ক্যাটাগরি

`এত লাশ জমে আছে’, কোভিডে দিশেহারা হংকংয়ের শবাগারগুলো

চীন নিয়ন্ত্রিত শহরটিতে এখন ঐতিহ্যবাহী কাঠের কফিনও ফুরিয়ে আসছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

“এত লাশ একসঙ্গে জমে থাকতে কখনো দেখিনি আমি,” বলেছেন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালক লোক চুং।

৩৭ বছর বয়সী চুংকে এখন দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে; মার্চেই তাকে ৪০টির মতো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করতে হয়েছে। অথচ আগে মাসে গড়ে ১৫টির মতো আয়োজন করা লাগতো।

“পরিবারের সদস্যদের এতটা বিপর্যস্ত, এতটা হতাশ, অসহায় কখনো দেখিনি,” রয়টার্সকে বলেছেন কালো টি-শার্টের সঙ্গে ধূসর স্যুট পরিহিত চুং।

সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকংয়ে চলতি বছর করোনাভাইরাসের পঞ্চম ঢেউ আঘাত হানার পর ১০ লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজারের বেশি মানুষের।

রোগীদের পাশের জরুরি কক্ষগুলোতে লাশের স্তূপের দৃশ্য অসংখ্য মানুষকে স্তম্ভিত করেছে। শহরের মর্গগুলো লাশে ঠাসা অবস্থায় আছে।  

মৃত্যুসনদ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পেতে দীর্ঘ অপেক্ষাও সৎকারের কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, বলেছেন চুং।

তিনি জানান, ১ মার্চ মারা যাওয়া এক নারীর মৃত্যু সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র এখনও পায়নি তার পরিবারের সদস্যরা; ওই কাগজপত্র না পেলে তারা মৃতদেহটি সৎকারের জন্য নিতেও পারছে না।

পরকালে কাজে আসতে পারে বিশ্বাস থেকে চীনে সাধারণত শেষকৃত্যে বাড়ি-গাড়ি ও মৃতব্যক্তির পছন্দের বিভিন্ন জিনিসের কাগজের রেপ্লিকা পোড়ানো হয়; এখন এই কাগজের রেপ্লিকারও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

লাইফআর্টের একটি কারখানার শ্রমিকরা পরিবেশবান্ধব কফিন বহন করছেন। ছবি: রয়টার্স

লাইফআর্টের একটি কারখানার শ্রমিকরা পরিবেশবান্ধব কফিন বহন করছেন। ছবি: রয়টার্স

এগুলোর মতো অসংখ্য পণ্য হংকংয়ে যায় চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শেনজেন থেকে; কিন্তু ওই শহরটিকেই এখন কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় লড়তে হচ্ছে। প্রাণঘাতী এই রোগের কারণে হংকংয়ের সীমান্ত অনেকাংশেই বন্ধ রয়েছে।

শবাগারের অনেক কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণেও মৃতদেহ সৎকার কার্যক্রম বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন আরেক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালক বয়সী হেডস চান (৩১) ।

হংকংয়ে প্রতিদিন যে আড়াইশ থেকে তিনশ কফিন লাগে তার ৯৫ শতাংশের বেশি চীন সরবরাহ করে বলে জানিয়েছেন শহরটির খাদ্য ও স্বাস্থ্যবিধি কর্মকর্তা আইরিন ইয়ং।

চীনের মূলভূখণ্ডের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শহরটির সরকার সমন্বয় করায় কেবল মার্চের ১৪ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যেই হংকং তিন হাজার ৫৭০টি কফিন পেয়েছে।

ইয়ংয়ের বিভাগকে এখন ৬টি সৎকার কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা চালাতে হচ্ছে; দিনে প্রায় ৩০০-র মতো সৎকার করতে হচ্ছে, এই সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ।

মৃতদেহের চাপ সামলাতে সরকারি মর্গগুলোকেও লাশ রাখার জায়গা এক হাজার ৩৫০ থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ছয়শ করতে হয়েছে।

পরিবেশবান্ধব কফিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লাইফআর্ট এশিয়া সঙ্গে অংশীদারিত্বে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফরগেট দি নট ৬টি সরকারি হাসপাতাকে ওই ধরনের ৩০০ কফিন ও প্রিজারভেটিভের এক হাজার বাক্স দেবে।

পুনর্ব্যবহৃত কাঠের ফাইবারের সঙ্গে কার্ডবোর্ড দিয়ে তৈরি এসব কফিন ২০০ কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে পারে।  

যখন কফিন বা লাগের ব্যাগে দেখতে পাউডারের মতো প্রিজারভেটিভগুলো দেওয়া হয়, সেগুলো গ্যাসে পরিণত হয়ে লাশগুলোকে পাঁচ দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক রাখে।

“এখন ঝড়ের চোখ বা কেন্দ্রে আছি আমরা আর এই ঝড়ের মাঝেই সাময়িক বিরাম দেওয়ার চেষ্টা করছি,” বলেন লাইফআর্ট এশিয়ার প্রধান নির্বাহী উইলসন টং।