শনিবার এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক
মানবাধিকার সংস্থাটি উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, ওই ঘটনা বাংলাদেশে মত প্রকাশের
স্বাধীনতার সর্বশেষ দুর্গের উপর সরাসরি আঘাত।
গত ২০ মার্চ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার
পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল দশম
শ্রেণিতে বিজ্ঞান পড়ানোর সময় প্রসঙ্গক্রমে শিক্ষার্থীর প্রশ্নে ধর্ম নিয়ে কথা
বলেন।
সেই ক্লাসের কথা কয়েকজন শিক্ষার্থী
রেকর্ড করে এবং পরে ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ কথা বলার অভিযোগ তুলে কিছু শিক্ষার্থী
ও ব্যক্তি এলাকায় তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। ওই অবস্থায় এ শিক্ষককে মুন্সীগঞ্জ সদর
থানা পুলিশ নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়।
ঘটনার দুদিন পর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের
অভিযোগে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (ইলেক্ট্রশিয়ান) মো. আসাদ বাদী হয়ে হৃদয় চন্দ্রের
বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ২৩ মার্চ তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে
আদালতে সোপর্দ করলে জেল হাজতে পাঠানো হয়। পরে জামিন আবেদন করা হলেও মুন্সীগঞ্জ
বিচারিক হাকিম এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তার জামিন হয়নি।
শিক্ষার্থীদের অডিও রেকর্ডিংয়ের বরাতে
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, স্কুলের আলোচনায় প্রতিঘাতের ভয় ছাড়াই যেকোনো
বিষয় নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে শিক্ষরা উন্মুক্ত হওয়া উচিৎ। ওই শিক্ষক যুক্তি
দিয়েছিলেন, ‘ধর্ম হলো বিশ্বাসের ব্যাপার’, কিন্তু ‘বিজ্ঞান
নির্ভর করে প্রমাণের উপর’।
“রেকর্ডিংয়ে
শিক্ষক বলেছেন, ‘ধর্মে কোনো প্রমাণ নেই। ধর্ম সবশেষে বলে, ঈশ্বর সব দেখভাল করবেন। ধর্ম
মুখস্ত শব্দ শেখায়, যেখানে বিজ্ঞান প্রমাণ দেখায়’।”
বিবৃতিতে বলা হয়, অডিও রেকর্ডটি ধারণ
করার দুদিন পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সংবাদমাধ্যমগুলোকে বলেন, শিক্ষার্থী ও
স্থানীয় বাসিন্দারা স্কুলের বাইরে ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। আর এর
পরদিন স্কুলের একজন অফিস সহকারী তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে হৃদয়কে গ্রেপ্তার
করে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এ ছাড়া দুইবার তার জামিন বাতিল করা হয়েছে। ১০ এপ্রিল
জেলা ও সেশন জজ আদালতে তার জামিনের ব্যাপারে পরবর্তী শুনানি হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনলের দক্ষিণ
এশিয়ার ডেপুটি রিজিওনাল ডিরেক্টর স্মৃতি সিং বলেছেন, এটি খুবই ভয়ানক যে, একজন
শিক্ষক ক্লাসে পড়াতে গিয়ে শুধু তার মতামত প্রকাশের জন্য নিজেকে কারাগারে দেখতে
পান। কোনো ধরনের আঘাতের ভয় ছাড়াই শিক্ষকদের সব ধরনের ধারণা ও মতামত নিয়ে আলোচনা
করা উচিত।
কেবল মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার
প্রয়োগ করার জন্য অবিলম্বে ও নিঃশর্তে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে মুক্তি দিতে হবে,
বলেন তিনি।
বাংলাদেশে ‘মত প্রকাশের
স্বাধীনতা দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে’ উল্লেখ করে স্মৃতি সিং বলেন, হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের
গ্রেপ্তার বাংলাদেশের অস্বস্তিকর প্রবণতার প্রতীক। ক্লাসে
কেবল মত বা ধারণা নিয়ে আলোচনা করার জন্য একজন শিক্ষককে আটক করা একটি বিপজ্জনক
নজির।
“এমনকি সমালোচনামূলক চিন্তা করার জন্য চ্যালেঞ্জ করা শিক্ষার্থীদেরও
কাউকে জেলে যেতে হতে পারে।”
এই ঘটনা বাংলাদেশের ‘মানবাধিকার
পরিস্থিতি অবক্ষয়ের লজ্জাজনক প্রত্যক্ষ প্রমাণ’
উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই জরুরি
পদক্ষেপ নিতে হবে, শিক্ষকরা যাতে ভয় ছাড়াই ক্লাসে অবাধে কথা বলতে পারে।
আরও পড়ুন
শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল কারাগারে: ‘রাষ্ট্র কি যুক্তি দিয়ে চলছে?’
হৃদয় চন্দ্র মুক্তি না পেলে ‘আমাকেও গ্রেপ্তার করা হোক’: জাফর ইকবাল
হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা: ‘ভবিষ্যতের অসুস্থ’ দৃষ্টান্ত বললেন নওফেল
শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলার ধারা ও জামিন না হওয়ায় প্রশ্ন