ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি পার্লামেন্টে উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাব যেভাবে বাতিল করেছেন তার বৈধতা নিয়ে মঙ্গলবার শুরু হওয়া শুনানিতে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত ওই নথি তলব করেছে বলে জানিয়েছে ডন।
পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি বেঞ্চ এ শুনানির যুক্তিতর্ক শুনছেন।
‘এই ইস্যুতে যৌক্তিক আদেশ’ দেওয়া হবে বলে সোমবার বলেছিলেন বান্দিয়াল; তবে সেদিন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও অন্যান্য বিরোধীদলের আইনজীবী ফারুক এইচ নায়েকের যুক্তি শুনে শুনানি মুলতুবি করে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবারের শুনানিতে পিপিপির সেনেটর রেজা রাব্বানি আদালতকে পার্লামেন্টের কার্যপ্রণালীর ‘দায়মুক্তির’ আওতা পরীক্ষা করে দেখতে বলেন।
“যা হয়েছে তাকে কেবল বেসামরিক মার্শাল ল’ই অ্যাখ্যা দেওয়া যায়,” বলেছেন তিনি।
রোববার ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি তাকে ‘অবৈধ’ অ্যাখ্যা দিয়ে বলেন কোনো সিদ্ধান্তই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে না।
“অনাস্থা প্রস্তাব ভোটে না দিয়ে বাতিল করা যায় না,” পাকিস্তানের সংবিধানের ধারা ৯৫কে উদ্ধৃত করে বলেন রাব্বানি।
তিনি বলেন, অনাস্থা প্রস্তাবকে খাটো করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিদেশি চক্রান্তের কথা তোলা হয়েছে।
ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশেন ২১ মার্চ শুরু হয়েছিল এবং প্রয়াত এক আইনপ্রণেতার জন্য দোয়া শেষে মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছিল, অতীতে কখনোই এমনটা হয়নি বলেও জানান রাব্বানি।
এই সেনেটর বলেন, রোববার পার্লামেন্টের অধিবেশনে ফাওয়াদ চৌধুরী পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে ওই চিঠি ও বিদেশি চক্রান্তের কথা উল্লেখ করেন, অথচ সেদিনের আলোচ্যসূচিতে এই বিষয়টি ছিলই না।
ডেপুটি স্পিকার যেভাবে প্রমাণ ছাড়াই বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতাদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ অ্যাখ্যায়িত করেছেন তা ঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিরোধীরা পার্লামেন্টের স্পিকার আসাদ কাইজারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল, যা স্পিকারের ক্ষমতা খর্ব করেছিল; অনাস্থা প্রস্তাবের কার্যক্রম চলাকালে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া যায় না বলেও মত তার।
তিনি সর্বোচ্চ আদালতকে অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে ডেপুটি স্পিকার যে আদেশ দিয়েছেন তা খারিজ করে দিতে এবং পার্লামেন্ট পুনর্বহালের অনুরোধ করেন। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের নথি ও ‘হুমকি দেওয়া চিঠিটিও’ হাজির করতে বলেন তিনি।
রাব্বানির পর পাকিস্তান মুসলিম লীগ- নওয়াজের (পিএমএলএন) আইনজীবী মাখদুম আলি খান তার যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি জানান, অনাস্থা প্রস্তাবটি জমা দেওয়া হয়েছিল ১৫২ আইনপ্রণেতার স্বাক্ষরে, প্রস্তাবটি উত্থাপনের পক্ষে ছিলেন ১৬১ আইনপ্রণেতা।
“এরপর, এর কার্যক্রম ৩১ মার্চ পর্যন্ত মুলতুবি করে দেওয়া হয়,” বলেন তিনি।
নিয়ম অনুযায়ী, ৩১ মার্চ ওই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক হওয়ার কথা থাকলেও বিতর্ক হয়নি; ৩ এপ্রিল ভোটও হয়নি, বলেছেন মাখদুম।
পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বিরোধী দলগুলোর জোট বেঁধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পতন যখন অত্যাসন্ন, তখন রোববার নাটকীয় এক পদক্ষেপ নিয়ে অসম্মানজনক বিদায় এড়ান তিনি।
প্রথমে জাতীয় পরিষদে আনা অনাস্থা প্রস্তাব ‘সংবিধানসম্মত নয়’ উল্লেখ করে তা বাতিল করে দেন অধিবেশন পরিচালনাকারী ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। এরপর প্রধানমন্ত্রী ইমরানের প্রস্তাবে জাতীয় পরিষদ বা পার্লামেন্ট ভেঙে দেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
সংবিধান অনুযায়ী, এখন ৯০ দিনের মধ্যে পাকিস্তানে নির্বাচন হতে হবে এবং তা হবে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে নিজেদের মনোনীতদের নাম দেবেন ইমরান খান ও বিরোধীদলীয় নেতা।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে পার্লামেন্টের বিলুপ্তি নিয়ে। বিরোধীরা বলছেন, যেখানে পার্লামেন্টই বিলুপ্ত, সেখানে কে প্রধানমন্ত্রী আর কে বিরোধীদলীয় নেতা? ফলে নতুন করে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়েছে দেশটিতে।
পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর এখন নির্বাচন পরিচালনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কীভাবে গঠিত হবে, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আবার পার্লামেন্টে আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করার ক্ষেত্রে যে সাংবিধানিক যুক্তি দেখানো হয়েছে, সেটাও আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
সব মিলিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতি এখন সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।