ক্যাটাগরি

পাকিস্তান সাংবিধানিক সঙ্কটে

পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর এখন নির্বাচন পরিচালনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কীভাবে গঠিত হবে, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

আবার পার্লামেন্টে আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করার ক্ষেত্রে যে সাংবিধানিক যুক্তি দেখানো হয়েছে, সেটাও আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বলেছেন, সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদকে কারণ দেখালেও ডেপুটি স্পিকার অনাস্থা প্রস্তাব কোনোভাবেই বাতিল করতে পারেন না।

সব মিলিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতি এখন সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। মঙ্গলবার কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিরোধীদের জোট বেঁধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে পাকিস্তানে ইমরান খানের পতন যখন অত্যাসন্ন হয়ে পড়ে, তখন রোববার নাটকীয় এক পদক্ষেপ নেন তিনি।

প্রথমে জাতীয় পরিষদে আনা অনাস্থা প্রস্তাব ‘সংবিধানসম্মত নয়’ উল্লেখ করে বাতিল করে দেন অধিবেশন পরিচালনাকারী ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি।

এরপর ইমরান খানের প্রস্তাবে জাতীয় পরিষদ বা পার্লামেন্ট ভেঙে দেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।

সংবিধান অনুযায়ী, এখন ৯০ দিনের মধ্যে পাকিস্তানে নির্বাচন হতে হবে এবং তা হবে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।

অকালে বিদায় নেওয়া ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রিত্বের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

নতুন প্রধানমন্ত্রী না পাওয়া পর্যন্ত ইমরান খানই পাকিস্তানের দায়িত্বে

তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী পদে সাবেক প্রধান বিচারপতি গুলজারকে চান ইমরান
 

পাকিস্তানের দৈনিক ডন সোমবার জানিয়েছে, সংবিধানের ২২৪ এ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে নিজেদের মনোনীতদের নাম দিতে ইমরান খান ও বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ খানকে চিঠি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আলভি।

চিঠিতে বলা হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে আলোচনা করেই রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করবেন প্রেসিডেন্ট।”

চিঠি পেয়ে তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ইমরান সোমবারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে তার মনোনীত ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতির দপ্তরে জমা দেন বলে ডন জানায়।

ইমরানের সরকারের তথ্যমন্ত্রী ও পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদের নাম প্রস্তাব করে পাঠানো হয়েছে।

গুলজার ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন।

পাকিস্তানের অনেকে এখনও চান ইমরান খানকে। ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের অনেকে এখনও চান ইমরান খানকে। ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের বিরোধী দলের সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের বিরোধী দলের সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট এমন নামের প্রস্তাব মুসলিম লিগ নেতা শাহবাজ শরিফের কাছে চাইলেও সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিরোধী জোট জানিয়েছে বলে ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ইসলামাবাদে মুসলিম লিগ, পিপলস পার্টিসহ বিরোধী দলগুলোর সম্মিলিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি কোনো নামের প্রস্তাব দেবেন না। কারণ প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী সংবিধান ভেঙেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে, বর্তমানে পিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, সংবিধানে বলা আছে যে প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবেন।

“কিন্তু এখন যেখানে পার্লামেন্টই বিলুপ্ত, সেখানে প্রধানমন্ত্রীইবা কে, আর বিরোধীদলীয় নেতাইবা কে?”

এদিকে পিটিআই নেতা ফাওয়াদ বলেছেন, যদি সাতদিনের মধ্যে শাহবাজ কোনো নামের প্রস্তাব জমা না দেন, তাহলে রাষ্ট্রপতি একজনকে ঠিক করে দেবেন।

প্রেসিডেন্ট আলভিকে উদ্ধৃত করে ডন লিখেছে, যদি তত্ত্বাধায়ক প্রধানমন্ত্রী বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেতা তিন দিনের মধ্যে ঠিক করতে না পারেন, তাহলে স্পিকারের কাছে নামের প্রস্তাব চাইবেন তিনি।

