মাত্র ছয় দিনেই দাম অর্ধেকে নেমে আসায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পাইকারী ব্যবসায়ীরা। আবাদের খরচ কমাতে উৎপাদন এলাকায়ই বিপণন ও সেচ ব্যবস্থার দাবি চাষিদের।
এ ছাড়া শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি এলাকায় রিসোর্ট ও বিভিন্ন স্থাপনা তৈরিতে লেবু বাগান কাটা পড়ায় উদ্বিগ্ন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইসয়াসমিন সুইটি। লেবু চাষিদের আগ্রহ ধরে রাখতে সার, কীটনাশকসহ অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
আবাদের খরচ কমাতে উৎপাদিত এলাকায়ই বিপণন ও সেচ ব্যবস্থার দাবি লেবু চাষীদের
মৌলভীবাজারে চায়ের পর বেশি উৎপাদিত পণ্য হল লেবু। জেলার সাত উপজেলায় প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে ছোট বড় মিলিয়ে দুই হাজার ৫৫৩টি লেবু বাগান রয়েছে। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গলেই চলতি বছরে লেবু চাষ হয়েছে এক হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে।
চাষ করে লাভ ঘরে তুলতে রোজার মাস চাষিদের আয়-রোজগারের মূল সময়। বছরের অন্য সময়ের যোগান চলে এই সময়ের আয় দিয়ে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াছমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শ্রীমঙ্গলে সিডলেস, কলম্বো, জারা, এলাচ ও আদা এই পাঁচ প্রজাতির লেবু চাষ হয়। তবে এর মধ্যে বেশি চাষ হয় সিডলেস, যা স্থানীয় ভাষায় ‘কাগজি লেবু’ নামে পরিচিত। অনেকে এটিকে ‘শ্রীমঙ্গলী’ লেবুও বলে থাকেন।
মৌলভীবাজারে চায়ের পর বেশি উৎপাদিত পণ্য হল লেবু
লেবুর পাইকারী বিক্রেতা নির্মল আদিত্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আড়তে প্রথম রোজায় পাইকারীতে বিক্রি হওয়া আট টাকা পিসের লেবুর দাম এখন চার টাকা। তিন টাকার লেবু বিক্রি হচ্ছে দেড় টাকায়।”
প্রথমদিকে দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেক পাইকার শ্রীমঙ্গলের বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন বলে জানান এই বিক্রেতা। তিনি বলেন, এখন উৎপাদান আরও বাড়লেও পাইকার নেই আর পচনশীল পণ্য হওয়ায় বিক্রি করতে হচ্ছে আশানুরূপ দামের চেয়ে অনেক কমে।
“খুচরা বাজারে ছোট লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা আর মাঝারি সাইজের লেবু বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা হালিতে। বড়গুলো বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা হালি।”
লেবু আবাদ করে লাভ ঘরে তুলতে রোজার মাস চাষীদের আয় রোজগারের মূল সময়
উপজেলার লেবু চাষিদের দাবি, আবাদের খরচ কমাতে সরকারি ব্যবস্থাপরায় উৎপাদিত এলাকায়ই বিপণন ও সেচ ব্যবস্থা করতে হবে।
মহাজেরাবাদ এলাকার চাষি আব্দুল জলিল বলেন, “এই রোজায়ই আমরা একটু দাম পাই। সেচের কারণে এই সময়ে উৎপাদন কম হয়। তাই দামের আশায় ছোট লেবুই আমরা বিক্রি করি।
“রোজা মাসের পরেই গাছে গাছে লেবুতে ভরে যাবে। তখন দাম একেবারেই থাকে না। শ্রমিকের খরচ উঠানোই কষ্টকর হয়ে পড়ে।”
লেবুর একমাত্র হাট শহরের নতুন বাজার। ভোরবেলা হাটে আসতে চাষিদের আগের দিন বিকেলে লেবু তুলতে হয়। এর পর হাট ধরতে জিপ ও ঠেলাগাড়ীতে করে লেবু নিয়ে রওনা হতে হয় ভোর ৪টার দিকে।
আরতে প্রথম রোজায় পাইকারীতে বিক্রি হওয়া ৮টাকা পিসের লেবুর দাম এখন ৪ টাকা
লেবুচাষি জরিপ মিয়া বলেন, যে জায়গায় বেশি ফলন হয়, সেখানে ‘কালেকশন পয়েন্ট’ করলে তারা উপকৃত হবেন।
রোজার চড়া বাজার ধরতে দুই-তিন মাস আগে থেকে গাছে পানি দিয়ে লেবু ‘পুষ্ট’ করা হয় জানিয়ে নতুন বাজারের ব্যবসায়ী অধীর বলেন, এ সময় তারা ভালো দাম পান। এবারের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “এ বছর লেবুর বাজার চড়া ছিলো রোজার শুরু থেকে দুই-তিন দিন। এখন বাইরের পাইকার কম আসছেন। তাই দাম অনেকটা পড়ে গেছে। এটি দুই মাস পর ৫০ পয়সা পিসে চলে আসবে।”
এদিকে লেবুর দাম কমায় স্বস্তিতে ক্রেতারা।
ভোরবেলা হাটে আসতে চাষীদের লেবু পাড়তে হয় আগের দিন বিকেলে
মুসলিম চৌধুরী নামের এক ক্রেতা জানান, প্রথম রোজায় তিনি ৪০ টাকা হালি লেবু কিনেছেন কিন্তু সেটি রসালো ছিল না।
‘এখন দাম কমায় আমাদের জন্য ভালো হয়েছে’- বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কৃষকদের লাভবান করতে ‘লেবু প্রসেসিং’ করে বিকল্প পণ্য উৎপাদনে আগ্রহীদের জেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। এ কাজে বিশেষ করে তিনি প্রবাসীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
কৃষকদের লাভবান করতে ‘লেবু প্রসেসিং’ করে বিকল্প পণ্য উৎপাদনের পথ দেখাচ্ছে প্রশাসন
তবে জেলার স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা মনে করেন, পাহাড়ি এলাকায় জমির শ্রেণি পরিবর্তনে এখনই প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে।