মঙ্গলবার গভীর রাতে জারি করা এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ ঘোষণা দিয়ে তা ৫ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন।
“আমি, গোটাবায়া রাজাপাকসে, সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট, এতদ্বারা গেজেটটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি যা ০৫ এপ্রিল ২০২২ মধ্যরাত থেকে কার্যকর হবে,” গেজেটে এমনটি বলা হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে গণঅসন্তোষে দেখা দেওয়া বিক্ষোভ ও সহিংসতার পর প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া ১ এপ্রিল দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। এর আগের দিন রাতে গোটাবায়ার ব্যক্তিগত বাসভবনের সামনে কয়েক হাজার লোক জড়ো হয়ে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ দেখায়, পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় তারা।
জরুরি আইন জারির ফলে শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা বাহিনীগুলো যে কোনো ধরনের অস্থিরতা দমনে ব্যাপক ক্ষমতা পেয়েছিল। কিন্তু জরুরি অবস্থা ও কারফিউ সত্ত্বেও প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে। ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করে ক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীরা অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান দাবি করতে থাকে।
গণঅসন্তোষের মধ্যে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন জোটেও ভাঙন দেখা দেয়। মঙ্গলবার পার্লামেন্ট অধিবেশন চলাকালে ৪২ জন আইনপ্রণেতা ক্ষমতাসীন জোট থেকে বেরিয়ে গিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের ঘোষণা দেন। এতে দেশটির ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ার ক্ষমতাসীন জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়।
রয়টার্স বলছে, রাজনৈতিকভাবে সম্ভাব্য পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে প্রেসিডেন্টের বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসেকে সরিয়ে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া অথবা আগাম নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়া।
তবে কী পরিকল্পনা করা হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তার কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবারও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে কয়েক ডজন প্রতিবাদকারী জড়ো হয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, রাজধানী কলম্বোয় পার্লামেন্টের কাছে নম্বরবিহীন মোটরসাইকেলে করে মুখোশ পরা অ্যাসল্ট রাইফেলধারী একদল সেনাকে সরকারবিরোধী একটি প্রতিবাদ মিছিলের সঙ্গে দেখা গেছে। স্পেশাল ফোর্সের এই সেনাদের থামায় পুলিশ। এতে ওই সশস্ত্র সেনাদের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের সংঘর্ষের উপক্রম হয়।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং দ্রুত ঘটনা তদন্ত করে দেখার জন্য শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা প্রধান শাভেন্দ্র সিলভার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল জানিয়েছে, তারা শ্রীলঙ্কার ক্রমবর্ধমান নাজুক পরিস্থিতির ওপর গভীরভাবে নজর রাখছে।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কা তাদের নরওয়ে ও ইরাক দূতাবাস এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে নিজেদের কনস্যুলেট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, তারা দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।