ক্যাটাগরি

সুস্থ থাকতে রমজানে সঠিক খাদ্যাভ্যাস

দিনের লম্বা একটা সময় যেহেতু না খেয়ে
থাকতে হয় তাই সেহরি ও ইফতারে যথা সম্ভব পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও পানি পান করা প্রয়োজন।

অনেকেই সেহরি না করে রোজা রাখেন, যা ডেকে
আনতে পারে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

সাভারের ‘বিজিএমইএ’ হাসপাতালের ‘ফ্যামিলি
মেডিসিন’ বিশেষজ্ঞ ডা. লিন্ডা এস সমদ্দার বলেন, “রমজান মাসে সুস্থ থাকতে সঠিক উপায়ে
সেহরি ও ইফতার করা জরুরি। যারা সেহরি না করে রোজা রাখেন তাদের জন্য এটা স্বাস্থ্যঝুঁকি
বাড়াতে পারে।”

এই সময়ে অনেকে পেট ফাঁপা, গ্যাসের সমস্যা
অথবা হজম জনিত সমস্যায় ভোগেন। আর এর সবগুলোর পেছনেই রয়েছে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।

ডা. লিন্ডা বলেন, “সেহরিতে সুষম খাবার
খাওয়া, ধীরে ধীরে পানি পান করা উচিত। যথা সম্ভব সবজি, প্রোটিন-জাতীয় খাবার- মাছ, মাংস,
ডিম, ডাল ও দুধ খাওয়া উপকারী।”

সারাদিনে যেহেতু পানি পান করা যাবে না
তাই দেহের আর্দ্রতা নিশ্চিত করার বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

তিনি আরও বলেন, “পানি পান করতে হবে ধীরে।
একবারে ও বেশি পরিমাণে পানি পান করা কিডনি বা বৃক্কের ওপরে চাপ বাড়াতে পারে। তাই সতর্ক
থাকা উচিত।”

ইফতারে ভারী বা তেল-মসলা যুক্ত খাবার
খাওয়ার ফলে শরীরে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সারা দিন রোজার পরে ইফতারেও খাওয়া পুষ্টিকর
খাবার খাওয়া উচিত।

“ইফাতারে খাবার খেতে হবে ধীরে, কিছুটা
সময় নিয়ে ও ভালো মতো চিবিয়ে,” পরামর্শ দেন, বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য
ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারাহ মাসুদা।

তিনি বলেন, “গরমে শরীরের ঘামে। তাই ইফতারে
দেহে পানির চাহিদা পূরণ করতে তরল-জাতীয় খাবার ও পানি পান করতে হবে। এই সময় পারতপক্ষে
বাইরের জুস বা কৃত্রিম পানীয় পান না করাই ভালো।”

দুপুরের পর থেকে মানুষের হজম ক্রিয়া দুর্বল
হতে থাকে। তাই গুরুপাক-জাতীয় ও বেশি ভারী খাবার ইফতারে খাওয়া ঠিক না।

তাছাড়া এই সময় বিপাক হারও হ্রাস পায়।
ইফতারে সহজপাচ্য ও কম মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন, ফারাহ মাসুদা।

পানি বা তাজা ফলের শরবতের মাধ্যমে ইফতার
শুরু করে খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ।

খেজুর দেহের শর্করার পরিমাণ বাড়ায় এবং
এর ‘এঞ্জাইম’ হজমে সহায়তা করে। এছাড়াও অন্যান্য তাজা ফলমূল খাওয়া দেহে আঁশ, খনিজ ও
ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে।

স্বাস্থ্যকর ইফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
“ইফতারে প্রথমে পানি পান করে যে কোনো মিষ্টি ফল ও শরবত গ্রহণ করা ভালো। তারপর পাঁচ
থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে মূল খাবার খাওয়া শুরু করুন। কারণ মস্তিষ্কে খাবারের সংবেদন
পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগে। তাই ইফতার শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাড়াহুড়া করে খাবার খেলে
বেশি খাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় যা মোটেও ঠিক না। এতে ওজন বেড়ে যাওয়া ও শরীরে মেদ জমার
সম্ভাবনা থাকে।”

ইফতারে পেট ঠাণ্ডা থাকে এমন খাবার, যেমন-
দুধচিড়া, দই-চিড়া অথবা মুড়ি খাওয়া ভালো। দই পেট ভালো রাখে। যারা বিরিয়ানি বা তেহেরি
পছন্দ করেন তাদের একটু সচেতন হওয়া উচিত।

কারণ ইফতারে এসব খাবার হজমে সমস্যা করে
গ্যাস্ট্রিকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই পেট গরম করে এমন খাবার খাওয়া উচিত নয়।

পেটের সমস্যা এড়াতে পেট ঠাণ্ডা রাখে এমন
খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন ডা. লিন্ডা সমদ্দার।

তার মতে, “ডাবের পানি, তোকমা, ইসবগুল
ও তাজা ফলের রস বেশ উপকারী।”

ইফতারের পর অতিরিক্ত চা বা কফি এবং কোমল
পানীয় পান এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ অতিরিক্ত চা ও কফি শরীরের পানি শূন্যতার সৃষ্টি করে।

রোজার দিনে সুস্থ থাকতে আর্দ্র থাকার
কোনো বিকল্প নেই। তাই ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত যতটা সময় পাওয়া যায় অল্প অল্প
করে পানি পান ও ফল খাওয়ার অভ্যাস করা ভালো, এতে শরীর সুস্থ থাকে।

ডায়াবেটিস, রক্তচাপ ও অন্যান্য শারীরিক
সমস্যা রয়েছে এবং ওষুধ খাচ্ছেন এমন রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে ওষুধ খাওয়ার
সময় নির্ধারণ করার পরামর্শ দেন ডা. লিন্ডা।

আরও পড়ুন

ইফতারের পর মাথাব্যথার কারণ ও প্রতিকার
 

ইফতারে যা খাওয়া উচিত
 

সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্যকর সেহরি