ক্যাটাগরি

চীনে গণ নজরদারিতে ‘ওয়ান পার্সন ওয়ান ফাইল’

‘ওয়ান পার্সন ওয়ান
ফাইল’ নামে পরিচিত সফটওয়্যারটি চীনের অনেক প্রতিষ্ঠানই কিনেছে গত চার বছরে।

চীনের প্রায় ৫০টির বেশি উন্মুক্ত ফাইল
পরীক্ষা করে দেখেছে রয়টার্স। দেশটির পুলিশ বিভাগ এবং কমিউনিস্ট পার্টির নজরদারি নেটওয়ার্ক
আপগ্রেডের কিছু অংশ দেখা সম্ভব হয়েছে ফাইলগুলোয়।

বেইজিংয়ের বর্তমান
নজরদারি পদ্ধতির ব্যপক উন্নতি ঘটাবে নতুন সফটওয়্যারটি। যদিও বিদ্যমান পদ্ধতির সাহায্যেও
যে কোনো ব্যক্তির ডেটা সংগ্রহ সম্ভব বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।

সরকারী ফাইল অনুযায়ী,
এই সফটওয়্যার ব্যবহারকারী স্কুলগুলো চাচ্ছে, তাদের ক্যাম্পাসের বাইরে ঘোরাফেরা করা
অচেনা চেহারাগুলো মনিটর করতে।

“এ সিস্টেমের
স্বাধীনভাবে শেখার ক্ষমতা রয়েছে এবং ডেটার আকার বৃদ্ধি পেলেও এটি
নির্ভুলভাবে ফাইল তৈরি করতে পারে।”

“আংশিকভাবে আড়াল, মাস্ক
অথবা চশমা বা সানগ্লাসে ঢাকা চেহারা এবং কম রেজুলিউশনের ছবি তুলনামূলক নির্ভুলভাবে
সংরক্ষণ করতে পারে সিস্টেমটি।” – গত বছর জুলাই মাসে প্রকাশিত টেন্ডারে এ দাবি করেছে
চীনের ‘হেনান’ প্রদেশের জন নিরাপত্তা বিভাগ।

তবে রয়টার্সকে সিস্টেমটির
ব্যবহার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি হেনানের জন নিরাপত্তা বিভাগ।

“সফটওয়্যারটির কিছু
সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর একটি হচ্ছে এয়ারপোর্টের মত নিরাপত্তা চেকপয়েন্ট ছাড়া কারো ব্যক্তিগত
তথ্য বিবরণীর সাহায্যে রিয়েল-টাইম লোকেশন শেয়ার না করতে পারা।” –বলেছেন ‘স্টামফোর্ড
সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন’র গবেষক জেফরি ডিং।

“ওয়ান পার্সন ওয়ান ফাইল’ এমন এক ‘তথ্য
বাছাই’ মাধ্যম, যেটির সাহায্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ সহজ হয়েছে।”–বলেছেন
বার্লিন ভিত্তিক ‘জার্মান মার্শাল ফান্ড’-এর গবেষক মারাইকা ওলবার্গ।

গত চার বছরে অন্তত
৫০টি টেন্ডার প্রকাশ করেছে বেইজিং ও গানসু প্রদেশসহ দেশের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। যেগুলোর
৩২টি প্রকাশিত হয়েছে ২০২১ সালে।

‘সেন্সটাইম’, ‘হুয়াওয়ে’,
‘মেগভি’, ‘ক্লাউডওয়াক’, ‘দাহুয়া’ এবং ‘বাইদু’র ক্লাউড বিভাগ সহ ২২টি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান
এ সফটওয়্যারটি ‘অফার’ করছে।। তবে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কিছু জানতে পারেনি
রয়টার্স।

সিস্টেম আপগ্রেড

২০১৫ থেকে ২০২০ সাল
পর্যন্ত চীন তার শহরগুলোতে নজরদারির ক্যামেরা বসিয়েছে। এ কার্যক্রম ‘শার্প আইস’ নামে
পরিচিত এবং গ্রামীণ অঞ্চলেও এগুলো বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

‘ওয়ান পার্সন ওয়ান
ফাইল’ সফটওয়্যারটির কার্যক্রম একই সময়ে শুরু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

গবেষক ওলবার্গ বলেছেন, ২০১৬ সালে প্রথম
তিনি ‘ওয়ান পার্সন ওয়ান ফাইল’ সম্পর্কে জিনজিয়াংয়ের ‘শাওয়ান কাউন্টি’র ২০০-পৃষ্ঠার
একটি নজরদারি বিষয়ক গবেষণা থেকে জেনেছেন।

এখানে একটি কম্পিউটার ব্যবস্থার কথা
উল্লেখ রয়েছে, যেটি সন্ত্রাসবাদ এবং সামাজিক স্থিতিশীলতায় হুমকি হিসেবে বিবেচিত মূল
ব্যক্তিদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত ও তদন্ত করতে পারে।

এ বিষয়ে শাওয়ান কাউন্টির একজন কর্মকর্তা
রয়টার্সের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নিরাপদ শহর

কেউ কেউ ‘ওয়ান পার্সন ওয়ান ফাইল’-কে
চীনের নজরদারি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সকল অংশের একটি বলে দাবি করেছেন। বাকিরা এ বিষয়ে
বিস্তারিত বর্ণণা দিয়েছেন।

সফটওয়্যারটিতে ‘ফেসিয়াল রিকগনিশন’ প্রযুক্তি
রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে নয়টি টেন্ডার।

উদাহরণস্বরূপ, সফটওয়্যারটি শনাক্ত করতে
পারবে, রাস্তায় হেঁটে যাওয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি উইঘুর কি না। এরপর, পুলিশের কাছে একটি
সতর্ক-বার্তা চলে যাবে এবং উইঘুর চেহারাটির একটি ‘আর্কাইভ’ তৈরি হবে।

২০২০ সালে প্রকাশিত এক টেন্ডারে দক্ষিণপূর্ব
দ্বীপ প্রদেশ হেনানে থাকা উইঘুর এবং তিব্বতের বাসিন্দাদের একটি ডেটাবেইজ চাওয়া হয়,
যাতে ‘সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের তথ্য’ খুঁজে বের করতে সুবিধা হয়।

এ বিষয়ে হেনান কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য
পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।