পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন লিখেছে, আপাতদৃষ্টিতে বিরোধীদল ও সরকারি দলের সদস্যদের বৈঠকের কারণে অধিবেশন শুরু হতে দেরি হয়েছে।
অধিবেশনের এই সেশনে আমজাদ খান নিয়াজি সভাপতিত্ব করছেন বলে জানিয়েছে ডন।
এর আগে স্পিকার আসাদ কাইসারের সভাপতিত্বে, কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় অধিবেশনে শুরু হয়েছিল, যার আলোচ্যসূচির ৪ নম্বরে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবটি।
পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে অধিবেশন শুরু করা হয়।
অধিবেশনে বিরোধীদলের সব সদস্য উপস্থিত থাকলেও মুলতবি হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানসহ সরকারি দলের সামনের সারির অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন না।
অধিবেশন মুলতবি হওয়ার পর স্পিকার কাইসারের চেম্বারে সরকারি দলের সামনের সারির সদস্য ও বিরোধী বেঞ্চের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে বিরোধীদল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী অনাস্থা প্রস্তাবের ভোট প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে।
এ বৈঠকে সরকারি দলের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ্ মাহমুদ কোরেইশি ও পিটিআই নেতা আমির ডোগার এবং বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি, রানা সানাউল্লাহ, আয়াজ সাদিক, নাভিদ কামার ও মাওলানা আসাদ মাহমুদ অংশ নেন।
এই বৈঠকের পর বিরোধীদলীয় নেতার চেম্বারে বিরোধীদলগুলোর পার্লামেন্ট সদস্যদের একটি বৈঠক ডাকা হয়।
সকালে অধিবেশন শুরুর পর ফ্লোর নিয়ে পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরিফ বৃহস্পতিবারকে পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন হিসেবে বর্ণনা করেন।
পার্লামেন্টে ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব গত ৩ এপ্রিল ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি বাতিল করার পর বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তা অবৈধ ঘোষিত হয়।
সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ ‘উজ্জ্বল’ হয়েছে বলে দাবি করেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দলীয় নেতা শাহবাজ।
স্পিকার কাইসারকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যধারা শুরু করার আহ্বান জানান তিনি। এ দিন পার্লামেন্টে ইতিহাস রচিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি বলেন, “আজ পার্লামেন্ট সংবিধানিক পদ্ধতিতে একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে পরাজিত করতে যাচ্ছে।”
কিন্তু তার আহ্বান সত্ত্বেও স্পিকার প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের প্রক্রিয়া শুরু না করে কথিত ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’ নিয়ে আলোচনা হওয়ার দরকার মন্তব্য করে ইমরান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কোরেইশিকে ফ্লোর দেন।
আর কোরেইশি তার দল ক্ষমতাসীন তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেওয়া কৌশল অনুযায়ী দীর্ঘ বক্তব্য দিয়ে অধিবেশন দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা শুরু করেন।
তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে বিরোধীদলীয় সদস্যরা হৈ চৈ শুরু করলে হট্টগোলের মধ্যে স্পিকার কাইসার অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন।
বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জিও নিউজ জানিয়েছে, সরকার অধিবেশন প্রলম্বিত করার ও দীর্ঘ বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে ভোট প্রক্রিয়া দেরির পরিকল্পনা নিয়েছে।
পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ অ্যাঙ্করপার্সন হামিদ মীর সামাজিক মাধ্যমে করা এক পোস্টে বলেছেন, শাহ্ মাহমুদকে কম করে হলেও অন্তত তিন ঘণ্টা বক্তব্য দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান।
মুলতবির পর অধিবেশন শুরু হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোরেইশিই আবার ফ্লোর নিয়ে ফের দীর্ঘ বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন বলে জানিয়েছে ডন।
আরও খবর:
ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা: অধিবেশন মুলতুবি
অনাস্থা মোকাবেলার প্রস্তুতি ইমরানের দলের
ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে যে কৌশল নেবে বিরোধীদলগুলো
পাকিস্তানে ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির বিরুদ্ধেও অনাস্থা প্রস্তাব
রায় মানছেন ইমরান খান, মানবেন না ‘আমদানি করা’ সরকার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী শাহবাজ শরিফ, কে তিনি
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট পুনরুজ্জীবিত করার রায়, আস্থা ভোটে খেলতেই হবে ইমরানকে