিপর্যয়ের’ মুখোমুখি হতে হবে; উত্তরের পারমাণবিক বাহিনীকে তখন অনিবার্যভাবেই তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।

“পারমাণবিক অস্ত্রধর একটি রাষ্ট্রে আগ বাড়িয়ে হামলা চালানোর দিবাস্বপ্ন বাদ দিলেই দক্ষিণ কোরিয়া এ দুর্ভাগ্য এড়াতে পারবে,” বলেন তিনি।

চলতি বছর উত্তর কোরিয়া শক্তিশালী সব ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা-উৎক্ষেপণ চালানোর পর দুই কোরিয়ার সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শনের মাত্রা বেড়েছে।

নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা থমকে থাকায় ২০১৭ সালের পর পিয়ংইয়ং এবার ফের পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা শুরু করতে পারে বলেও আশঙ্কা সিউল ও ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের।

ইয়ো জং ও উত্তর কোরিয়ার আরেক কর্মকর্তা রোববার সুহ’র মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছিলেন; দক্ষিণ কোরিয়া যদি আগ বাড়িয়ে হামলা চালানোর মতো ‘বিপজ্জনক কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেয়’ তাহলে পিয়ংইয়ং সিউলের গুরুত্বপূর্ণ সব লক্ষ্যস্থল ধ্বংস করে দেবে বলেও সতর্ক করেছিলেন তারা।

উত্তর কোরিয়ার ওপর নজর রাখা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ৩৮ নর্থ প্রজেক্টের বিশ্লেষক র‌্যাচেল মিনই্য়ং লি’র মতে, উত্তরের শীর্ষ নেতার বোনের এই সমালোচনা মূলত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতা ইয়ুন সক-ইয়লকে লক্ষ্য করেই, ‍যিনি পিয়ংইয়ংয়ের হুমকির পাল্টায় দক্ষিণের প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী করার কথা বলেছিলেন।

“উত্তর কোরিয়া এখন পর্যন্ত কর্তৃত্বপূর্ণ জায়গা থেকে ইয়ুনের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকলেও তারা এটা নিয়ে কাজ করছে বলেই মনে হচ্ছে,” বলেছেন তিনি।

মে মাসে ইয়ুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই কোরিয়ার সম্পর্কে যে বাঁকবদলের সম্ভাবনা আছে সে বিষয়ে পিয়ংইয়ং উত্তর কোরিয়ার জনগণকে প্রস্তুত করছে বলে দেশটির কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক মন্তব্যে ইঙ্গিত মিলছে, বলেছেন লি।

মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে চলতি সপ্তাহে ইয়ুনের দলের কিছু প্রতিনিধি ওয়াশিংটনে ছিলেন; তাদের সঙ্গে আলোচনায় মার্কিন কর্মকর্তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সুরক্ষায় তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।