সদর উপজেলার পঞ্চসার
ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে
কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বিক্ষোভের মুখে আটক করা হয়। পরে মামলা হয়ে তাকে গ্রেপ্তার
দেখানো হয় গত ২২ মার্চ।
প্রথমে মুন্সীগঞ্জ
বিচারিক হাকিম আদালতে এবং পরে দায়রা জজ আদালতে তার জামিন চাওয়া হয়; কিন্তু জামিন আবেদন
নাকচ হয়ে যায়। আগামী রোববার মামলার পরবর্তী তারি ধার্য রয়েছে।
এই শিক্ষকের গ্রেপ্তারের
প্রতিবাদ এবং মুক্তির দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী
ববিতা মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার স্বামী কোনো অপরাধ করেননি। ২২ বছর
ধরে হৃদয় মণ্ডল ওই বিদ্যালয়ে গণিত ও বিজ্ঞানের ক্লাস করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে আগে কোনো
অভিযোগ ওঠেনি।
“এ ঘটনার পর গত শুক্রবার
জুম্মার নামাজের পর এলাকায় গণ্ডগোলের ভয় ছিল। তখন পুলিশ ফোর্স পাঠিয়েছিল। আমরা তো কেউ
ঘর থেকে বের হই না। বের হলে তো মানুষ অনেক কথা বলে।”
ববিতা আরও বলেন, “বুধবার
আমার স্বামী হৃদয় মণ্ডলের জামিনের জন্য আবেদন করি। তাকে থানা থেকে হাতকড়া পরিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট
কোর্টে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। তখনই আমাদের সাথে তার দেখা হয়। আর দেখা হয়নি। আমি তখন তাকে
জিজ্ঞেস করছিলাম – ‘তুমি কি ধর্ম নিয়ে কিছু বলেছ?’ আমার স্বামী আমাকে বলেন, তিনি এ ধরনের কিছু বলেননি।
আমার স্বামী বিনা অপরাধে ১৭ দিন ধরে কারাভোগ করছেন।”
বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি
জজ আদালতেও জামিন মেলেনি বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের
মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের মুক্তির দাবিতে জাবিতে মানববন্ধন
মুন্সীগঞ্জ জেলা শিক্ষা
অফিসার বেনজীর আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হৃদয় মণ্ডল ভালো শিক্ষক। তিনি
পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন বলে শুনেছি। পূর্বপরিকল্পিতভাবে রেকর্ড করা হয়েছে, তা বোঝা
গেছে। ছাত্ররা এমনভাবে প্রশ্ন করেছে যেন সেই ধরনের অভিব্যক্তি বের হয়ে আসে। চক্রান্ত
করে তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে শুনেছি। এর বেশি বলার মতো আপাতত কিছু নেই।”
নাম প্রকাশ না করে
প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলেন, বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্মীয় বিষয়ে প্রশ্ন করে তা রেকর্ড
করা হয়েছে। এরপর প্রধান শিক্ষক বরাবর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে লিখিতভাবে। কেউ
ছাত্রদের ব্যবহার করে হৃদয় মণ্ডলকে ফাঁসাতে এই কাজ করিয়েছে। আর সে কারণে বিজ্ঞান ক্লাসে
এক ছাত্র বারবার একই ধরনের প্রশ্ন করে যাচ্ছিল শিক্ষককে ফাঁদে ফেলতে। ছাত্রদের বিক্ষোভও
করিয়েছে একটি মহল।
গত ২০ মার্চ বিকাল
৩টায় বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ক্লাস নিচ্ছিলেন
হৃদয় মণ্ডল। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে প্রাসঙ্গিকভাবে ধর্ম বিষয়েও কথা
বলেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনে তার বক্তব্য রেকর্ড করে। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে ছড়ানো হলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ওইদিন স্কুল ছুটির পর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে
প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত আবেদন দেয় কয়েকজন শিক্ষার্থী।
এরপর ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের
কিছু শিক্ষার্থী ও স্থানীয় একদল লোক বিক্ষোভ করে এলাকায়।
ওই সময় মুন্সীগঞ্জ
থানা ও জেলা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধদের সরিয়ে দেয় এবং হৃদয় মণ্ডলকে তার বাসা
থেকে আটক করে হেফাজতে নিয়ে যায়। ওই সময় হৃদয় মণ্ডলকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা
হয়।
ওইদিন রাতেই বিনোদপুর
রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (ইলেক্ট্রিশিয়ন) মো. আসাদ বাদী হয়ে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে
আঘাত হানার’ অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান
শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ সামায়িক বরখাস্তের কোনো কারণ উল্লেখ করতে পারেননি।
তিনি বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী
তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।”
এ ঘটনায় করা মামলার
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. মিজান জানান, তদন্ত চলছে। শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের জামিন
হয়নি, তাই এখনও কারাগারে আছেন। বর্তমানে স্কুলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। বিদ্যালয়টিতে
স্বাভাবিক ক্লাস চলছে।