বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে মানবন্ধন করেন।
তারা ওই শিক্ষকের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি এবং ওই ঘটনায় ‘ইন্ধনদাতাদের’ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পারভীন জলি মানববন্ধনে যোগ দিয়ে বলেন, “ধর্ম এবং তাত্ত্বিক আলোচনা নিয়ে হৃদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ আলোচনা নতুন কিছু নয়, আদিকাল থেকেই এ আলোচনা হয়ে আসছে।”
হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলার পেছনে ‘ইন্ধনদাতাদের’ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে জলি বলেন, বর্তমানে জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। সেখানে কেমন শিক্ষক হবে? হৃদয় মণ্ডলের মত যুক্তি দিয়ে ক্লাস করাবে, নাকি ঠিকমতো ক্লাস নেবে না এমন শিক্ষক হবে?
“হৃদয় মণ্ডলের গ্রেপ্তার পূর্ব পরিকল্পিত, এখানে নিশ্চয়ই কেউ চক্রান্ত করেছে; সেটি খুঁজে বের করা হোক। শিক্ষকদের বন্দি রাখা হয়েছে, সাংবাদিকদের কথা বলার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে, এভাবেই রাষ্ট্র আমাদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।”
গত ২০ মার্চ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল বিজ্ঞান পড়ানোর সময় প্রসঙ্গক্রমে ধর্ম নিয়ে কথা বলেন।
সেই ক্লাসের কথা কয়েকজন শিক্ষার্থী রেকর্ড করেন বলে জানান বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান শরীফ। পরে ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ কথা বলার অভিযোগ তুলে কিছু শিক্ষার্থী এলাকায় হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ঘটনার দুদিন পর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (ইলেক্ট্রশিয়ান) মো. আসাদ বাদী হয়ে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ২৩ মার্চ তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধনে ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান বলেন, “হৃদয় মণ্ডল একজন আদর্শ শিক্ষকের চরিত্র দেখিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু সরকার পুরস্কার দিল জেল-জরিমানা। এই রাষ্ট্র এটার মাধ্যমে বার্তা দিল মুক্ত চিন্তা করা যাবে না, কথা বলা যাবে না।
“গণতন্ত্রের ছিঁটেফোঁটাও বর্তমানে এ দেশে নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সব বাধা অতিক্রম করে এই সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নিতে হবে।”
ছাত্র ফ্রন্টের জাবি শাখার সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, “দেশে যেমন একদিকে ধর্মকে উসকে দেওয়া হচ্ছে তেমনি বিজ্ঞান চর্চা থেকেও দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। হৃদয় মণ্ডলকে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত মুক্তির দাবি জানাই এবং তার স্বাভাবিক শিক্ষকতা ফিরিয়ে দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছি।”
মানববন্ধনে ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখা সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায়, সম্পদ অয়ন মারান্ডিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।