ক্যাটাগরি

‘ব্যবসায়ী বলেই আমার অপরাধ’: বাণিজ্যমন্ত্রী

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির সংসদ সদস্যরা ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ ‘যথেষ্ট নয়’ দাবি করে তার ব্যবসায়ী পরিচিতি নিয়েও কথা তোলেন।

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, “তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে হইচই হল। ১৫ দিনে সিন্ডিকেট এক হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। সিন্ডিকেট হল সরকার। সরকার আর সিন্ডিকেটের মধ্যে পার্থক্য নেই।”

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “সাধারণ মানুষ এফেকটেড হচ্ছে। তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কঠোরভাবে বাজার নজরদারি করতে হবে। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সিন্ডিকেট মূল্যবৃদ্ধি করতে পারে না।”

তিনি বলেন, “বলা হয় যুদ্ধের কারণে দাম বেড়েছে। যেসব পণ্য আমদানি করা হয় সেগুলোর দাম বাড়তে পারে। যেগুলো যুদ্ধের আগে আমদানি করা হয়েছে এবং যেগুলো দেশি পণ্য সেগুলোর কেন দাম বাড়বে।”

প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও নিত্য পণ্যের দাম কমানোর দাবি জানান দলটির মহাসচিব।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “সাধারণ মানুষ এখন পুষ্টিমানের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলে যে লেবু ২ টাকা সেটা ঢাকায় ২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যমন্ত্রীকে আবার যুদ্ধ করতে হবে।”

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, “গ্যাসের অভাবে ঢাকায় হাহাকার চলছে। গ্যাসের দাম, তেলের দাম সব বাড়ানো হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। কিন্তু সেখানে স্বচ্ছতার অভাব আছে।”

তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা জনপ্রতিনিধি হয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন কি না তা নিয়ে পশ্ন আছে। ক্ষমতার বলয়ে থেকে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। তারেক রহমান লন্ডন থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছেন, বিএনপির কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, এসব অপ্রাসঙ্গিক কথা না বলে সরকারকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।”

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, “বাণিজ্যমন্ত্রী সজ্জন মানুষ। কিন্তু তিনি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। যে কারণে প্রায় সময় সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। মন্ত্রী একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী, কিন্তু কেন তিনি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না?”

তিনি বলেন, “সত্য স্বীকার করতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। সিন্ডিকেট করে তেলের দাম বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি।”

পীর ফজলুর রহমান বলেন, “আজকে সংবাদপত্রে এসেছে তিনি (বাণিজ্যমন্ত্রী) গতকাল বাজারে গিয়েছেন এবং তিনি ২৮ টাকা কেজিতে ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন।

“এখন মাননীয় মন্ত্রী যদি ঘোষণা দিয়ে একটু কাঁচা বাজার, সবজি বাজারসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে যেতেন, মানুষও ওই বাজারে যেতে পারত এবং মন্ত্রীর মতো কম দামে জিনিস কিনতে পারত।কারণ উনি যতই ভ্যাট কমিয়ে মূল্য কমানোর চেষ্টা করছেন, প্রকৃতপক্ষে বাজারে পণ্যের দাম অত কমে নাই।”

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, “২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হয়। তার অনেক আগে এই সংসদ অধিবেশনে তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছিলেন।

“দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে যুদ্ধকে সামনে নিয়ে আসলে হবে না। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মূল্য বাড়িয়ে পকেট কেটে অনেক টাকা নিয়ে গেছে।”

মোকাব্বির খান বলেন, “বাণিজ্যমন্ত্রী দেশের শীর্ষস্থানীয় সফল ব্যবসায়ী। মন্ত্রী হিসাবে হিসেবে তিনি কতটুকু সফল সেটা বলতে না পারলেও, বাজারে গেলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সেটি ভালোভাবে জানা যাবে।”

তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার দাবি করে তারা ব্যবসাবান্ধব। যে সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী একজন ব্যবসায়ী, সেই সরকার জনবান্ধব নয়, ব্যবসাবান্ধব হওয়াই স্বাভাবিক।”

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, “অ্যাপোলো (এভারকেয়ার) হাসপাতালে গেলে লক্ষাধিক টাকা বিল এলে, বাজারে গেলে বেশি দাম দেখে বাণিজ্যমন্ত্রীর কথা মনে পড়ে।”

জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, “সরকার ধরলে দাম কমে আবার যখন সরকার শিথিলতা দেখায়, তখন আবার দাম বাড়ে। একটার দাম কমলে আরেকটার দাম বাড়ে এটা একটা লুকোচুরি খেলার মতো।”

ব্যবসায়ী হওয়া কি অপরাধ?

বিরোধী সংসদ সদস্যদের অভিযোগের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, তিনি ব্যবসায়ী এটি বেশি করে বলা হয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন ব্যবসায়ী হওয়া কি অপরাধ?

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি বরাবরই লক্ষ্য করি একটা ব্যাপার, কোনো কোনো সদস্য আমার মন্ত্রণালয়ের কোনো কথা বলতে গেলে, প্রথমেই বলেন যে বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে ব্যবসায়ী সেহেতু সেই দিকটাকেই বেশি করে দেখানো হয়।”

টিপু মুনশি বলেন, “ব্যবসা করি আজকে ৪০ বছর, রাজনীতি করি আজকে ৫৬ বছর। ৬৬ সাল থেকে শুরু করেছি, কিন্তু রাজনীতিবিদ হতে পারি নাই। এই ঢাকা শহরে অর্ধেকের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম ৭৩ সালে। ৬৯ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। এই সংসদ ভবন যেখানে সেখানকার সভাপতি ছিলাম। বাবার সাথে মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়েছি। এরকম উদাহরণ খুব একটা পাবেন না।

“কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার, উকিল যখন পার্লামেন্ট মেম্বার হয়, ডাক্তার যখন হয়, তাকে কেউ বলে না যে উকিল কেন আসছে? কিন্তু আমি ব্যবসায়ী বলে আমার অপরাধ।”

যুদ্ধের কারণে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে, এটা তিনি কখনও বলেননি দাবি করে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, প্রতি মাসে তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। এখন বিশ্ব বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে।

মন্ত্রী বলেন, “সরকার কোথাও ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে না। ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে। যে কেউ চাইলে তেল আমদানি করতে পারে। সরকার সিন্ডিকেট এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।

“একটি টিসিবির ট্রাক থেকে আড়াইশ মানুষকে পণ্য দেওয়া হয়। ছবি দেখানো হয়, পণ্যের জন্য মানুষ দৌড়াচ্ছে। ৩০০ জন লাইনে দাঁড়ালে ৫০ জন পাবেন না। বাকি ২৫০ জন যে পণ্য পেয়েছেন সেটা দেখানো হয় না।”

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “সিন্ডিকেট বলে যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা কেউ রাজনীতি করেন না, তারা কেউ এমপি নন। সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত ফলোআপ করছেন।”