তাই নিজেই উপসর্গগুলো চিনতে পারা ও সেদিকে নজর রাখা অবশ্যই
উচিত।
যদিও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বয়স্ক
নারীদের। তবে অন্যদেরও এই বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।
কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড
প্রিভেনশন’ বলে, “মার্কিন নারীদের প্রতি আটজনের একজন এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। বয়স্ক
নারীদেরই এই রোগ বেশি হয় ঠিক, তবে অনেক সময় ৪৫ বছরের কম বয়সি নারীদেরও এতে আক্রান্ত
হতে দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার জরিপে প্রায় ৯ শতাংশ নারী ৪৫ এর আগেই স্তন
ক্যান্সারের শিকার হন।”
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা’র মায়ামি ক্যান্সার ইন্সটিটিউট’য়ের
‘ব্রেস্ট সার্জারি’ বিভাগের প্রধান ডা. জেন মেন্ডেজ স্তন ক্যান্সারের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে
জানান ‘ইট দিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে।
সেই প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হলো বিস্তারিত।
পিণ্ড (লাম্প
কিংবা বাম্প)
ডা. মেন্ডেজ বলেন, “স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ
সময়ই দেখা দেয় একটা ‘ম্যাস’ বা পিণ্ড আকারে। অর্থাৎ স্তনের ভেতরে গোটালো কিছু অনুভব
করা যায়। তবে এটা জানাও জরুরি যে সবসময় এই রোগ একই উপসর্গ নিয়ে আসে না। আবার একইভাবে
স্তনের ভেতরে দেখা দেওয়া সব ‘ম্যাস’ বা পিণ্ড যে ক্যান্সার সেটা ভেবে নেওয়াও হবে ভুল।
এজন্যই নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে।
স্তনের আকৃতি
পরিবর্তন
নানান রূপে দেখা দিতে পারা এই রোগের উপসর্গ। অনেক সময় স্তনের
ত্বকেও চোখে পড়ে। দুই স্তনের আকার আকৃতির সামঞ্জস্য না থাকাও স্তন ক্যান্সারের পূর্বাভাস
হতে পারে। স্তনের বৃন্ত থেকে কোনো কারণ ছাড়াই কোনো প্রকার তরল বেরিয়ে আসলে সেটাও চিকিৎসকের
সঙ্গে দ্রুত আলাপ করার মতো বিষয়।
অন্যান্য উপসর্গ
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি জানিয়েছে আরও কিছু উপসর্গ যা
স্তন ক্যান্সারের ইঙ্গিত দেয়।
– ভেতরে দানা বা পিণ্ড ধরনের কিছু অনুভব না করলেও স্তন
ফুলে ওঠা।
– স্তনের ত্বকের কোনো অংশ কুঁচকে যাওয়া।
– স্তন কিংবা বৃন্তে ব্যথা।
– বৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যেতে থাকা।
– স্তন কিংবা বৃন্তের ত্বক লালচে, শুষ্ক ও মোটা হয়ে যাওয়া।
– বাহুর নিচের অংশে কিংবা ‘কলারবোন’য়ের অংশের কোনো ‘লিম্ফ
নোড’ বা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া। এই উপসর্গ থেকে বোঝা যায় যে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ছে। তবে
এসময়ও মূল ‘টিউমার’ বাইরে থেকে অনুভব করা নাও যেতে পারে।
চিকিৎসার উন্নতি
ডা. মেন্ডেজ বলেন, “বর্তমানে স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থাতেই
শনাক্ত করা গেলে ৯৮.৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই তা সারিয়ে তোলা যায়। এজন্য স্তন ক্যান্সারের
পরীক্ষা করানোর ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র দেরি করা উচিত হবে না।”
বিশেষত, ‘ম্যামোগ্রাম’ করানোর ক্ষেত্রে কোনো আলসেমি চলবে
না।
সুরক্ষিত থাকার
উপায়
ডা. মেন্ডেজ বলেন, “৪০ বছর বয়স থেকেই প্রতি বছর ‘ম্যামোগ্রাম’
করানোর পরামর্শ দেই আমরা। যাদের পরিবারে এই রোগের ইতিহাস আছে কিংবা কোনো কারণে এই রোগে
আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাদের আরও আগ থেকে চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় থাকতে
হবে।
বংশে স্তন ক্যান্সার থাকলে সবচাইতে কাছের আত্মীয়ের যে বয়সে
এই রোগ শনাক্ত হয়েছিল সেই বয়সের ১০ বছর আগে থেকেই নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে
হবে। আর বয়স যত বাড়বে ততই এই পরীক্ষাগুলোর গুরুত্ব বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, “স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে হলে ওজন
নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। স্থূলতা স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায় অনেকটা।”
আরেকটি কারণ হলো ‘ইস্ট্রোজেন’। এই হরমোন ‘এডিপোজ টিস্যু’
বা চর্বির কোষে জমা হয়। অর্থাৎ ‘এডিপোজ টিস্যু’ শরীরে যত বেশি, আদর্শ শারীরিক গড়ন থেকে
আমরা ততই দূরে এবং ‘ইস্ট্রোজেন’ যত বেশি, স্তন ক্যান্সারের আশঙ্কাও বেশি।
খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে কোনো ‘ডায়েট’ই নির্ভেজাল নয়। তাই
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে, পরিমাণ মতো খাওয়াই হবে প্রধান লক্ষ্য।
অন্যান্য সকল রোগের মতোই স্তন ক্যান্সার থেকেও সুরক্ষা
দেবে নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস।
মদ্যপান বর্জন করতে হবে। অলস জীবনযাত্রা ত্যাগ করতে হবে।
ধূমপানের সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই।
এর সম্পর্ক আছে ফুসফুস ক্যান্সারের সঙ্গে। তবে ধূপমান অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস, তাই তা
বর্জন করাই উচিত।
আরও পড়ুন
স্তন ক্যান্সারের অবহেলিত পূর্বাভাস