বুধবার জাতীয়
সংসদের প্রশ্নোত্তরে নওগাঁ-২ আসনের শহীদুজ্জমান সরকারের প্রশ্নের উত্তরে সরকার
প্রধান এ কথা জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর
প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের উভয় প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোড ও সার্ভিস এরিয়ার কাজ
শতভাগ শেষ হয়েছে। মূল সেতুর ভৌত অগ্রগতি ৯৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।
বর্তমানে
সেতুতে কার্পেটিং, ভায়াডাক্ট কাপের্টিং, ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন, মূল সেতু ও ভায়াডাক্টের
মুভমেন্ট জয়েন্ট, ল্যাম্পপোস্ট, অ্যালুমিনিয়াম রেলিং, গ্যাসের পাইপলাইন, ৪০০ কেভিএ
বিদ্যুৎ এবং রেললাইন নির্মাণের কাজ চলছে।
“২০২২ সালের
শেষ নাগাদ পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে
চলছে,” বলেন সরকারপ্রধান।
সড়ক পরিবহন ও
সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবশ্য এর আগে বলেছিলেন, এ বছর জুন মাসেই পদ্মা বহুমুখী
সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে।
সংসদের
প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমান সরকারের সাহসী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে
সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে
যাচ্ছে এর ইতিহাসে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং প্রকল্পসমুহের একটি।”
বিশ্ব ব্যাংকের
সঙ্গে দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ঘোষণা দিয়েছিলেন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে বাংলাদেশ। এরপর ২০১৫
সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। ঠিক পাঁচ বছরের মাথায়
পূর্ণ আকৃতি পায় স্বপ্নের সেতু, যুক্ত হয় পদ্মার দুই পাড়।
৬ দশমিক ১৫
কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে সংশোধিত ব্যয় বেড়ে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা
হয়েছে বলে সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী।
নিত্যপণ্যের দাম ‘কমেছে’
সরকারি দলের
কাজিম উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, “মহামারীতে সৃষ্ট
অর্থনৈতিক মন্দার কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে সব দেশেই দ্রব্যমূল্য ভীষণভাবে
বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে অনাকাঙ্খিতভাবে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
“এর কুফল
হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে জনবান্ধব বর্তমান সরকার
দেশের নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সম্ভাব্য সব রকম পদক্ষেপ গ্রহণ
করেছে।”
সরকারপ্রধান এ
সময় নিত্যপণের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন,
“টিসিবির বিক্রয় কার্যক্রম চলমান থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার মূল্য
উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
“সরকারের
কার্যক্রমের ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রয়েছে। পবিত্র
রজমান মাসে নিত্যপণ্য সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আশা করি।“
প্রশ্নোত্তরে
প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি নিত্যপণ্যের বর্তমান ও আগের বাজারমূল্যের একটি তুলনামুলক
চিত্র সংসদে তুলে ধরেন।
টিকার সংগ্রহ কত
নোয়াখালী-২
আসনের মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বিনামূল্যে কোভিড
টিকা দেওয়া শুরুর পর থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার ২৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮৪ হাজার ১২০ ডোজ
টিকা সংগ্রহ করেছে।
ওই সময় পর্যন্ত
১২ কোটি ৮০ লাখ ৭০ হাজার ৯৪৮ জনকে প্রথম ডোজ এবং ১১ কোটি ৪২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫৬ জনকে
দ্বিতীয় ডোজসহ মোট ২৪ কোটি ২৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৪ জনকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
তাদের এক কোটি ৮১ হাজার ১৯৩ জন বুস্টার ডোজ পেয়েছেন।
টিকার দাম নিয়ে
প্রশ্নের উত্তরে সরকারপ্রধান বলেন, “দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে
নেগোসিয়েশন করে বিশ্ববাজারে প্রচলিত দরের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম মূল্যে স্বচ্ছতা
নিশ্চিত করে টিকা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। তবে টিকা কেনার ক্ষেত্রে নন-ডিসক্লোজার
এগ্রিমেন্ট থাকায় টিকার মূল্য বা এ সংক্রান্ত ব্যয় প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।”
বিদেশে গেছেন ৯ লাখ ৩৬ হাজার কর্মী
সংসদ সদস্য
মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৭৬
লাখ ৭০ হাজার ৩৯৯ জন কর্মী বিদেশ গেছেন।
“করোনা
অতিমারীর সময়েও নয় লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৫ জন কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থান লাভ করেছেন।”
ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের পেনশনের আইন প্রক্রিয়াধীন
লক্ষ্মীপুর-২
আসনের নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে
টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় এনে তাদের আর্থিক সুরক্ষা
নিশ্চিত করার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
“এ লক্ষ্যে
সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়ন ও ওই আইনের আওতায় একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের
বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”