শুক্রবার দুপুরে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের
সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে বসেন। নিয়ম ভেঙে পরীক্ষার হল থেকেই তিনি ফেইসবুক লাইভে চলে যান।
এ ঘটনায় সারাদেশে সমালোচনা শুরু হয়। এর মধ্যে
শনিবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক
লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কালীগঞ্জ উপজেলা কমিটির বিলুপ্ত করা হয়।
সেখানে বলা হয়, “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয়
নির্বাহী সংসদের এক সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশ
ছাত্রলীগ, কালীগঞ্জ উপজেলা শাখা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হল।”
রোববার সকালে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের
সদ্যবিলুপ্ত কমিটির সভাপতি নাজমুল হাসান নাজিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মনির
হোসেন পরীক্ষার হলে ফেইসবুক লাইভে এসে অন্যায় করেছে। আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। তবুও
আমাকে শাস্তি পেতে হয়েছে।
“কালীগঞ্জ উপজেলায় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ
কমিটি ছিল না। শুধু সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ নিয়ে কমিটি ছিল।”
শুক্রবার দুপুরে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের
অধীনে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। ছাত্রলীগ নেতা মনির হোসেন ঝিনাইদহ
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষা দেওয়ার এক পর্যায়ে তিনি নিজের
মোবাইল থেকে ফেইসবুক লাইভে চলে আসেন। নয় মিনিট ৩৮ সেকেন্ড তিনি লাইভে ছিলেন।
তিনি বলেন, “আমাদের পরীক্ষা চলছে। সবাই লেখছে
আমি বসে আছি। আমি তো বাংলায় লিখিনি। সব ইংরেজিতে। আমি লিখেছি, গ্রুপ কী, তা ‘আনার গ্রুপ’।
(স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার)। আমার নেতার নাম দিয়ে দিছি। স্যাররা এ প্লাস না দিলে বোর্ডমোড ভেঙে ফেলবানে।
“পরীক্ষা চলছে। জীবনে আজ রেকর্ডধারী পরীক্ষা
দিলাম। চশমাটা চোকি দিয়েনি। নাই ভাব বাড়ছে না পরীক্ষার হলে। আমরা তো ফার্স্ট ছাত্র।
ফার্স্ট বেঞ্চিতে বসেছি। যাই হোক, পারি আর না পারি। আমার খাতা দেখবেন? এই দেখেন।”
লাইভে মনির আরও বলেন, “আমার খাতায় আমি লিখেছি।
ইংরেজিতে মাস্টার্স করা তো। দেখেন, সব ইংরেজিতে লিখেছি। সালামও লিখেছে। কী লিখিছিস
তুই মনি? ওই একটা খালা পরীক্ষা দিচ্ছে ওই পাশে। ওই যে একটা খালা। ভাইস চেয়ারম্যান দেখছে
লাইভ। কাকা, আমরা সত্যি সত্যি পরীক্ষা দিচ্ছি।”
এরপর ফোনের ক্যামেরা খাতার দিকে ঘুরিয়ে বলেন,
“বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। আমরা ইয়ার্কি মাচ্ছি নে। আমাদের কম্পিউটার সার্টিফিকেট
তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আমরা আছি ঝিনাইদহ পলিটেকনিক কলেজে।
এ সময় অন্য শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে ছাত্রলীগ
নেতা বলেন, “গল্প না করে লেখো বাবা।”
পরীক্ষা হলে দায়িত্বরত এক নারী শিক্ষককেও
মোবাইল ফোনে বিষয়টি ভিডিও করতে দেখা যায়।
ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ
সাজেদ-উর-রহমান বলেন, “ফেইসবুক লাইভ করা মোটেও কাম্য ছিল না। তিনি যা করেছেন তা ঠিক
করেননি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দিলে পরবর্তীতে
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”