ক্যাটাগরি

বিতর্ক আর বাতাস সামলে জয়ের অভিযানে বাংলাদেশ

ম্যাচ জিতে সিরিজ ড্র করার লক্ষ্য বাংলাদেশের। ম্যাচ ড্র করতে পারলেই সিরিজ জয় দক্ষিণ আফ্রিকার। দুই দলের সেই লড়াই শুরু শুক্রবার, বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়।

প্রথম টেস্টে প্রায় চার দিন পর্যন্ত মোটামুটি লড়াইয়ে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ দিনে দলের ব্যাটিং ধসে পড়ে ভয়াবহভাবে। স্রেফ ৫৩ রানে গুটিয়ে ম্যাচ হারতে হয় ২২০ রানে।

অমন ধসের পর দলের মনোবলে চিড় ধরা অস্বাভাবিক নয়। অবস্থা আরও নাজুক হয়ে ওঠে টেস্টের পর থেকে ছড়াতে থাকা বিতর্কের নানা উড়ো খবরে। টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত, সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সম্পর্কের টানাপোড়েন, এসব নিয়ে গত কয়েকদিনে দেশের কিছু সংবাদমাধ্যমে নানা খবর হয়েছে। সেই বিতর্কের ঢেউ দলকেও স্পর্শ করেছে কিছুটা। কিছু কিছু খবরে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে অধিনায়ক মুমিনুলকেও।

টেস্ট শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক অবশ্য দাবি করলেন, দলের ভেতরে সুবাতাসই বইছে।

“পাঁচ দিনের খেলায় আমরা চার দিন খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। একটা দিন প্রথম সেশনটা আমরা খুব বাজে খেলেছি। আমার কাছে মনে হয় এরকম হয়, মাঝে মধ্যেই হয়। আমার কাছে মনে হয় ইতিবাচক অনেক কিছু ছিল। তাসকিন ভালো বোলিং করেছে, খালেদ ভালো বোলিং করেছে। জয় খুব ভালো ইনিংস খেলেছে, লিটনও খুব ভালো ব্যাটিং করেছে।”

“মোটামুটি সবাই রানে আছে, আঁটসাঁট ছিল। দল হিসেবে শুধু আমরা শেষ ইনিংসটি খুব বাজে ব্যাটিং করে ফেলেছি। এখানে আমার কাছে মনে হয়, সবাই খুব ভালো মেজাজে আছে, সবাই ফুরফুরে আছে, খুব আত্মবিশ্বাসী আছে পরের টেস্ট নিয়ে।”

টেস্ট শুরুর আগে একটা স্বস্তির খবর পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে শেষ মুহূর্তে পেটের পীড়া নিয়ে ছিটকে পড়া অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল এখন পুরোপুরি সুস্থ বলেই জানান অধিনায়ক। সব ঠিকঠাক থাকলে প্রায় এক বছর পর টেস্ট খেলবেন দেশের সফলতম ওপেনার। সেক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই জায়গা হারাবেন সাদমান ইসলাম।

একাদশে আরেকটি পরির্বতনও নিশ্চিত। চোট নিয়ে দেশে ফিরেছেন ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ। তার সঙ্গে ফিরে এসেছেন চোটাক্রান্ত আরেক পেসার শরিফুল ইসলাম। দ্বিতীয় টেস্টে তাসকিনের জায়গায় কোনো পেসার খেলবেন নাকি স্পিনার, সেটি ম্যাচের দিন উইকেট দেখে ঠিক করা হবে বলে জানালেন মুমিনুল।

একাদশে শেষ পর্যন্ত যারই জায়গা হোক, তিনি ও গোটা বোলিং আক্রমণকে নতুন একটা পরীক্ষায়ও পড়তে হবে পোর্ট এলিজাবেথে। বাংলাদেশের বোলিং কোচ ও এই মাঠের অনেক লড়াইয়ের যোদ্ধা অ্যালান ডোনাল্ড এখানে আসার পরই বলে দিয়েছেন, এখানকার তীব্র বাতাসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে দলকে। বিশেষ করে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে। সেই বাতাস আবার দিক বদলাতে থাকে ক্রমাগত। স্থানীয় ক্রিকেটাররা সেটিতে অভ্যস্ত, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য নিশ্চিতভাবেই হবে বড় পরীক্ষা।

মুমিনুল অবশ্য যথারীতি ইতিবাচকতার সুর তুলেই বললেন, বাতাসের ঝাপটা গায়ে মাখতে তারা প্রস্তুত।

“একেক জায়গায় একেক রকম পরিস্থিতিতে পড়তেই পারেন। এটা ক্রিকেটে নয় শুধু, সবক্ষেত্রেই হয়। এটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই খেলতে হবে। একেক সময় একেক কন্ডিশন থাকবে, ইংল্যান্ডে একরকম থাকে, নিউ জিল্যান্ডে একরকম, সাউথ আফ্রিকায় ভিন্ন। আসলে মানিয়ে নিয়ে খেলাটা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে মনে হয়, সবাই মানিয়ে নিয়ে খেলবে। আমরা ওভাবেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছি।”

ম্যাচের আগের দিন উইকেট দেখে একটু শুষ্ক মনে হয়েছে মুমিনুলের কাছে। সেক্ষেত্রে স্পিনারদের ভূমিকা যেমন থাকতে পারে, দক্ষতা থাকলে রিভার্স সুইংও রাখতে পারে বড় ভূমিকা। অধিনায়ক নিজেই সেখানে যোগ করলেন, বাতসের কারণে এয়ার সুইংও করতে পারে বল।

সব মিলিয়ে বাতাবরণে বার্তা কঠিন সময়ের। তবে মুমিনুলের বার্তা একটিই। মাঠে নেমে নিজেদের উজাড় করে দেওয়া।

“অবশ্যই আমি জেতার জন্য খেলব। প্রতি সেশন শতভাগ দিয়ে খেলব। আমরা যদি খুব বেশি অন্য বিষয়ে কান দেই, বাইরে কী হচ্ছে না হবে বা আগের ম্যাচে কি হয়েছে, সেসব চিন্তা না করে ১৫ সেশন, অন্তত ১২-১৩ সেশন যেন নিয়ন্ত্রণ করে খেলতে পারি, সেই চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এগোনো উচিত আমাদের।”