নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনেট কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসনের
নিয়োগ অনুমোদন করে। বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির তীব্র আপত্তির পরও ৫৩-৪৭ ভোটে জ্যাকসনকে
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়।
সেনেটের ভোটাভুটিতে ৫০ জন ডেমোক্র্যাট সদস্যের সঙ্গে ৩ জন রিপাবলিকান সেনেটরও জ্যাকসনের
নিয়োগের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
অবশ্য তার নিয়োগ আটকাতে তীব্র বিরোধিতা করেন রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা। এই বিচারককে
‘কট্টর উদারপন্থি’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়, বলা হয় তিনি অপরাধীদের ‘সুরক্ষা’
দিয়ে থাকেন।
তবে সব বাধা ডিঙিয়ে জ্যাকসনের নিয়োগ অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অগ্রগতির
একটি প্রতীক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী জ্যাকসনের নিয়োগ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট
জো বাইডেনের আলোচিত একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রতি পূরণ হল।
সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান বিচারপতি স্টিফেন ব্রায়ার এ গ্রীষ্মে আদালতের অধিবেশন মুলতুবির
পর অবসরে যাচ্ছেন। ওই স্থান পূরণ করবেন বাইডেনের
মনোনীত বিচারপতি জ্যাকসন।
সেনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা ডেমোক্র্যাট দলীয় সেনেটর চাক শুমার বলেন, “সবচেয়ে
আঁধার কালো সময়েও, উজ্জ্বল আলোর দেখা মিলতে পারে। আজ তেমন এক আলোকিত দিন। আসুন সবাই
মিলে এই প্রত্যাশা করি যেন, এটি একটি প্রতীক হয়ে থাকে, আরও অনেক উজ্জ্বল আলো আসার একটি
ইঙ্গিত হয়ে ওঠে।”
তিনি বলেন, “আগের প্রজন্মের কত লাখ লাখ শিশু এই ধরনের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত থেকে
উপকৃত হতে পারত!”
মহামারীর কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকা ইউএস ক্যাপিটলের গ্যালারিগুলো বৃহস্পতিবার
পূর্ণ করে রেখেছিলেন ব্রাউনের সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ঐতিহাসিক ওই মুহূর্তের সাক্ষী
হতে উপস্থিত হয়েছিলেন তারা।
ভোটের ফল ঘেষণার পর সেনেটর, কর্মী ও দর্শনার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন, সবাই লাফিয়ে
ওঠেন এবং দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থেকে জ্যাকসনের প্রতি সম্মান দেখান।
সবাই অবশ্য তেমন খুশি হতে পারেননি। সেনেটে সংখ্যালঘিষ্ঠ দলের নেতা রিপাবলিকান সেনেটর
মিচ ম্যাককোনেল ভোটের ফল ঘোষণার পরপরই পেছনে ঘুরে ধীর পদক্ষেপে সেনেট চেম্বার থেকে
বেরিয়ে যান, বেশিরভাগ রিপাকলিকান সেনেটর তাকে অনুসরণ করেন। হাতেগোণা কয়েকজন সেনেটর
শুধু সেনেট চেম্বারে থেকে যান।
ভোটের ফল ঘোষণার আগে জ্যাকসনের নিয়োগের বিরোধিতায় সবশেষ যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে
ম্যাককোনেল বলেন, “যখন একজন প্রেসিডেন্টের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার
সময় এসেছে, আমাদের সুপ্রিম কোর্টে আজীবনের জন্য একজন বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে, বাইডেন
প্রশাসন কট্টরপন্থিদের হাতে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ তুলে দিচ্ছে। কট্টর বামপন্থিরা মূল্যস্ফীতিকে
বাড়িয়ে দিয়ে তাদের মনমত যাচ্ছেতাইভাবে ব্যয় করছে। তারা অনিরাপদ সীমান্ত পেয়েছে, যা
তারা চেয়েছিল। এখন তারা চাহিদামত একজন বিচারপতিও পেয়ে যাবে সুপ্রিম কোর্টে।”
জ্যাকসনের নিয়োগের পক্ষে যে তিন রিপাবলিকান সেনেটর ভোট দিয়েছেন, তারা হলেন মেইনের
সেনস সুজান কলিন্স, আলাস্কার লিসা মুনকোভিস্কি এবং উটাহর মিট রমনি।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে জ্যাকসনের এই নিয়োগ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য
একটি বড় অর্জন। জ্যাকসন শুধু প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী বিচারপতিই হচ্ছেন না, একইসঙ্গে প্রথম
পাবলিক ডিফেন্ডার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকের আসনে বসে ইতিহাস
গড়তে চলেছেন।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের রুজভেল্ট রুমে বসে বাইডেন ও জ্যাকসন টেলিভিশন স্ক্রিনে
সেনেটের ভোটাভুটি দেখেন। ফল ঘোষণার পর তারা টেলিভিশনের সামনে দাঁড়িয়ে পরস্পরকে আলিঙ্গন
করেন এবং সেলফি তোলেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জ্যাকসনের নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া উপলক্ষে শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে
উপস্থিত হবেন তারা।