শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের গ্রেপ্তারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে অধ্যাপক নিজামুল হক প্রতিক্রিয়া দেন।
প্রকাশিত সেই সংবাদে তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “আমাদের ৯০ শতাংশ মানুষ যেহেতু মুসলিম, সেখানে ধর্ম নিয়ে কন্ট্রাডিকটরি বক্তব্যটা দেওয়া কোনোভাবেই সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি।”
তার এমন বক্তব্যে সোশাল মিডিয়ায় সমালোচনার জন্ম দেয়।
শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবীন আহসান ফেইসবুকে লেখেন, “এই যে ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ বলে ভয় দেখাচ্ছেন! ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ বলেই মুসলমানদের অন্যায়ের কথা বলা যাবে না! এই ভয় দেখানোটাই বাংলাদেশটাকে অফগানিস্তানে পরিণত করবে! ১০ শতাংশ হিন্দু-খৃস্টান দিবাসীরা যখন থাকবে না তখন ১০০ শতাংশ মুসলমানরা মুসলমানদের রক্ত খাবে।”
সম্প্রতি নিজামুল হক ভূঁইয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া এবং ধন-সম্পদ নিয়ে একটি সংবাদ প্রতিবেদনের সূত্র ধরে রবীন লেখেন, “যদিও শিক্ষাগত যোগ্যতার এমন দশা নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়েছেন নিজামুল হক ভূঁইয়া। একসময় প্রভাষক পদে নিয়োগের যোগ্যতা না থাকলেও তিনি এখন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের প্রভাবশালী অধ্যাপক। টানা তৃতীয়বারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।”
নিজামুল হকের মন্তব্যে তার সহকর্মীরাও অসেন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই নিউজটা অনেক শিক্ষক আমাকে মেসেঞ্জারে পাঠিয়েছে। আমি লজ্জিত আমাদের সাধারণ সম্পাদক এধরনের একটি মন্তব্য করেছেন।
“শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি হয়ে তিনি যদি এটা বলেন, তাহলে এটা অত্যন্ত সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন উনি। এটা সম্পর্কে উনি না জেনে শুনে একটি ঢালাও মন্তব্য করেছেন। উনি দায়িত্বশীলতার কোনো পরিচয় দেন নাই।”
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, “আমি নিউজটা দেখলাম। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে খুবই দুঃখজনক।
“আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নেতা সংখ্যাগরিষ্ঠতার দোহাই দিয়েছেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যদি এভাবে দোহাই দিয়ে আরেকজন শিক্ষকের জন্য বিপদ তৈরি করেন, তাহলে যারা এই ৯০ শতাংশের বাইরে অংশ, এদেশে তাদের বসবাসের উপযোগিতা থাকে কি? এগুলো খুবই বিপজ্জনক প্রবণতা তৈরি হচ্ছে আমাদের সমাজে।”
এনিয়ে নিয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রহমত উল্লাহর প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করা হলেও তা পাওয়া যায়নি।
তবে সাদেকা হালিম বলেন, “আমাদের শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেছেন, তিনি এটা জ্ঞাতই না। অথচ উনারা শিক্ষক সমিতির নেতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা পত্রিকায় খবর এসেছে। হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী প্রেস কনফারেন্স করেছে, শাহবাগ মোড়ে মানববন্ধন হচ্ছে। অথচ উনারা কিছুই জানেন না! উনারা তাহলে আমাদের শিক্ষক সমাজকে কীভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন?”
এনিয়ে নিজামুল হক ভুঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার মন্তব্য ‘ভুলভাবে’ উপস্থাপিত হচ্ছে।
“আামি বলেছি, যদি ধর্মের বিরুদ্ধে বলে থাকেন, তাহলে এটা বলা ঠিক হয়নি। আমাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।”
“আমরা প্রগতিশীল মানুষ, আমরা প্রগতির পক্ষে কথা বলব,”দাবি করে তিনি বলেন, “আমি যেটা মনে করি, প্রথমত একজন শিক্ষক ক্লাসে পড়াচ্ছেন, ছাত্ররা কেন তার বক্তব্য রেকর্ড করে ছড়িয়ে দেবে। তাহলে তো কোনো শিক্ষক আর ক্লাসে কোনো যুক্তি তর্ক দেখাবে না। আমরা তো ক্লাসে অনেক কথাই বলে থাকি। ছাত্ররা কীভাবে একজন শিক্ষকের বক্তব্য রেকর্ড করে ছড়িয়ে দেয়? এটা খুবই দুঃখজনক।”
“হৃদয় মণ্ডল যদি ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলে থাকে, তাহলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। কিন্তু এভাবে তার বাড়িতে হামলা করা, অস্থিরতা সৃষ্টি এগুলো অপতৎপরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা বলে আমি মনে করি,” বলেন আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের এই নেতা।
আরও পড়ুন