শিশুর ওপর সহিংসতা বাড়ার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক তুলে ধরে
এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন ইউনিসেফ ছাড়াও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেল ইউনিসেফ, ওয়ার্ল্ড ভিশন এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এর আয়োজনে এক আলোচনাসভায়
এমন সতর্কবার্তা উঠে আসে।
বিরূপ আবহাওয়া, বন্যা, নদীভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ
পরিবেশগত অভিঘাতের কারণে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কোটি শিশুর ঝুঁকিতে পড়ার তথ্য আসছে বিভিন্ন
পরিসংখ্যানে।
ইউনিসেফের চিলড্রেন্স ক্লাইমেট
রিস্ক ইনডেস্কে বাংলাদেশের ১৫তম অবস্থান এবং শিশুদের ঝুঁকিতে পড়ার বিষয়টি তুলে ধরেন
ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান ন্যাটালি ম্যাকাউলি।
বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সুনামগঞ্জ শহরের পশ্চিম হাজীপাড়া এলাকার মানুষ । ছবি: মাহমুদ জামান অভি (ফাইল ছবি)
“বাংলাদেশে শিশুরা পরিবেশ বিপর্যয়ে
কতটা ঝুঁকিতে পড়েছে তার জন্য এই সূচকই যথেষ্ট। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের শিশুরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে, ভাসমান হয়ে পড়ছে।
“তারা ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে জড়িয়ে
পড়ছে, বাল্যবিয়ে হচ্ছে। সহিংসতার শিকার হওয়া এবং সহিংসতার কারণে মৃত্যুর সাথেও জলবায়ু
পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউনিসেফের
প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, “জলবায়ু সংকটে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা।
“সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে থাকা
শিশুরা শহরের বস্তিতে বাস করছে। তাদের অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে এবং বাল্যবিয়ের শিকার
হচ্ছে, এমনকি যৌনকর্মীতে পরিণত হচ্ছে।”
শিশুদের ওপর সহিংসতা জনস্বাস্থ্য
এবং অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলবে বলে আলোচনায় জানান বাংলাদেশে সংস্থাটির
শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান
ন্যাটালি ম্যাকাউলি।
তবে সরকার এবং বেসরকারি উন্নয়ন
সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
জলবায়ু সংকট নারী এবং শিশুদের আরও বিপন্ন করে তুলছে বলে অনুষ্ঠানে জানান আইইউসিএনের
কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন।
তিনি বলেন, “পরিবেশগত অবক্ষয় ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সম্পদের ঘাটতি, সংঘাত
ও বাস্তুচ্যুতি কষ্টার্জিত উন্নয়ন অর্জনগুলোর উপর প্রভাব ফেলছে।”
দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে- এমন জলবায়ু বিষয়ক সমস্যাগুলো
সমাধানে অংশীজনদের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতার তাগিদ দিয়েছেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের
জাতীয় পরিচালক সুরেশ বার্টলেট।
সিসিম কর্মশালার
নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তরুণ প্রজন্মের দিকে
নজর দেওয়া এবং তাদের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই যদি ছেলেমেয়েরা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা পায়,
তাহলে তারা স্মার্ট সিটিজেন হয়ে উঠবে। তখন নিজেরা সে সমাধানের পথ খুঁজে বের করবে, দূষণ
কমাবে।
“সেকারণে সব শিশুদের কাছে আমাদের পৌঁছাতে
হবে, তাদের জানাতে হবে জলবায়ু পরিবর্তন কী? কেন হয়? কীভাবে তা মোকাবেলা করা যায়?”
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র
রিসার্চ ফেলো তৌফিক খান, ইউএসএইড বাংলাদেশের ডেপুটি প্রোগ্রাম অফিস ডিরেক্টর ডোরা প্ল্যাটেভিচ,
ইউএনএফপিএ’র কক্সবাজার কার্যালয়ের লিঙ্গভিত্তিক
সহিংসতা উপ-শাখার সমন্বয়ক সোফিয়া ক্যানোভাস আলোচনায় অংশ নেন।