একের পর এক ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক এসব ঘটনার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে শনিবার একটি বিবৃতি দিয়েছে সংগঠনটি।
বিবৃতিতে বলা হয়,এক মাসের মধ্যে পরপর তিনটি ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে ঢাকার লতা সমাদ্দার, এরপর মুন্সীগঞ্জের হৃদয় মণ্ডল এবং তারপর নওগাঁর আমোদিনী পাল।
এরা সকলেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত শিক্ষক এবং ‘সংখালঘু’ সম্প্রদায়ের মানুষ উল্লেখ করে ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
“ঘটনাগুলো আপাদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন মনে হলেও কতটা আলাদা বা বিচ্ছিন্ন তা ক্ষতিয়ে দেখার নিশ্চয়ই অবকাশ আছে, কারণ এতে সুপরিকল্পিতভাবে সামাজিক অস্থিরতা তৈরির উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “ঢাকার কলেজ শিক্ষক লতা সমাদ্দারের কপালে টিপ পরা নিয়ে যে হেনস্তার শিকার হয়েছেন তার অভিযুক্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রের একজন পুলিশ সদস্য।”
কপালে টিপ পরায় ‘বাজে গালি’ দেওয়ার পর গায়ে মোটরসাইকেলের চাকা তুলে দিয়ে রাজধানীর এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এক শিক্ষকের করা অভিযোগের ‘কিছু সত্যতা’ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
টিপ পরায় হেনস্তা: অভিযোগের ‘সত্যতা পেয়েছে’ তদন্ত কমিটি
টিপ পরায় শিক্ষককে গালি, হেনস্তার অভিযোগ
শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের ঘটনা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা “মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে তার ছাত্রদের কাছে বিজ্ঞান ও যুক্তি বিষয়ক মন্তব্য করার অপরাধে জেলসহ সামাজিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।”
গত ২০ মার্চ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান পড়ানোর সময় প্রসঙ্গক্রমে শিক্ষার্থীর প্রশ্নে ধর্ম নিয়ে কথা বলেন।
সেই ক্লাসের কথা কয়েকজন শিক্ষার্থী রেকর্ড করে এবং পরে ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ কথা বলার অভিযোগ তুলে এলাকায় তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে কিছু লোক। ওই অবস্থায় এ শিক্ষককে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়।
শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল কারাগারে: ‘রাষ্ট্র কি যুক্তি দিয়ে চলছে?’
শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলার ধারা ও জামিন না হওয়ায় প্রশ্ন
ঘটনার দুদিন পর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (ইলেক্ট্রশিয়ান) মো. আসাদ বাদী হয়ে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। ২৩ মার্চ তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
এর পরই নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘হিজাব পরায়’ ছাত্রীদের পেটানোর অভিযোগ তোলার বিষয়টি বিবৃতিতে তুলে ধরে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।
বিবৃতিতে বলা হয়, “সবশেষে নওগাঁর স্কুল শিক্ষক আমোদিনী পাল দাবি করেছেন, তাকে মিথ্যা অভিযোগে এবং পরিকল্পিতভাবে ধর্ম অবমাননায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।”
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল বলছেন, স্কুল ইউনিফর্মের নিয়ম না মানায় তিনি কয়েকজন ছাত্রীকে ‘শাসন’ করেছেন, সেখানে হিজাবের কোনো বিষয় ছিল না।
তার অভিযোগ, স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির ‘বড় সমস্যা আড়াল করতে’ এবং নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন মহল ‘সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক এই ভিত্তিহীন মিথ্যাচার‘ করছে।
‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার’ হচ্ছে, বললেন নওগাঁর শিক্ষক আমোদিনী
গত বুধবারের ঘটনার পর আমোদিনী পালকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। তাকে সাত দিনের মধ্যে এর জবাব দিতে বলেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
পরপর ঘটে যাওয়া এই তিনটি ঘটনার উল্লেখ করে সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা মনে করি ইচ্ছাকৃত বা পরিকল্পিত ধর্ম অবমাননা অবশ্যই নিন্দনীয়।
“কিন্তু সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনার পূর্বাপর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মানুষ পরিকল্পিত পন্থায় ধর্মকে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার বানিয়ে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।”
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের নেতারা বলেছেন, “আমরা রাষ্ট্রযন্ত্রকে এই দুষ্ট প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রখর সচেতনতা অবলম্বনের দাবি জানাই।
“এর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধপন্থি সকল প্রগতিশীল মহলকে শক্ত সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ার আহ্বান জানাই। অন্যথায় মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ উত্তরোত্তর তার প্রতিপক্ষদের থাবায় কলঙ্কিত হবে।”