রয়টার্স জানিয়েছে,
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার দেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে রাশিয়ার সদস্য পদ স্থগিত করতেও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদকে আহ্বান জানাবে।
তবে রাশিয়া মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এক বৈঠকে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যায় জড়িত থাকার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা এ বিষয়ে ‘বাস্তব প্রমাণ’
তুলে ধরবে।
এদিকে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন,
রুশ বাহিনী এতদিন যেসব এলাকা
দখল করে রেখেছিল, সেখানে আরও মৃতদেহ মিলতে পারে।
ইউক্রেইনের বুচা শহরের হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য দাবি তোলা জেলেনস্কি নিজেও নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য দেবেন।
ভিডিও বার্তায়
তিনি বলেন,
“এটা (বুচা) শুধু একটা শহর। রাশিয়ার বাহিনীর দখলে থাকা ইউক্রেইনের অনেকগুলো জনপদের একটি এটি। এখন আমরা জানতে পারছি বরোদিয়ানকা
(বুচা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে) এবং অন্য অনেক দখলমুক্ত হওয়া ইউক্রেইনীয় শহরে হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।”
গত সপ্তাহে রুশ বাহিনীকে রাজধানী কিইভের উত্তর অংশ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এখন তারা ইউক্রেইনের দক্ষিণ ও পূর্ব অংশে অভিযান জোরদার করেছে। আর ইউক্রেইনীয় বাহিনী ছয় সপ্তাহের যুদ্ধের পর বুচা ও অন্যান্য এলাকার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে শুরু করেছে।
বুচায় গণকবর উন্মোচনের পর দেখা গেছে সেখানে যাদের দাফন করা হয়েছে তাদের খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। পিছমোড়া করে হাত বাঁধা লাশের মাথায়
গুলির চিহ্নও পাওয়া গেছে।
বুচার পরিস্থিতি
আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলেছেন,
তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বুচার বিষয়ে কথা বলেছেন এবং জোর দিয়েছেন যে রাশিয়াকে ‘যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করতে’ দরকারি তথ্য প্রমাণ সংগ্রহে জাতিসংঘের প্রক্রিয়াগুলো ব্যবহার করবে ইউক্রেইন।
ইউক্রেইনের উত্তরাংশ থেকে সেনা প্রত্যাহারকে মস্কোর পক্ষ থেকে শান্তি আলোচনার সুবিধার জন্য নেওয়া পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ইউক্রেইন ও পশ্চিমাদের দাবি প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেদ করতে না পেরে উল্টো পাল্টা আক্রমণে নাজেহাল হয়ে কিইভ দখলের চেষ্টা বাদ দিয়েছে ক্রেমলিন।
সোমবার ইউক্রেইন ও রাশিয়ার মধ্যে আবারও শান্তি আলোচনা হওয়ার কথা। তবে এ বিষয়ে কোনো পক্ষ থেকেই বিস্তারিত জানা যায়নি।
জার্মানির চ্যান্সেলর উলাফ শুলজ সোমবারই বলেছেন,
বুচার হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তার সমর্থকদের ‘ফল ভোগ করতে হবে’। তিনি জানান, মিত্র দেশগুলো আগামী দিনগুলোতে মস্কোর বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের বিষয়ে একমত হয়েছে।
জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান জানিয়েছেন,
এ সপ্তাহেই মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন অবরোধ আরোপ করতে যাচ্ছে ওয়াশিংটন।
ইউক্রেইনে নৃশংসতার তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের জন্য তদন্তকারী ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক দল গঠন করার কথাও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
ফ্রান্স ও জার্মানি জানিয়েছে তারা রাশিয়ার কূটনীতিকদের বহিষ্কার করবে। জবাবে রাশিয়াও পশ্চিমা দূতাবাসগুলোর জন্য তাদের দরজা বন্ধ করে দেবে বলে জানিয়েছেন সেদেশের নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ।
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিন লামব্রেখট বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত অবশ্যই রাশিয়ার গ্যাস নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আলোচনা করা। যদিও অন্য কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানের পক্ষে, কারণ এটা ইউরোপজুড়ে জ্বালানি সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
এদিকে সোমবারও ইউক্রেইনের বন্দরনগরী মারিউপোলের পশ্চিমে মিকোলায়েভ শহরে গোলাবর্ষণে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে এক শিশুও রয়েছে। আহত হয়েছেন ৪৬ জন।