বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে। প্রস্তাবের পক্ষে ৯৩টি ভোট পড়ে। বিপক্ষে পড়ে ২৪ ভোট। ৫৮ দেশ ভোট দান থেকে বিরত থাকে।
জেনেভা ভিত্তিক জাতিসংঘের ৪৭ সদস্যের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে রাশিয়াকে বাদ দিতে প্রস্তাবের পক্ষে ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন প্রয়োজন ছিল।
৫৮ দেশ ভোট দান থেকে বিরত থাকায় তাদের অনুপস্থিত বলে বিবেচনা করা হয়। ফলে প্রস্তাবের পক্ষে ৯৩ ভোট পড়ায় তা দুইতৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বাদ পড়ার ঘটনা খুব একটা ঘটে না। এর আগে ২০১১ সালে লিবিয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবারের ভোট রাশিয়ার বিপক্ষে গেলেও এদিন পুরাতন মিত্রকে পাশে পেয়েছেন পুতিন। ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে উঠা আগের দুইটি রেজ্যুলেশনে চীন ভোট দান থেকে বিরত থাকলেও এদিন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় বলে জানায় রয়টার্স।
ভোটের আগে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন বলেন, ‘‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এভাবে তাড়াহুড়ো করা, যেটা সদস্য দেশগুলোকে একটি পক্ষ বেছে নিতে বাধ্য করছে। যা রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিভেদ বাড়িয়ে তুলবে।”
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত তৃতীয় রেজ্যুলেশ এটি। রাশিয়ার নিন্দা জানানোর আগের দুইটি প্রস্তাবের পক্ষে ১৪১ এবং ১৪০ ভোট পড়েছিল।
বৃহস্পতিবার তোলা প্রস্তাবে ‘ইউক্রেইনে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ করে সেখানে রুশ বাহিনী দ্বারা পরিচালিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর নিয়ে।
রাশিয়া দাবি, তারা ইউক্রেইনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য ইউক্রেইনের সেনা অবকাঠামো ধ্বংস করা। তারা সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আর ইউক্রেইন ও তাদের মিত্ররা বলছে, রাশিয়া বিনা উসকানিতে সেখানে আগ্রাসন চালাচ্ছে।
রয়টার্স দাবি করেছে, তাদের হাতে পড়া কিছু নথিপত্র অনুযায়ী, রাশিয়া এদিন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়া বা ভোট দান থেকে বিরত থাকা দেশগুলোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তাদের ‘অবন্ধুসুলভ আচরণ’ দেখার অপেক্ষা করতে বলেছে।
কোনো দেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে তিন বছরের জন্য সদস্য পদ পায়। রাশিয়া তার মেয়াদের দ্বিতীয় বছরে ছিল। মানবাধিকার কাউন্সিল কোনো দেশকে তাদের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করতে পারে না। তবে তাদের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা বলে বিবেচিত হয়। এছাড়া, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্তের অনুমোদন দিতে পারে।
মস্কো এই কাউন্সিলের সব থেকে সরব সদস্যদের একজন ছিল। এখন বরখাস্ত হওয়ার কারণে তারা মতামত দেয়া বা ভোট দেয়ার সুযোগ পাবে না। তবে রুশ কূটনীতিকরা এখনো কাউন্সিলের বিতর্কে অংশ নিতে পারবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেনেভার একজন কূটনীতিক বলেন, ‘‘প্রক্সির মাধ্যমে হলেও তারা এখনো সম্ভবত কাউন্সিলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে।”
রাশিয়া ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরুর পর সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিয়ে গতমাসে কাউন্সিল থেকে একটি প্রকাশ্য তদন্ত শুরু করেছিল।
বৃহস্পতিবার ভোট শুরুর আগে ইউক্রেইনের দূত সের্গি কিসলিয়াস বলেন, ‘‘একটি ‘হ্যাঁ’ ভোট মানবাধিকার কাউন্সিল এবং বিশ্ব ও ইউক্রেইন জুড়ে অনেক জীবন রক্ষা করতে পারে। কিন্তু একটি ‘না’ ভোট বন্দুকের ট্রিগার টানার সামিল এবং এর অর্থ স্ক্রিনে একটি লাল বিন্দু। হারিয়ে যাওয়া নিরীহ প্রাণের রক্তের মত লাল।”
ইউক্রেইনের রাজধানী কিউভের কাছের শহর বুচায় রুশ বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ বিশ্ববাসীকে কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে। উঠেছে নিন্দার ঝড়। রুশ বাহিনী বুচা থেকে চলে যাওয়ার পর সেখানকার বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। ওই সব ছবিতে বেশ কয়েকটি গণকবর এবং রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা শত শত মৃতদেহ দেখা গেছে। কয়েকটি মৃতদেহের হাত পিছমোড়া করে বাঁধা ছিল, বোঝা যাচ্ছিল তাদের খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
মস্কো অবশ্য ওই সব ছবি ‘ভুয়া’ এবং ইউক্রেইন ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের প্রপাগান্ডা বলে দাবি করেছে।
বুচার ঘটনা প্রকাশের পরই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছিল, তারা রাশিয়াকে বরখাস্ত করার প্রস্তাব তুলবে।
এদিকে, জাতিসংঘে রাশিয়ার উপ রাষ্ট্রদূত গেনাডি কুজমিন বলেছেন, এখন ‘নাটক পরিবেশনার’ সময় নয়। তিনি উল্টো পশ্চিমা দেশ এবং তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে ‘বিদ্যমান মানবাধিকার স্থাপত্যকে ধ্বংসের’ চেষ্টা করার অভিযোগ তোলেন।