রাজনীতির পাশাপাশি সোশাল মিডিয়া, সংবাদ মাধ্যমেও আলোচনায় উঠে আসা এই ফারাহ খান প্রধানমন্ত্রী ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। আবার ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) কর্মসূচিতেও দেখা যেত তাকে।
ইমরান বিপাকে পড়ার পর ফারাহর ‘৯০ হাজার ডলারের’ হাতব্যাগসহ ‘দুবাই পালানোর’ ঘটনার পর তার অঢেল সম্পদের খবর আসছে পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যমে।
‘দুর্নীতির মাধ্যমে’ তিনি এসব সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় নেতারা।
ফারহাত শাহজাদি ও ফারাহ গুজ্জার নামেও পরিচিত ফারাহ খান। তার দামি গাড়ি, বাড়ি ও বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদনে।
দামি পোরশেসহ ১৯টি গাড়ি
জিও নিউজ জানিয়েছে, শুল্ক দপ্তরের নথি অনুযায়ী, দুটি দামি পোরশে গাড়িসহ ১৯টি গাড়ির মালিক ফারাহ খান ও তার স্বামী।
নথির বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, দুটি দামি পোরশেসহ ১২টি ফারাহর নামে নিবন্ধন করা। আর তার স্বামী আহসান জামিল গুজ্জারের নামে সাতটি গাড়ি।
পোরশে গাড়ি দুটি ২০১৩ ও ২০১৫ সালে কেনা। শুল্ক অধিদপ্তর উভয় গাড়ির নিবন্ধনের জন্য ১১ লাখ ৮০ হাজার রুপি (১.১৮ মিলিয়ন) ফি আদায় করেছে।
ফারাহ খান তার পোরশে গাড়ি কেনার জন্য ২০১৯ সালে ৩ কোটি ৬০ লাখ রুপি পরিশোধ করেছিলেন।
ডানের ছবিতে ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির সঙ্গে ফারাহ খান।
২৫ কোটি রুপির বাড়ি
পাকিস্তানের ফার্স্ট লেডি বুশরা বিবির সবচেয়ে কাছের বন্ধু ফারাহ। বুশরার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিয়ের সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানও হয় ফারাহর বাসায়।
সূত্রের বরাতে জিও নিউজ লিখেছে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা এলাকায় ফারাহর বাড়ি মূল্য ২২ কোটি রুপি থেকে ২৫ কোটি রুপি।
৯০ হাজার ডলারের ব্যাগ
সম্প্রতি বিমানে বসা ফারাহ খানের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রকাশ পায়। তার পায়ের কাছেই রাখা ছিল তার হাতব্যাগ। ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
অভিযোগ উঠেছে, তার হাতব্যাগটির দামই নাকি ৯০ হাজার ডলার।
পাকিস্তানের বিরোধীদল পিএমএল-এন নেতা এবং প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল ৫ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন।
তিন বছরে সম্পদের পাহাড়
পাকিস্তানের আরেক সংবাদ মাধ্যম দ্য নিউজের বরাতে জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম তিন বছরে ফারাহ খানের সম্পদ দ্রুতগতিতে বেড়েছে।
তার সম্পদের মূল্যমান ২০১৭ সালে ছিল ২৩ কোটি ১০ লাখ রুপি। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭ কোটি ১০ লাখ রুপিতে।
অনুসন্ধানের বরাতে দ্য নিউজ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান উসমান বুজদারকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করার পর থেকেই ফারাহ খানের ভাগ্য খুলে যায়।।
ইমরান খানের সরকারের প্রথম তিন বছরের মধ্যে ফারাহ খান বিভিন্ন শহরে বেশ কিছু সম্পদ কিনেছেন এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির সঙ্গে ফারাহ খান (ডানে)।
দুবাই পাড়ি
পাকিস্তানে রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে ফারাহ খান গত ৩ এপ্রিল দুবাই পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানিয়েছে জিও নিউজ।
সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, দুবাই যেতে তিনি পাকিস্তান পাসপোর্ট এবং আরব আমিরাতের ‘ইকে৬২৩’ ফ্লাইট ব্যবহার করেছেন।
এ বিষয়ে আরব আমিরাতে ফারাহ শাহজাদির ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফারাহর মন্তব্যের অনুরোধ করেছিল জিও নিউজ।
জবাবে তার বন্ধুরা জানিয়েছিল, এসব অভিযোগে ব্যাপারে উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থায় তারা এখন নেই। তারা ফারাহকে বিষয়টি জানাবে।
অভিযোগ অস্বীকার
টুইটারে এক পোস্টে সকল অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ফারাহ খান।
জিও নিউজ জানিয়েছে, তিনি লিখেছেন, “আমি আমার এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ এবং গুজবের নিন্দা জানাই।
“আমি রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়াইনি বা সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ করার মতো অবস্থায়ও ছিলাম না। যারা আমার চরিত্রকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছে অবশ্যই তাদের বোনদের কথা মাথায় রাখতে হবে।”
ফারাহ জানান, তার স্বামী তাদের ব্যবসার তথ্য স্পষ্ট করেছেন এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত লোকেরাও অভিযোগগুলোকে অস্বীকার করেছে।
এসব ‘অভিযোগ’ ছড়ানোর বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেছেন, “আমার পরিবার ক্রমাগত দুর্দশা ও কষ্টের মধ্যে রয়েছে। ঈশ্বরের দোহাই! অনুগ্রহ করে গুজব ছড়ানো বন্ধ করুন এবং আমাকে ও আমার পরিবারকে এগুলো শোনানো বন্ধ করুন।”