ক্যাটাগরি

বাগেরহাটে মতুয়া অনুষ্ঠানে গিয়ে হিন্দু পরিবার ‘সমাজচ্যুত’

এতে পরিবারটি মানসিক সংকটে পড়েছে বলে অভিযোগ
করেছে। তবে সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

চিতলমারীর ইউএনও সাইয়েদা ফয়জুন্নেসা জানান,
হিজলা ইউনিয়নের পাঙাশিয়া গ্রামের কালিদাস মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের
পর এই সমস্যার উদ্ভব হয়।

তবে কালিদাস মণ্ডলের পরিবারকে সমাজচ্যুত
করা হয়নি। ‘সমাজচ্যুত করা হয়েছে’ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া একই গ্রামের শোভারঞ্জন গুহর পরিবারকে।

শোভারঞ্জন বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে কালিদাসের
পরিবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রচলিত রীতির বাইরে মতুয়ামতে
অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে গ্রামের হিন্দুসমাজের প্রধান মৃণালকান্তি গুহ ১০৪টি
পরিবারকে নিয়ে বৈঠক করেন। তিনি শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে না যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবু ৫০টি পরিবার
যোগ দেয়।

“আমার পরিবারও যোগ দেয়। কিন্তু পরে শুধু
আমার পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়। সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে আমাকে বঞ্চিত করার ঘোষণা
করেন মৃণালকান্তি।”

শোভারঞ্জন বলেন, “মতুয়ামতে আয়োজিত শ্রাদ্ধ
অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণ-পুরোহিতকে ডাকা হয় না। প্রাচীন বৈদিক রীতি অনুযায়ী থাকে না প্রচলিত
পূজা-অর্চনার ব্যবস্থা। খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠানে থাকে না আমিষের আয়োজন।”

প্রচলিত রীতি অনুযায়ী শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে
ব্রাহ্মণ-পুরোহিত পূজা-অর্চনা করেন। খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠানে থাকে আমিষের ব্যবস্থা।

শোভারঞ্জন বলেন, “এখন সময় পাল্টেছে। কিন্তু
আমাদের মানসিকতা পাল্টায়নি। আদিম আমলের ধর্মীয় রীতিনীতির পরিবর্তন করতে সবার প্রতি
আহ্বান জানাই আমি।”

সমাজপ্রধান মৃণালকান্তি চিতলমারী মুক্তবাংলা
চারুপল্লি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক।

শোভারঞ্জনকে সমাজচ্যুত করার কথা তিনি অস্বীকার
করেছেন। উপরন্তু তিনি শোভারঞ্জনের বিরুদ্ধে সমাজ ত্যাগের অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসীর
বরাতে।

মৃণালকান্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
বলেন, “এই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা ধর্মীয় আচার মেনে সব অনুষ্ঠান
করে আসছে। সমাজ নিয়েই আমাদের চলতে হয়। কালিপদ মণ্ডলের পরিবার আমাদের দীর্ঘদিনের ধর্মীয়
রীতিনীতি উপেক্ষা করে মতুয়ামতে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যা গ্রামের অধিকাংশ পরিবার
মেনে নিতে পারেনি।

“তাদের ওই অনুষ্ঠানের কথা আমরা জানতে পেরে
সবাইকে নিয়ে বৈঠক করি। বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিই শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যাব না বলে। সিদ্ধান্ত
উপেক্ষা করে শোভারঞ্জন গুহর পরিবার ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। এরপর গ্রামের সবাই শোভার
ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এ নিয়ে গ্রামের সবাই একাধিকবার বসাবসি করলেও ফলপ্রসূ কোনো আলোচনা হয়নি।
শোভার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার বিষয়টি সঠিক না। বিষয়টি অমীমাংসিত অবস্থায় ঝুলে আছে।”

৫০টি পরিবার যোগ দিলেও শুধু শোভার পরিবারের
ওপর ক্ষোভ কেন সে বিষয়ে মৃণালকান্তি কিছু বলেননি। তাছাড়া যারা মতুয়ামতে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান
আয়োজন করে তাদের নিয়েও কোনো বৈঠক হয়নি। তাদেরকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণাও করা হয়নি।

বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা প্রশাসন অবগত হয়েছে।

ইউএনও সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা বলেন, “কোনো অনুষ্ঠানে
যাওয়ার কারণে কাউকে সমাজ থেকে বাইরে রাখা হবে এই সভ্য সমাজে এটা কাম্য হতে পারে না।
বিষয়টি সমাধান করতে চিতলমারী থানার ওসিকে ওই দুই পক্ষকে নিয়ে বসতে বলা হয়েছে।”