পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পদক্ষেপে নিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে শুরু হওয়া চতুর্থ দিনের শুনানি চলাকালে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির আইনজীবীর উদ্দেশ্যে একথা বলেছেন বলে জানিয়েছে ডন।
প্রধান বিচারপতির এ জিজ্ঞাসার জবাবে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আলভির আইনজীবী সেনেটর আলী জাফর বলেন, “আমিও বলছি, দেশে কোনো সাংবিধানিক সংকট নেই।”
এদিন স্থানীয় সময় সকালে সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবারই শুনানি শেষ করে রায় দেওয়ার আশা করছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় এই আদালতের রায়েই ভাগ্য নির্ধারণ হতে যাচ্ছে ক্রিকেটার থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইমরান খানের।
বুধবার শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্ডিয়াল বৃহস্পতিবার সকাল সকালই আদালত শুরুর তাগিদ দিয়েছিলেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে আদালত পার্লামেন্ট পুনর্বহালের আদেশ বা নতুন নির্বাচনের আহ্বান কিংবা ইমরান খানের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতেও বলতে পারে।
আবার তারা সংসদীয় বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না-এমন রায়ও দিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জাতীয় পরিষদে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনলে রোববার ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি তা বাতিল করে দেন। এরপরই ইমরানের প্রস্তাবে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি গত রোববার পার্লামেন্ট ভেঙে দেন।
তবে অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা। বিষয়টি নিয়ে সোমবার আদালতে শুনানি শুরু হয়। চতুর্থ দিনের মতো বৃহস্পতিবার শুনানি চলছে।
বুধবারের শুনানিতে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই) ও প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির আইনজীবীরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে কথা বলেছেন।
বিরোধীদলগুলোর অভিযোগ, ইমরান করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সরকারকে আরো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা পূর্ণ করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইমরান ক্ষমতায় এসেছিলেন, ওই প্রতিশ্রুতি পূরণেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
কাসিম সুরির অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলের এখতিয়ার আছে না নেই, আদালত তা-ই খোঁজার চেষ্টা করছে বলে গত কয়েকদিন ধরে প্রধান বিচারপতিসহ ৫ সদস্যের বেঞ্চের অন্যরাও বলেছেন।
পদ টেকাতে ইমরানের রোববারের ‘গুগলি’ ২২ কোটি মানুষের দেশ পাকিস্তানকে পুরোদস্তুর সাংবিধানিক সংকটে ঠেলে দিয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ৮ দশকে দেশটি অনেকগুলো বছর সামরিক শাসনে কাটিয়েছে।
শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার নামে দেশটির সামরিক বাহিনী বার তিনেক বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে নিজেরা শাসনক্ষমতায় বসেছে।
চলমান সংকটে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে বারবার দাবিও করে আসছে তারা।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে পার্লামেন্টের কার্যক্রমে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারে কিনা, ঘুরেফিরে এই প্রশ্ন এবং এ সংক্রান্ত নানান যুক্তিতর্ক ও রেফারেন্স আসছে।
ডেপুটি স্পিকারের অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলকে বিরোধীরা অসাংবিধানিক বলে দাবি করছেন। বিপরীতে ইমরান খানের সমর্থকরা বলছেন, বিদেশিদের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রীকে ‘ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা হয়েছে’, সেটাই অসাংবিধানিক।
অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে কাসিম সুরির দেওয়া আদেশের উপর ভিত্তি করে ইমরানের পরামর্শে প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ায় সব তালগোল পাকিয়ে যায়।
যে কারণে বিরোধীদের চাওয়া, সুপ্রিম কোর্ট যেন ডেপুটি স্পিকারের আদেশ বাতিলের পাশাপাশি পার্লামেন্ট পুনর্বহালেরও নির্দেশ দেন। সেক্ষেত্রে পার্লামেন্ট বসিয়ে ফের অনাস্থা প্রস্তাব তুলে ইমরানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া যাবে। প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচনের যে দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন, তাও বন্ধ হবে।
আর সুপ্রিম কোর্ট যদি পার্লামেন্টের কার্যক্রম নিয়ে তারা কোনো নির্দেশ দিতে পারবে না বলে জানায়, তাহলে নতুন নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কার্যক্রমে কোনো রকমের বাধাই থাকবে না।
আর সর্বোচ্চ আদালত যদি কেবল কাসিম সুরির আদেশ নিয়ে রায় দেয়, কিন্তু প্রেসিডেন্টের পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে কিছু না বলে তাহলেও সাংবিধানিক সমস্যার জট থেকেই যাবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সব মিলিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতি এখন সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।