বুধবার রাজধানীর মালিবাগের প্যারামাউন্ট টাওয়ারে অভিযান
চালিয়ে ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি, এক
সহযোগী ও চার
ভুয়া চিকিৎসককেও গ্রেপ্তার করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের
ওয়ারী জোনের সদস্যরা।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির কথিত ভিসি
ডা. মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার (৭২), সহযোগী মোয়াজ্জেম হোসেন (৫৮),
ভুয়া চিকিৎসক সাইদুর
রহমান ওরফে নজরুল (৩০), মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ (৩৭), আমান উল্লাহ (৩৮) ও
দেবাশীষ কুণ্ডু (৫২)।
এই ভুয়া চিকিৎসকরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
পরিচয়ে চেম্বার খুলে বসেছিলেন
বলে গোয়েন্দা পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, “চক্রের
হোতা নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার নিজেকে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা
ও ভিসি পরিচয় দিতেন। তার প্রতিষ্ঠিত নাম সর্বস্ব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছিল না কোনো ক্যাম্পাস কিংবা ক্লাস রুম। পত্রিকায়
বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন উচ্চতর ডিগ্রির সার্টিফিকেট বিক্রি করতেন তিনি।
“টাকা নিয়ে শেখ গনির সঙ্গে
যোগাযোগ করলে তিনি কুরিয়ারের মাধ্যমে সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দিতেন। এভাবেই গত দুই
যুগের বেশি সময়ে ধরে রাজধানীর মালিবাগে বসে শত শত মানুষের কাছে সার্টিফিকে বিক্রি
আসছিলেন।”
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, কথিত প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে এমবিবিএস,
বিডিএস, এমফিল, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ১৪৪টি বিষয়ের সনদ দিতেন শেখ গনি। বাদ যেত না
এসএসসি ও এইচএসসির সনদও।
১৯৯৬ সাল থেকে শেখ গনি ‘শত শত ভুয়া এমবিবিএস-বিডিএস সনদ’ দিয়ে প্রতিটি সনদের জন্য পাঁচ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়েছেন বলে র্যাবের ভাষ্য।
হাফিজ আক্তার
বলেন, “শেখ গনি একাই প্রায় দুই দশক ধরে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির
নামে ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রয়ের ব্যবসা করে আসছিলেন।
প্রতারণার কাজে ভুয়া ওয়েবসাইট, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা
ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন, কম্পিউটারাইজড ক্যাম্পাস, যা বাস্তবে অস্তিত্বহীন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
ভুয়া আদেশ, হাই কোর্টের জাল রিট দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে সনদ বাণিজ্য করে
আসছিলেন।
“এভাবে শেখ গনি কোটি কোটি টাকা আয়
করেছেন। ২০১৫ সালে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
তবে কারাগার থেকে বের হয়ে আবারও একই কাজ শুরু করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এমন
প্রতারণার সঙ্গে জড়িত।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার
ভুয়া চিকিৎসকরা মাদরাসা থেকে দাখিল ও কামিল পাস করে
টাকার বিনিময়ে এমবিবিএস ডিগ্রি নেন। দাখিল ও কামিল পাসে
কোনোভাবেই এমবিবিএস ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব নয়। এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে সুসজ্জিত চেম্বার
খুলে এসব ‘চিকিৎসক’ নিয়মিত রোগীও দেখতেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ‘অসংখ্য’ ভুয়া
সনদপত্র, টেস্টিমোনিয়াল, ট্রান্সক্রিপ্ট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, অ্যাডমিট কার্ড,
নকল সিল উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের চারটি চেক, সনদ প্রদানের
চটকদার বিজ্ঞাপনের পেপার কাটিং ও লিফলেট, প্রেসক্রিপশন, ভিজিটিং কার্ড, নব দিগন্ত
ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ডক্টরস চেম্বারের ফাইল, একটি
সিপিইউ ও একটি প্রিন্টার জব্দ করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা
পুলিশ জানিয়েছে।