তবে সেক্ষেত্রে ওই একই প্রশ্নই উঠবে, কারণ পার্লামেন্টই তো বিলুপ্ত।

সংবিধানের যে অনুচ্ছেদের কথা বলে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব ডেপুটি স্পিকার বাতিল করেছেন, তার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে রোববারই প্রশ্ন তুলেছিলেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

পাকিস্তান আবারও জটিলতার আবর্তে

পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকটের প্রভাব বাকি বিশ্বে কতটুকু
 

পাকিস্তানের সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে বলা আছে- ‘রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ এবং সংবিধান ও আইন মেনে চলা পাকিস্তানের প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক দায়িত্ব’।

ইমরান খান অভিযোগ করে আসছিলেন, তাকে উৎখাতে বিদেশি রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র চলছে। সেই চক্রান্তের অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে।

‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’র ভিত্তিতেই অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি।

এনিয়ে হৈ চৈ উঠলে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল স্বপ্রণোদিত হয়ে এতে হস্তক্ষেপের উদ্যোগ নেন। তিনি বলেন, অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল, পার্লামেন্ট বিলোপসহ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির সব পদক্ষেপই তাদের আদেশের মধ্যে আসবে।

সোমবার সুপ্রিম কোর্টে তা নিয়ে শুনানিতে তিনি ডেপুটি স্পিকারের পদক্ষেপ ঠিক হয়নি বলে মত প্রকাশ করেন বলে পাকিস্তানের সংবাদপত্র দ্য নিউজ জানিয়েছে।

সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানিতে পিটিআই ও বিরোধী জোটগুলোর পক্ষে আইনজীবীরা নানা যুক্তি উপস্থাপন করেন।

ইমরানের দল পিটিআইর আইনজীবী বাবর আওয়ান বলেন, “আমাকে আদালতে একথা বলতে পাঠানো হয়েছে যে আমরা নির্বাচন আয়োজনের জন্য তৈরি।”

প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল।

প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল।

তখন প্রধান বিচারপতি তাকে সতর্ক করে বলেন, বিচারকের সামনে রাজনীতির আলাপ নিয়ে আসবেন না।

পিপিপির আইনজীবী ফারুক এইচ নায়েক শুনানিকালে তাকে এক বিচারক বলেন, “আপনি কি বলেন, স্পিকার কি ঠিক ছিলেন, নাকি বেঠিক কাজ করেছেন?”

জবাবে নায়েক বলেন, “যদি জাতীয় পরিষদের ১০০ সদস্যের ৫০ জনই প্রস্তাবের বিরোধিতা করতেন, তাহলে যদি প্রস্তাবটি তোলা হত, তখন কি ক্ষমতাসীনরা এটা বাতিল করত?”

প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল বলেন, জাতীয় পরিষদের বিধিমালা অনুযায়ী অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটির আগে বিতর্কের জন্য আরও সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল।

স্পিকার সেই সময় দেননি বলে পিপিপির আইনজীবী জানালে এক বিচারপতি বলেন, এটা পদ্ধতিগত ত্রুটি তৈরি করেছে।

শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল বলেন, অনাস্থা প্রস্তাব বৈধ না অবৈধ তা বলার এখতিয়ার কি ডেপুটি স্পিকারের আছে?

“যদি তিনি সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদের কথাও বলেন, তাতেও অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করা যায় না।”

খুব দ্রুতই আদালত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে চায় জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবির আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি।

পাকিস্তানের রেকর্ড অক্ষুণ্ন রাখলেন ইমরান খান
 

পাকিস্তান: প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে বললেন ইমরান

সমর্থকদের রাস্তায় নামতে, দলের এমপিদের পার্লামেন্টে যেতে বললেন ইমরান

অনাস্থা ভোটের ফল কী মেনে নেবেন ইমরান খান?

ইমরানকে হত্যার চক্রান্ত হয়েছে: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

ইমরান খানের রাজনীতির ইনিংস ঝুলছে সুতোয়

মাথা নত করব না, পাকিস্তানকে কারও দাস হতে দেব না: ইমরান খান

বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রমাণ সাংবাদিকদের দেখাব: ইমরান খান