গত ২৯ মার্চ থেকে পানির সরবরাহ লাইনের ক্রটি দেখা দিলে চরম দুর্ভোগে পড়েন রোগীরা।
চৈত্র মাসে উপজেলার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যাওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পটুয়াখালীর উপ-সহকারী প্রকৌশলী দেবব্রত হালদার জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “একটি নতুন পাম্প মেশিন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।”
তবে হাসপাতালের পানির সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে যাবে বলে জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুল মুনয়েম সাদ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আমতলী হাসপাতালে ডায়ারিয়া রোগীর চাপ বাড়ছে প্রতিদিন। কিন্তু পর্যাপ্ত পানির অভাবে তারা ঠিকমতো টয়লেট ব্যবহার করতে পারছেন না। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের টয়লেটে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। রোগীদের স্বজনরা বাইরে থেকে বালতি ভরে পানি এসে গোসলসহ টয়লেটের কাজে ব্যবহার করছেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে হাসপাতালজুড়ে।
রোগীদের নতুন ভবন থেকে পুরাতন ভবনে সরিয়ে নেওয়া হলেও স্থান সংকুলানও হচ্ছে না। বেড না পেয়ে অনেক রোগীর ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে। ফলে মেঝেতেও পা ফেলার জায়গা নেই। তাছাড়া পুরাতন ভবনে বাথরুম কম থাকায় কেউই ঠিকমত গোসল ও শৌচকাজ সারতে পারছেন না।
আমতলী হাসপাতালের নার্স রেবা বলেন, “৫০ শয্যার এই হাসপাতালের নতুন ভবনের পানির সমস্যা আজকের নয়। গত বছরের ২ এপ্রিল থেকে নতুন ভবনের পানি সরবরাহের পানির মূল পাম্পটি বিকল হয়ে যায়, সেই থেকে সেটি অকেজই আছে।
এত দিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মুনয়েম সাদের নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে মসজিদের গভীর নলকূপের সঙ্গে একটি মোটর বসানো হয়। তবে ওই পদ্ধতিতেও প্রয়োজনের তুলনায় পানি কম পাওয়া যেত।”
ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছাহেরা বেগমের মা জয়নব বেগম বলেন, “ও বাবা হাসপাতালে ঠিক মত পানি পাইনা। দেহেনতো এহন কি সমস্যায় আছি।”
রিনা বেগম বলেন, “পানির অভাবে ঠিকমত গোসল এবং কাপর ধুতে পারছি না।”
এ সমস্যার কথা জানালেন হাসপাতালে ভর্তি কুকুয়া গ্রামের রেভা বেগম, ফাতেমা বেগম ও আবদুলালাহ।
হাসপাতালে পানি না থাকায় বিপাকে পড়েছেন রোগীর স্বজনরাও। মাহামুদুল হাসান নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, “হাসপাতালে পানি নাই। বাইরে থেকে পানি আইনা সব কাজ করতে অয়।”
এদিকে হাসপাতালের চারটি আবাসিক ভবনে থাকা চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্যরাও পড়েছেন বিপদে। সেখানে পানি সরবরাহ একেবারে বন্ধ না হলেও পাওয়া যাচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
প্রচণ্ড গরমে পানির অভাবে খুই কষ্টে আছেন বলে জানালেন আবাসিক ভবনে বসবাসরত নার্স সালমা, মোর্শেদা ও আঁখি।
তারা বলছেন, হাসপাতালের পানি তোলার পাম্প মেশিনটি নষ্ট থাকায় এখন তারা নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান না। বিকল্প ভাবে যে পানি সরবরাহ করা হয় তা দিয়ে রান্নাবান্না এবং ধোয়া মোছার কাজও ঠিকমত হয় না।
এদিকে গত এক বছর ধরে হাসপাতালের মূল পাম্প অকেজো হওয়ার বিষয়টি একাধিকবার ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুল মুনয়েম সাদ জানান।
তিনি বলেন, “নতুন পাম্প বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখনো সমস্যা সমাধানে আরো ৮-১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।”