ক্যাটাগরি

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন পীড়নের অভিযোগ সহকর্মীর

একাধিকবার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে ওই নারী প্রথমে থানায়
সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে সংসদ সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

রফিকুল সংসদ সচিবালয়ের কমিটি শাখা-৬ এ কর্মরত। অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি
বলেছেন, অধীনস্ত সেই কর্মীকে তিনি ‘শাসন করেছেন’।

অভিযোগকারী নারী সংসদ সচিবালয়ে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত। বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ওই কর্মকর্তা জোর করে অনেকবার জড়িয়ে ধরেছেন, শ্লীলতাহানি
করার চেষ্টা করেছেন। অনেক অনুনয়, অনুরোধেও থামাতে পারিনি।

“চাকরি আর লজ্জায় বসের নির্যাতন দিনের পর দিন সহ্য করে গেছি। শুধু আমি
নই। এখানে যেসব নারী বদলি হয়ে আসেন, তাদের সঙ্গেও এ রকম ব্যবহার করা হয়। কিন্তু লোকলজ্জার
ভয়ে সবাই চুপ থাকে।”

ওই নারী জানান, এ ব্যাপারে ২০ মার্চ শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি
করেন তিনি। পরে তাকে নানাভাবে চাপ দেওয়া হয়। ওই পরিস্থিতিতে অভিযোগ তদন্ত না করার জন্য
পরদিন তিনি থানায় আবেদন করেন।

ওই নারীর স্বামীও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “সাধারণ ডায়েরির সংবাদ পেয়ে রফিক আরও ক্ষিপ্ত হন এবং ডায়েরি প্রত্যাহার
না করলে পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি দেন।

“বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্যও রফিক বিভিন্ন লোক মারফত হুমকি দিতে থাকে।
প্রয়োজনে আমার স্ত্রীর পা ধরে ক্ষমা চাইবে, এমন কথাও বলে।”

পরে ২৮ মার্চ সংসদ সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয় জানিয়ে ওই নারীর
স্বামী বলেন, “নিরাপত্তাহীনতারে কারণে আমরা সংসদ সচিব মহোদয়কে অবহিত করি এবং রফিকের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করি। আসলে আমরা দুজনই মানসিকভাবে ভেঙে
পড়েছি। লোকলজ্জার ভয়ে আর কত দিন এ ধরনের নির্যাতন সহ্য করা যায়?”

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ৯ এপ্রিল রফিকুলকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে
সংসদ সচিবালয়।

সংসদের ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রিভিলেজ শাখার উপসচিব এস এম মঞ্জুর বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস
দেওয়া হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।”

ওই নোটিসের একটি অনুলিপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম দেখেছে। সেখানে বলা
হয়েছে, অফিসে কেউ না থাকার সময় অফিস সহকারীকে বাইরে পাঠিয়ে অভিযোগকারী ওই নারীর সঙ্গে
‘অসৌজন্যমূলক আচরণ, গালিগালাজ ও অপ্রীতিকর আচরণ’ করেন রফিক। কম্পিউটারে ‘আপত্তিকর ছবি’
বের করে বলেন, ‘এগুলো দেখলে মনে প্রশান্তি আসবে’।

ওই নারী ওয়াশরুমে যাওয়ার পথেও রফিকুল বাধা দিতেন। একদিন ফাঁকা অফিসে ওই
নারীর ‘গায়ে হাত’ দেন রফিকুল। চিৎকার করলে মুখ চেপে ধরে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে রফিকুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “আমি আসলে তাকে শাসন করতে চেয়েছিলাম। এ বিষয়টিই বড় করে দেখা হচ্ছে। তবে
আমার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে এটা ঠিক। এছাড়া সচিব স্যারের কাছে বিচার দেওয়া
হয়েছে। তাদের কাছেই এ ব্যাপারে জানতে পারবেন। আমি আর কিছু বলতে চাই না।”

কেন ‘শাসন’ করতে হল জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অফিসে দেরি করে আসা কিংবা
তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার জন্য কয়েকবার ধমক দিয়েছি।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংসদ সচিবালয়ের একাধিক কর্মচারী বলেছেন, রফিকের
বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ‘দীর্ঘ দিনের’। আরও অনেকের সঙ্গেই এ ধরনের ‘অশোভন আচরণ’ করার
অভিযোগ তারা শুনেছেন।

ওমরাহ করার জন্য সৌদি আরবে যেতে রোববার থেকে ছুটি নিয়েছেন রফিকুল। তিনি
রোববার আদৌ দেশত্যাগ করছেন কিনা জানার জন্য যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি।