ক্যাটাগরি

ফেনীতে প্রাথমিকে পৌনে ৩০০ শিক্ষক পদ শূন্য

কোভিড মহামারীর মধ্যে কম জনবল নিয়ে অনলাইনে শ্রেণি
কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হলেও ১৫ মার্চ স্কুলগুলোয় পুরোদমে ক্লাস শুরু হওয়ায় তা
আর সম্ভব হচ্ছে না।

জনবলের অভাবে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান সমস্যা ছাড়াও প্রশাসনিক
বিভিন্ন কাজেও স্থরিবতা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের
মধ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

জেলা
প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ফেনী সদর উপজেলা, সোনাগাজী,
দাগনভূঞা, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী এবং পরশুরাম উপজেলায় ৫৩টি
প্রধান শিক্ষক এবং ২২১টি সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে।  

এসব শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষক চেয়ে ঢাকায় তালিকা
পাঠানো হয়েছে বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম জানান।

ফেনী সদর উপজেলার উত্তর শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন জানান, তার ২০ বছরের চাকরি জীবনে ১৫
বছরই ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক’ হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

“২০১৭ সালে আমার স্কুলে মো. সাহাব উদ্দিন নামে একজন
প্রধান শিক্ষক জয়েন করলেও চলতি বছরের মার্চ মাসে তিনি চাকরি থেকে অবসরে চলে যান।”

বর্তমানে মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয় চালাচ্ছেন
জানিয়ে এই প্রধান শিক্ষক বলেন, “আগামী জুন মাসে আমার স্কুলের সহকারী শিক্ষক
উম্মে সালমা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে চলে যাবেন। তখন দুইজন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়
পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।”

রাজাপুর ধলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ
সহকারী শিক্ষককের পদ খালি পাঁচটি।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় দুবছর পর স্কুল
খোলায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়লেও, জনবল না বাড়ায় সমস্যা হচ্ছে জানান এর ভারপ্রাপ্ত
প্রধান শিক্ষক নিপুন বৈদ্য।

“আমি সহকারী শিক্ষক হয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের
দায়িত্ব পালন করছি। করোনা পেন্ডামিকের আগে আমার স্কুলে ৭০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও
চলতি বছর ৮৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে। প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হচ্ছে। এতে করে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”

এমন পরিস্থিতিতে উত্তর শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী আয়েশার বাবা আবদুল্লাহ আল জহির উদ্দিন মেয়ের
লেখাপড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন।

“বিদ্যালয়ে শিক্ষককের পদ শূন্য থাকায় নিয়মিত ক্লাস
হয় না। মেয়ের সামনে পিইসি পরীক্ষা। নিয়মিত ক্লাস না করলে রেজাল্ট ভালো হবে কীভাবে?”

এই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির তানিয়া দেবনাথ বলেন, “মহামারীতে
ক্লাসের শিক্ষার্থী সংখ্যা কমায় নিয়মিত ক্লাস হয় না। আমাদের বিদ্যালয়ে পঞ্চম
শ্রেণিতে আমিসহ মাত্র দু’জন শিক্ষার্থী রয়েছি।”

ছোট ধলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই
৭/৮ বছর ধরে। ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে থাকা মো. শাহজাহান বলেন, “প্রধান
শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করাতে কিছুটা ব্যাঘাত
ঘটে।”

জেলা শিক্ষা কার্যালয় বলছে, ২০১২ সালের পর দেশের সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় আর সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বিলম্বিত হয়েছে
সহকারী শিক্ষক নিয়োগও। সরকারি কর্মকমিশনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া
শুরু হলেও কোভিড মহামারীর ফাঁদে তা আবারও আটকে যায়।

স্বল্প জনবলে বিভিন্ন বিদ্যালয় চালানোর তথ্য জানিয়েছেন
সোনাগাজী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুর রহমান।

তিনি বলেন, “উপজেলার দক্ষিণ চরচান্দিয়া সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়, পালগিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
চলছে দুজন করে শিক্ষক দিয়ে।”

এ ছাড়া দাগনপাড়া মোশাররফ হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
জয়নাল আবেদীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হলেও, এসব বিদ্যালয়ে
প্রধান শিক্ষক হয়ে কেউ এখন পর্যন্ত আসেননি। কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে এসব
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম।

একই ধরনের সমস্যার কথা জানান ফেনী সদর উপজেলা শিক্ষা
কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান।

তিনি বলেন, প্রতি বছরই অনেক শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন অথচ
প্রাথমিকে দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি ও নিয়োগ বন্ধ থাকায় শিক্ষক সংকটের কোনো সুরাহা
নেই।

সাইফুর রহমান বলেন, “প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকায়
তারা দাপ্তরিক কাজ ও প্রশাসনিক কাজ সুচারুভাবে করতে হিমশিম খাচ্ছে।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে নিয়োগ ও পদোন্নতির নিয়ম
তুলে ধরেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম।

“সরকারি বিধি মোতাবেক ৬৫ ভাগ সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি
পেয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। ৩৫ ভাগ নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক বছর
ধরে পদোন্নতি বন্ধ থাকায় প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।”

তবে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া
সম্পন্ন হলে শিক্ষক সংকট কেটে যাবে বলেও জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা
কর্মকর্তা।