বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এর ফলে কচি সেলামাজ
নামে ওই ব্যক্তিকে কমপক্ষে ৩৬ বছর জেল খাটতে হবে। শুক্রবার ওল্ড বেইলের কেন্দ্রীয়
অপরাধ আদালত আসামির অনুপস্থিতিতে এই রায় দেয়।
গত বছর সেপ্টেম্বরে
দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের কিডব্রুক এলাকার একটি পার্কে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
শিক্ষক ২৮ বছর বয়সী সাবিনা নেসাকে হত্যা করেন সেলামাজ।
এর কয়েকদিন পর পূর্ব সাসেক্সের ইস্টবোর্নের বাসিন্দা ৩৬
বছর বয়সী সেলামাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে হত্যার দায়ে তাকে
অভিযুক্ত করে আদালত।
গত
বছর ১৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় বিকালে এক ব্যক্তি কিডব্রুকের একটি পার্কের ভেতর
দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সাবিনার লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।
পরে
যুক্তরাজ্যের হাতেগোনা কয়েকটি পত্রিকায়, ভেতরের পাতায় ছোট করে এ খবর প্রকাশিত হয়।
খবরের সঙ্গে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া একটি ছবি, যাতে সাবিনাকে দেখা যাচ্ছে কালো
গ্রাজুয়েশন গাউন পরে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিতে।
২৮
বছর বয়সী এই ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পড়াশোনা করেছেন গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পৈতৃক
বাড়ি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায়।
দক্ষিণ
লন্ডনের ক্যাটফোর্ডে রুশি গ্রিন প্রাইমারি স্কুলে তিনি প্রথম শ্রেণিতে পড়াতেন। ওই
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাবিনাকে অ্যাখ্যা দিয়েছেন ‘মেধাবী,
দয়ালু ও নিবেদিতপ্রাণ’ শিক্ষক হিসেবে।
পুলিশের
প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়, সাবিনাকে সম্ভবত স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে হত্যা করা হয়।
এরপর হত্যাকারী তার লাশটি ফেলে রেখেছিল পার্কে ঝোপঝাড়-ঘাসের আড়ালে, পরদিন বিকালে
পার্কের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক ব্যক্তির নজরে আসার আগ পর্যন্ত সেটি সেখানেই
পড়ে ছিল।
হত্যাকাণ্ডের
দিন সাবিনা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পার্কের ভেতর দিয়ে পায়ে হেঁটে খুব কাছেই এক
বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। পুলিশ বলছে, বাড়ি থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের
দূরত্বে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
লন্ডনের
মেট্রোপলিটন পুলিশ পরে একটি সিসিটিভি ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায় সাবিনাকে
জ্ঞান হারানোর আগ পর্যন্ত মাথায় আঘাত করছেন সেলামাজ। পরে তিনি সাবিনাকে সেখান
থেকে সরিয়ে ফেলেন।
বিবিসির
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবিনাকে পরবর্তীতে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে তার কিছু পোশাক সরিয়ে
রেখে মৃতদেহ আড়াল করার চেষ্টা করেন আলবেনীয় বংশোদ্ভূত সেলামাজ।
পূর্ব
সাসেক্সের ইস্টবোর্নের বাসিন্দা সেলামাজ
একটি গ্যারেজে কাজ করতেন।
আদালতের
শুনানিতে বলা হয়, স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডনে আসেন।
যে কোনো একজন নারীর ওপর হামলা চালানোই ছিল তার উদ্দেশ্য।
সাবিনা
নেসার বাবা-মা এক বিবৃতিতে সেলামাজকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এমন নিষ্ঠুরভাবে তাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার কোনো অধিকার তোমার
নেই।
“পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে যখন
জানাল যে, তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে, আমাদের পৃথিবীটা টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
নিজের কাজে হেঁটে যাওয়া এমন নিষ্পাপ একটি মেয়ের সঙ্গে তুমি কীভাবে এটা করলে?
“তুমি কোনো মানুষ নও, তুমি
একটা জানোয়ার।”
বড় বোন জেবিনা ইসলাম
জানান, চার বোনের মধ্যে সাবিনা ছিলেন দ্বিতীয়।
নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “এই ঘটনা আমি আজীবন বয়ে বেড়াব। আমার বোনের ওপর সে কেন এমন ভয়ানক
হামলা চালাল?
ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সাবিনার হত্যাকাণ্ড ঘিরে যুক্তরাজ্যজুড়ে ক্ষোভ, বিতর্ক