মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, ডিডিওএস
হামলায় ব্যবহারের জন্য হার্ডওয়্যারে ম্যালওয়্যার সংক্রমণ ঘটিয়ে ‘বটনেট’ তৈরি করে রেখেছিল
রাশিয়ার সামরিক হ্যাকাররা। ওই বটনেটের সঙ্গে যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য মস্কোর স্পাইরা
যে অবকাঠামো ব্যবহার করেছে সেটির দখল নেওয়ার দাবি করেছে এফবিআই।
রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা
ওই ঘটনার একটি সংক্ষিপ্ত হলফনামা উন্মুক্ত করেছেন বুধবার। এ ধরনের সাইবার অপারেশনকে
‘বিরল’ বলে আখ্যা দিয়েছে বার্তাসংস্থাটি।
রাশিয়ার হ্যাকাররা যেন ম্যালওয়্যার সংক্রমিত
ডিভাইসগুলোকে ‘বটনেট’-এর অংশ হিসেবে ডিডিওএস হামলায় ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য আগেভাগেই
তৎপর হয়েছিল এফবিআই।
‘বটনেট’ বলতে আদতে হ্যাকার নিয়ন্ত্রিত
কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে বোঝানো হয়। ‘ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অফ সার্ভিস’ বা ডিডিওএস
হামলায় বটনেট ব্যবহার করে টার্গেট কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ভুয়া ট্রাফিক পাঠিয়ে অকার্যকর
করে দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি
জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড বলেন, “সৌভাগ্যবশত বটনেটটি ব্যবহারের আগেই ভেঙে দিতে পেরেছি
আমরা।”
এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনে অবস্থিত রাশিয়ার
দূতাবাস রয়টার্সের ইমেইলের তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দেয়নি বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থাটি।
বটনেটটি ‘সাইক্লপস ব্লিংক’ নামের একটি
ম্যালওয়্যার দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হতো বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ফেব্রুয়ারি মাসেই ম্যালওয়্যারটির
সঙ্গে রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর কথিত হ্যাকারদল ‘স্যান্ডওয়ার্ম’-এর সংশ্লিষ্টতার
খবর জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সাইবার নিরাপত্তা গবেষকরা।
স্বাধীন সাইবার নিরাপত্তা গবেষকদের বরাত
দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ‘সাইক্লপস ব্লিংক’ এর নকশা করা হয়েছিল ‘ওয়াচগার্ড টেকনোলজিস’
এবং ‘আসুসটেক কম্পিউটার ইনকর্পোরেটেড’-এর তৈরি ডিভাইসের দখল নেওয়ার জন্য।
সংক্রমতি কম্পিউটার সিস্টেমে রাশিয়ার
হ্যাকারদের প্রবেশাধিকার দিত ম্যালওয়্যারটি। ফলে, দূর থেকেই কম্পিউটার সিস্টেম থেকে
ডেটা মুছে দেওয়া বা তৃতীয় কোনো পক্ষের উপর সাইবার হামলা চালাতে ওই কম্পিউটার সিস্টেম
ব্যবহারের সুযোগ পেত হ্যাকাররা।
এক বিবৃতিতে মার্কিন বিচার বিভাগের সঙ্গে
কাজ করার খবর নিশ্চিত করেছে ওয়াচগার্ড টেকনোলজিস। তবে, নিজেদের তৈরি ডিভাইসগুলোর মধ্যে
এক শতাংশের কম ম্যালওয়্যার সংক্রমণের শিকার হয়েছিল বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অন্যদিকে, রয়টার্স যোগাযোগ করলেও তাতে
তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়নি ‘আসুসটেক’ বা আসুস।
তবে, এফবিআই আদালতের অনুমোদন নিয়ে কয়েক
হাজার রাউটার এবং ফায়ারলওয়াল অ্যাপ্লায়েন্সে অনুপ্রবেশ করে ম্যালওয়্যার মুছে দিয়েছে
বলে সংবাদকর্মীদের নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দাসংস্থাটির পরিচালক ক্রিস রে।
“বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কয়েক হাজার
ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক সিকিউরিটিতে ব্যবহৃত ডিভাইস থেকে ম্যালওয়্যার
মুছে দিয়েছি আমরা। রাশিয়ানদের অনুপ্রবেশের দরজাও বন্ধ করে দিয়েছি আমরা,” বলেন তিনি।
জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হলফনামায়
উল্লেখ রয়েছে, ওয়াচগার্ড ডিভাইসের ক্রেতাদের জন্য আলাদা ‘সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন’
চালু করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। ম্যালওয়্যার সংক্রমণ ও অন্যান্য দুর্বলতা
মোকাবেলার সম্ভাব্য উপায় বাতলে দেওয়ার পরেও সংক্রমণের শিকার অর্ধেকের বেশি ডিভাইসে
হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণ ছিল।
রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংক এবং ধনকুবেরদের
ওপর যুক্তরাষ্ট্রের একগুচ্ছ নতুন অবরোধ-নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই এফবিআইয়ের সাইবার কার্যক্রমের
ঘোষণাটি এলো।
ইউক্রেইনে সামরিক আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক
অভিযান’ বলে আখ্যা দিয়ে আসছে রাশিয়া। দেশটির দাবি, ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ লক্ষ্য
হচ্ছে ইউক্রেইনের নিরস্ত্রীকরণ এবং নব্য নাৎসি বাহিনীর প্রভাবমুক্ত করা।
রাশিয়া অভিযানে অসামরিক নাগরিকদের ওপর
হামলার চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করলেও ‘বুচা’ থেকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী পিছু হঠার
পর যুদ্ধাপরাধ ও নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যার প্রমাণ মিলছে শহরটি থেকে।
গণহত্যার অভিযোগের মুখে রাশিয়ার ওপর
নতুন করে অবরোধ-নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্ররা।