‘চট্টল গৌরব’ শিরোনামে নগরীর সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজের দেয়ালে
বসানো লেজার মেটালের এসব ম্যুরালের একটিতে নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরীর ছবির স্থানে
বসেছে সাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরীর ছবি।
অপর ম্যুরালে ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের নেতা যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত
এর জীবনীর তথ্য দেওয়া থাকলেও ছবিটি তার নয়।
মুর্যাল স্থাপনের চার মাসের মাথায় শনিবার ভুলের বিষয়টি সামনে এলে তা সংশোধনে
ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন এ কাজের অন্যতম উদ্যোক্তা চট্টগ্রাম নগরীর ২১
নম্বর জামাল খান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন।
মেটাল ম্যুরালের সঙ্গে ৩১ গুণির সংক্ষিপ্ত জীবনীও শোভা পাচ্ছে দেয়ালে।
গত ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী; তখন
যা প্রশংসিত হয়েছিল।
স্মরণীয় ব্যক্তিত্বদের বিষয়ে এমন ভুল নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন অনেকেই।
ম্যুরালে স্মরণীয় ব্যক্তিত্বদের ছবি ও তথ্যে ভুল থাকাকে সম্মান জানাতে গিয়ে উল্টো
‘অসম্মানের’ বলে মনে করছেন তারা।
সতর্কতার অভাবে এমন একটি ভালো উদ্যোগ সমালোচনার মুখে পড়েছে মন্তব্য করে
কবি মনিরুল মনির বলেন, “ভুল তথ্যের ম্যুরাল দেখে উদ্যোক্তাদেরও জানিয়েছিলাম ঠিক করার
জন্য। এসব ম্যুরাল করার পূর্বে সঠিক তথ্য জানা মানুষদের দেখিয়ে নেওয়া দরকার ছিল।“
এ ‘ভুল’কে অনিচ্ছাকৃত দাবি করে শৈবাল দাশ বলেন, নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরীর
ম্যুরাল করতে চেয়েছি। সেখানে ছবিটি সাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরীর চলে এসেছে। যতীন্দ্রমোহন
সেনগুপ্তর ম্যুরালেও ভুল আছে।
“দুটি ম্যুরালই নতুন করে করার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের
মধ্যে তা প্রতিস্থাপন করা হবে।“
তথ্য যোগাড় ও তা সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে ভুল হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন,
এতে ইন্টারনেটের সহায়তা নেওয়ায় তথ্যে কিছুটা ভুল হয়ে থাকতে পারে।
মহসিন কলেজের পেছনের (মহসিন স্কুল সংলগ্ন) গেইটের দেয়ালে ৩১ গুণীর জীবনী
সম্বলিত মেটালের এসব ম্যুরাল বানিয়ে দেওয়ার কাজ করেন ভাস্কর প্রণব সরকার।
জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাকে যেভাবে ম্যুরালের
ছবি দেওয়া হয়েছে সেভাবেই তা তৈরি করেছি।“
দেয়ালে দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিন, কবি আবদুল হাকিম, নবীন চন্দ্র সেন,
শরৎচন্দ্র দাশ, কাজেম আলী মাস্টার, শেখ রফিউদ্দিন সিদ্দিকী, নবীন চন্দ্র দাশ, আবদুল
করিম সাহিত্য বিশারদ, চাকমা রানী কালিন্দি, রজব আলী খান, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী,
কবিয়াল রমেশ শীল, আবদুল হক দোভাষ, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, বেণীমাধব বড়ুয়া, কমরেড মোফাফ্ফর
আহমদ, মাহবুব-উল আলম, মুহাম্মদ এনামুল হক,
অধ্যাপক আবুল ফজল, আবুল কাশেম খান (এ কে খান), লোকনাথ বল, পূর্ণেন্দু দস্তিদার, বিনোদ
বিহারী চৌধুরী, কল্পনা দত্ত, এম এ আজিজ, বুলবুল চৌধুরী, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ, সৈয়দ
ওয়ালীউলল্লাহ, অমলেন্দু বিশ্বাস, মাহবুব উল আলম চৌধুরী ও এম এ হান্নান এর ম্যুরাল বসানো
হয়।
দেখা গেছে, নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরীর জীবনী উল্লেখ করে দেওয়া ম্যুরালের
ছবিটি সাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরীর।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় জন্মগ্রহণকারী উপমহাদেশের প্রতিথযশা নৃত্যশিল্পী
বুলবুল চৌধুরীর ম্যুরাল করার কথা ছিল।
১৯১৯ সালে জন্ম নেওয়া এ শিল্পী ও তার দলের নৃত্যানুষ্ঠান অবিভক্ত ভারত
ও পাশ্চাত্যে সমাদৃত হয়েছে। তার নামে ১৯৫৪ সালের ১৭ মে মৃত্যুর পর তার স্মরণে বুলবুল
ললিতকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
আর সাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী ১৯৪৮ সালে গাজীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ২০২১ সালের
২৮ অগাস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
অপরদিকে, ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগে আন্দোলনের নেতা চট্টগ্রামের ‘মুকুটহীন
রাজা’ খ্যাত যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তকে নিয়ে করা ম্যুরালে দেওয়া তথ্য ঠিক থাকলেও ছবিটি
তার সঙ্গে মিলছে না।
কাউন্সিলর শৈবালের ভাষ্য, “চার সদস্যের একটি জুরি বোর্ড ১০০ জনের মধ্য
থেকে ৩১ জনের তালিকা করে দেওয়ার পর একজন শিল্পীর তত্ত্বাবধানে এসব ম্যুরাল নির্মাণ
করা হয়। জীবনী তৈরি করে জুরি বের্ডের সদস্যদের দেখানোর পর তা চূড়ান্ত করা হয়েছিল।“